ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

শহিদুলের ক্যাপসিক্যাম যাচ্ছে দেশের ১৬ জেলায়

  ইমরান হোসেন মনিম, রাজবাড়ী

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৪৮

শহিদুলের ক্যাপসিক্যাম যাচ্ছে দেশের ১৬ জেলায়
রাজবাড়ীর শহিদুলের ক্যাপসিক্যাম চাষের সাফল্য

রাজবাড়ীর মো. শহিদুল ইসলাম একজন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। পড়াশোনাও করেছেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে। ব্যবসা পরিচালনার প্রয়োজনে সবজি হিসেবে প্রতিদিনই প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি মরিচ বা ক্যাপসিক্যামের প্রয়োজন হয়। প্রচুর দাম ও হাতের নাগালে না পাওয়ার কারণে বর্তমানে শহিদুল ইসলাম নিজেই এর আবাদ করছেন।

২০১৯ সালে প্রথমে তিনি ১ বিঘা জমিতে প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ক্যাপসিক্যামের আবাদ করেন। প্রথম বছরই নিজের রেস্টুরেন্টের চাহিদা মিটিয়ে তিনি প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্যাপসিক্যাম বিক্রি করেন। বর্তমানে সারে ৪ বিঘা জমিতে এর আবাদ করে রাজবাড়ীতে নতুন ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ক্যাপসিক্যাম আবাদি ক্ষেত দেখতে গিয়েছেন।

রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলা, পাংশা ও বালিয়াকান্দিতে ক্যাপসিক্যামের আবাদ শুরু হয়েছে। তবে জেলায় প্রথম আবাদ শুরু করেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের বেনি নগর গ্রামের মো. শহিুদুল ইসলাম। তিনি প্রথমে ১ বিঘা জমিতে এর আবাদ শুরু করেন এবং ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় তার প্রচুর পরিমাণে লাভ হয়।

ছবি: শহিদুলের ক্যাপসিক্যাম গাছ

গত বছর তিনি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে এর আবাদ বাড়িয়েছেন। একবার চাড়া রোপণ করলে ৪ বার ফুল হয় এবং ৮ বার ফলন উত্তোলন করা যায় এবং প্রতিটি গাছ থেকে ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়ান, ইটালিয়ান ও ইন্ডিয়ান এ চার জাতের এবং লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের এ ৩ ধরনের ক্যাপসিক্যাম আবাদ হয়।

মৌসুম অনুযায়ী প্রতি কেজি ক্যাপসিক্যাম পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় ১০০ টাকা থেকে ৪ শত টাকা পর্যন্ত। তবে শীত মৌসুম শেষে এর দাম বেড়ে যায়। প্রতি ১৫ দিন পর পর ফলন উত্তোলন করা হয়। ঢাকাসহ দেশের ১৬টি জেলার পাইকাররা এসে শহিদুলের উৎপাদিত ক্যাপসিক্যাম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ছবি: শহিদুলের ক্যাপসিক্যাম যাচ্ছে দেশের ১৬ জেলায়

শহিদুলের দেখাদেখি ও ভালো লাভবান হওয়ায় অনেকেই এখন ক্যাপসিক্যাম আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। কেউ কেউ এখন বেকার জীবন ঘুচাতে শহিদুলের ক্যাপসিক্যামের ক্ষেত দেখতে আসছেন প্রতিদিন।

রাজবাড়ী সদরের কৃষি কর্মকর্তা মো. বাহাউদ্দিন শেখ বলেন, ক্যাপসিক্যাম একটি লাভজনক সবজি। যারা ইয়ং উদ্যোক্তা হিসেবে কৃষিকে বেছে নিতে চান তাদের জন্যে ক্যাপসিক্যাম চাষ একটি আদর্শ। যুবক শহিদুল নতুন উদ্যোক্তা হিসেব ক্যাপসিক্যাম আবাদ করেে লাভবান হয়েছেন। যারা যুবক বেকার রয়েছেন তারা এর আবাদ করে ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করতে পারবেন। তাদের সহযোগিতায় আগামীতে এর আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা করনে তিনি।

ছবি: শহিদুলের ক্যাপসিক্যাম আবাদি জমি

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ক্যাপসিক্যাম একটি মূল্যবান কৃষি পণ্য। এর উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। বিভিন্ন চাইনিজ ও ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে এর ব্যবহার বেশি হয় বিধায় ক্যাপসিক্যামের আবাদের আগে মার্কেট প্লেস বা বিক্রির স্থান তৈরি করে নিত হবে। রাজবাড়ীর শহিদুল তিনি যে ক্যাপসিক্যামের আবাদ করেছেন তার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তার আবাদ ও দক্ষ ম্যানেজমেন্টর কারণে তিনি সফলতা অর্জন করেছেন। এটা ধরে রাখতে পারলে রাজবাড়ীতে আরো নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। উৎপাদন ভালো হওয়ার জন্যে কৃষি অধিদপ্তর থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হয়।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, এই পণ্যটি দেশের বাইরের একটি সবজি হিসেবে পরিচিত। রাজবাড়ীতে একজন নতুন উদ্যোক্তা এর আবাদ করছেন এবং উৎপাদিত এই পণ্যটি দেশের ১৬টি জেলাতে যাচ্ছে। ক্যাপসিক্যামের আবাদ পরবর্তী প্রজন্মকে কৃষির ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করবে। প্রচলিত কৃষির সাথে এই অপ্রচলিত পণ্যগুলো কৃষি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি আনবে। এই সবজির উৎপাদনের কারণে আশপাশের জেলার কাছে রাজবাড়ীর পরিচিতিটাকে তুলে ধরবে বলে আশা করেন তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত