ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

শীত গেলেই অভাব ফিরে আসে তাঁতিদের ঘরে

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৫০

শীত গেলেই অভাব ফিরে আসে তাঁতিদের ঘরে
শীত গেলেই অভাব ফিরে আসে তাঁতিদের ঘরে

শীতের দিন কম্বল বিক্রি হামার (আমাদের) সংসার ভালোই চলে। কিন্তু শীত যখন চলে যায় তখন কিভাবে চলিমো (চলবো) চলার মত বুদ্ধি আর থাকে না। তখন কাহ (কেউ) ঢাকাই গিয়া (গিয়ে) রিকশা চালাই। কাহ (কেউ) দুরত (দূরে) গিয়ে ভাটায় কাম (কাজ) করে। এভাবে সংসার চালানো ধায়ফাই (কঠিন) হয়ে পরে। তখন দেনা মাহাজান (ঋণ) বেশি হয়ে যায়। পরে আবার শীত আসে। তখন করি কি, সুতা নিয়ে আসে আবার কম্বল তৈরি করে বিক্রির টাকা মহাজনের ঋণ পরিশোধ করি। তখন ঘুরি ফিরে শীতও গেলো, আবার অভাবও ফেরত (ফিরে) আসিলো।

এভাবে মনের অভিব্যক্ত প্রকাশ করছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কেশড়বাড়ি তাঁত পল্লীর কারিগর সচিন।

এক সময় তাঁত পল্লীর ৫শ’ তাঁতের খট খট শব্দে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কেশুরবাড়ি এলাকা মুখরিত হলেও এখন পুঁজির অভাবে তা প্রায় বন্ধের পথে। পৈত্রিক পেশা ছাড়তে না পাড়ায় ধার দেনা করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে তাঁতিরা। অনেকে স্থানীয় মহাজনদের কাছে চড়া সুদের টাকা নিয়ে ব্যবসায় খাটিয়ে লোকসান হওয়ায় মহাজনের ভয়ে হয়েছেন এলাকা ছাড়া। কেউ আবার অন্য পেশায় জড়িয়ে বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে ধার দেনা কমাচ্ছেন।

ছবি ১: শীত গেলেই অভাব ফিরে আসে তাঁতিদের ঘরে

গত বছর এ সময়ে কম্বল কিনতে পাইকাররা তাঁতি পল্লীতে ভিড় করলেও এ বছর পাইকারদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। তারপরেও স্বল্প লাভে কিছু বিক্রি করলেও পুঁজির অভাবে কম্বল তৈরি করে মজুদ করতে পারছেন না বলে জানান তারা।

সরেজমিনে জানা যায়, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখানকার ৫শ’ পরিবারের প্রায় ১২শ’ মানুষ বংশানুক্রমে তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা আগে শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করলেও বর্তমানে শুধু কম্বল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই ২/৩ করে তাঁত রয়েছে। এর কোনটা চাকাওয়ালা, আবার কোনটা একেবারেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি। কম্বল তৈরি করায় কারো তাঁত সচল আর করোটা অচল হয়ে পড়েছে। সকাল থেকেই বাড়ির নারী-পুরুষসহ সবাই কম্বল তৈরির কাজে ব্যস্ত হলেও অনেকে পরিবার জীবিকার তাগিদে পেশা পরির্বতন করেছেন।

রবিন নামে এক তাঁতি বলেন, গত বছর ৪০ কেজি সুতার দাম ছিল ২২শ থেকে ৩২শ টাকা। এবার সেই সুতার দাম ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। ৪০ কেজি সুতায় দিয়ে ২০-২২টি কম্বল তৈরি হয়। কম্বল বিক্রি করে কোনোভাবে আসল টাকা পাওয়া যায়। প্রতি বছর লোকসান হচ্ছে। লোকসানে এলাকার শিবু, টিপু, চন্দনসহ অনেক তাঁতি বাড়িছাড়া হয়েছেন। আগে সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও আমাদের কাছে কম্বল কিনে নিত। এখন বাজারে কম দামে শীতের কম্বল আসার কারণে আমাদের কম্বল নেয়া হয় না।

ছবি ২: শীত গেলেই অভাব ফিরে আসে তাঁতিদের ঘরে

প্রবীণ তাঁত কারিগর ধনেশ চন্দ্র বর্মণ দুঃখ করে বলেন, শীত এলে আমরা এই কম্বল বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাই। কিন্তু গরমের সময় কম্বল তৈরি করার কাজ থাকে না। তখন শহরে গিয়ে রিকশা চালাতে বা ইটভাটায় কাজ করতে হয়। সরকার যদি কোনো সহযোগিতা করতো তাহলে সারাবছর আমরা তাঁতের কাজ করতে পারতাম। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হলে এই পুরোনো দিনের শিল্পকে বাঁচানো যাবে বলে অনেকে অভিমত দিয়েছেন।

মালী রানী নামে এক নারী বলেন, অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু সঠিক মজুরি পাচ্ছি না। অন্য কাজ করতে পারি না। সেজন্য এখন কম্বল তৈরি করি।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ও তাঁতিদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারিভাবে সুযোগ সুবিধা দেয়াসহ তাদের কম্বল বাজারজাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত