ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

মিতু হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর, নিখোঁজ এখনো দুই আসামি

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২১, ১০:১৫  
আপডেট :
 ০৫ জুন ২০২১, ১০:২২

মিতু হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর, নিখোঁজ এখনো দুই আসামি
মাহমুদা খানম মিতু। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় পেরিয়ে গেল ৫টি বছর। ৫ বছরে একের পর এক নাটকীয় মোড় নেয় ঘটনাটি। ২০১৬ সালের আজকের এই দিনে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের কোপ আর গুলিতে খুন হন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতু। ঘটনার পরপর দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কিন্তু পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি এই মামলার তদন্ত। পুলিশের একজন এসপির স্ত্রীকে কে, কারা এবং কেন নৃশংসভাবে হত্যা করলো এসবের কোন কূল কিনারা বের করতে না পারলেও দীর্ঘদিন পর একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে ঘটনার আদ্যোপান্ত।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এরপর মামলার তদন্তে গতি আসে। ১৫ মাস পর গত ১১ মে বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই। তবে এর আগেই ঘটনার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। পরদিন আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় বাবুল আক্তারের মামলার।

এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাবুলের বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা ও মো. কালু নামে দু’জনের সন্ধান পাওয়ার কথা বলে আসছিল পুলিশ। কিন্তু তারা দু’জন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আছেন। যদিও মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার বলছেন, তার স্বামীকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। তবে মুসা ও কালুর বাইরে এখন আরো গুরুত্বপূর্ণ দু’জনের সংশ্নিষ্টতার কথা বলছে মামলার বর্তমান তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। তাদের সন্ধান পাওয়া গেলেই মিতু হত্যার চার্জশিট দেয়া যাবে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

হত্যাকাণ্ডের কারণ

২০১৪ সালে কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে যোগ দেয়ার পর গায়ত্রী অমর সিং নামের এনজিও কর্মকর্তার সম্পর্ক ও পরোকিয়ার জেরে মিতু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অন্তত এখন পর্যন্ত পাওয়া তদন্ত রির্পোট ও মিতুর বাবার দাবি এটাই। গায়ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক প্রেমের বিষয়টি প্রথমে মিতু আঁচ করতে পারলেও পরে গায়ত্রীর দেয়া দু’টি বই এবং বইতে থাকা কিছু লেখা থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি। এসব নিয়ে ঝগড়া-বিবাদের পাশাপাশি মিতুকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতনের পাশাপাশি বাবুল আক্তার মিতুকে ডিভোর্স দেয়ারও হুমকি দেন। কিন্তু তার সব অপকর্ম প্রকাশ্যে জানিয়ে দেবেন বলে মিতু উল্টো হুমকি দিলে বাবুল মিতুকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন বলে জানান মিতুর বাবা।

যেভাবে হত্যাকাণ্ডের সুপারি দেয়া হয়

মিতুকে হত্যার জন্য মুছাসহ কিলিং স্কোয়াডকে ৩ লাখ টাকায় কন্ট্যাক্ট করেন বাবুল আক্তার। পরিকল্পনা জানালে মুসা প্রথমে রাজি না হলেও বাবুল আক্তারের চাপে শেষ পর্যন্ত রাজি হতে হয় মুসাকে। বাবুলের ব্যবসায়িক পার্টনার সাইফুলকে ৩ লাখ টাকা প্রয়োজন বলে জানান বাবুল। সাইফুল এই টাকা দেন আল মামুন নামের একজনকে যা মামুন পরে বিকাশের মাধ্যমে মুসাকে দেন। বাবুলকে গ্রেপ্তারের আগে সাইফুল এবং আল মামুন এসব ঘটনা নিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দেন। যেখানে তারা বিকাশের মাধ্যমে অর্থ প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে মুসাকে কেন এই টাকা দেয়া হয়েছে তা তারা জানেন না।

মুসার পরিচয়

দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মুসা মূলত আন্ডারওয়ার্ল্ডের সদস্য। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও হাটহাজারীতে বাবুল আক্তারের কর্মরত অবস্থায় মুসা ছিলেন তার সোর্স। মিতুকে হত্যায় বাবুল তাকে দিয়েই পরিকল্পনা করিয়েছেন যা সকলের কাছেই ওপেন সিক্রেট। কিলিং স্কোয়াডের অন্যান্য সদস্যরা স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, মিতুকে হত্যার জন্য মুসাই তাদেরকে ৩ লাখ টাকায় ভাড়া করেছিল। শুধু তাই নয়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র এবং মোটরসাইকেলও কিনেছিল মুসা।

কী বলেছেন মুসার স্ত্রী

গত ৩১ মে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার। সেখানে তিনি জানান, তার স্বামী পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। বাবুল আক্তারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যেদিন মিতু খুন হন সেদিন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে পরিবারের সদস্যদের জন্য পরোটা ও হালুয়া নিয়ে আসেন মুসা। টিভিতে মিতু হত্যার ঘটনা দেখছিলেন পান্না। এরপর তিনি স্বামীর কাছে জানতে চান, মিতুকে দেখতে যাবেন কিনা। উত্তরে মুসা বলেন, বাবুল আক্তার ঢাকা থেকে ফিরলে দেখতে যাবেন।

পান্না আরো জানান, হত্যার আগের দিন সন্ধ্যায় ভাড়া বাসায় তার স্বামীর কাছে কিছু লোক আসে। তাদের তিনি চেনেন না। তবে বাসায় আসার পর তাদের খেতে দেন। মিতু হত্যার দু’দিন পর পান্না তার বাবার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া চলে যান। কারণ তখন বাবার অসুস্থতার খবর পান তিনি। এর দু-এক দিন পর মুসাও রাঙ্গুনিয়া যান। সাত-আট দিন পর মুসার টিঅ্যান্ডটি ফোনে একটি কল আসে। ফোনটি রিসিভ করে পান্না জানান, মুসা ঘরের বাইরে রয়েছেন। ফোনের ওপাশ থেকে বলা হয়, মুছা যেন সাবধানে থাকে। তবে ফোন করা ব্যক্তি নিজের পরিচয় দেননি।

পান্না বলেন, ২০১৬ সালের জুন মাসের ১৯ বা ২০ তারিখের দিকে মুসা ফোনে কাউকে বলেন, ‘স্যার আমি তো এটা করতে চাইনি। আমার ফ্যামিলির যদি সমস্যা হয় তাহলে পুলিশের কাছে মুখ খুলব।’ তখন পান্না তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করেন, কে ফোন করেছিল? উত্তরে মুসা জানান, বাবুল আক্তার। এরপর পান্না মুসার কাছে জানতে চান, মিতু হত্যার ঘটনার তিনি জড়িত কি না। উত্তরে মুসা জানান, তাকে এই কাজে জড়িত থাকতে বাধ্য করেছেন বাবুল আক্তার। ২১ জুন মুসা তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাঠঘর এলাকায় নুরুন্নবী নামে এক গাড়িচালকের বাসায় যান। ২২ জুন মুসাকে ডিবি পরিচয়ে ধরে নেওয়া হয়।

মুসাকে গ্রেপ্তারের সময় সাদা পোশাকধারী সিএমপি’র দু’জন ওসিকে চিনতে পেরেছেন বলেও পান্না দাবি করেন। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চিত করতে পারবেন যে তার স্বামী মুসা কোথায় আছে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মুসাকে খুঁজে পাওয়া গেলেই মিতু হত্যার সকল রহস্যের জট খুলে যাবে।

দুই পুলিশ কর্মকর্তা কোথায় মিতু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কুশীলব কামরুল ইসলাম শিকদার মুসার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলছে মুসা পলাতক। তবে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি- মিতু হত্যার ১৭ দিন পর ২০১৬ সালের ২২ জুন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কিছু লোক তার স্বামীকে নগরীর কাঠগড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। এর আগে তার স্বামী পতেঙ্গার নুরুন্নবী ড্রাইভারের বাসায় রাত কাটিয়েছিলেন। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ডিবির পরিদর্শক মহিউদ্দিন সেলিম ও পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন তার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিদর্শক মহিউদ্দিন সেলিম বর্তমানে চট্টগ্রাম পিবিআইতে কর্মরত। আর পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালি থানার ওসি’র দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও পুলিশ মুসা গুমের সঙ্গে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে আসছে।

বাবুলের শ্বশুরের মামলা দায়ের

মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় এজাহার করেন। এজাহারে সাবেক এসপি মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার, কিলিং স্কোয়াডের সদস্য মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু, ওরফে কসাই কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকু মাইজ্যা ও শাহজাহান মিয়াকে আসামি করা হয়েছে। যদিও এদের মধ্যে দু’জন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন এবং বর্তমানে জেলে আছে দু’জন। তবে পুলিশের মতে নিখোঁজ রয়েছেন কিলিং স্কোয়াডের নেতৃত্বদানকারী মুসা।

মামলার নতুন এজাহারে যা আছে

দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজের সংগৃহীত আসামিদের ছবি বাবুল আক্তারকে দেখানো হলে তিনি ঘটনার নেতৃত্বাধীনকারী কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসাকে চেনেন না বলে জানান। যদিও বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স হিসেবে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছে এই মুসা।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাবুল কৌশলে মুসাকে চিহ্নিত না করে জঙ্গীদের দ্বারা এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালান। কিন্তু পরবর্তীতে তদন্তে বাবুল আক্তারসহ অন্যান্য আসামির দ্বারা এই ঘটনা যে সংঘটিত হয়েছে তার অসংখ্য প্রমাণ মিলেছে।

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজার চাকরিকালীন সময়ে বাবুল আক্তার গায়ত্রী অমর সিং নামের এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। গায়ত্রী ছিলেন আন্তর্জাতিক এনজিও কর্মকর্তা। পরকীয়ার কারণে বাবুল মিতুকে প্রায় সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। ২০১৪ সালে জুলাই মাসে বাবুল শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নিতে সুদান যান। ওই সময় তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বাসায় রেখে যান। সুদানে এক বছর থাকাকালীন গায়ত্রী ওই টেলিফোনে ২৯ বার বিভিন্ন ধরনের মেসেজ দেন। মিতু মোবাইল খুলে এসব ম্যাসেজ দেখে বিস্মিত হন এবং সব মেসেজ খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কয়েকমাস পূর্বে বাবুল আক্তার উচ্চতর ট্রেনিং নিতে এক মাসের জন্য চীন যান। ওই সময় বাবুল আক্তারকে গায়ত্রীর উপহার দেয়া ‘তালিবান’ এবং ‘বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট’ নামের দু’টি বই বাসায় খুঁজে পায় মিতু। ওই দু’টি বইয়ের মধ্যে তালিবান নামের বইয়ের তৃতীয় পাতায় গায়ত্রীর নিজ হাতে ইংরেজীতে লেখা আছে ‘০৫/১০/১৩, কক্সবাজার, বাংলাদেশ’ ‘হোপ দ্য মেমোরি অব মি অফারিং ইউ দিজ পার্সোনাল গিফট, সেল ইটারনালাইজ আওয়ার ওয়ানডারফুল বন্ড, লাভ ইউ, গায়ত্রী। একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা ২৭৬-এর পাতায় বাবুল আক্তার নিজের হাতে ইংরেজীতে লিখেছেন, ‘ফার্স্ট মিট’ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ফার্স্ট পিআর ইন বক্স ৭ অক্টোবর ২০১৩, জি বার্থ ডে ১০ অক্টোবর, ফার্স্ট কিসড ৫ অক্টোবর ২০১৩, ফার্স্ট বিচ ওয়াক ৮ অক্টোবর ২০১৩, মারমেইড উইথ ফ্যামিলি ১২ অক্টোবর ২০১৩, টেম্পল রামু প্রেইড টুগেদার ১৩ অক্টোবর ২০১৩, রামু রাবার গার্ডেন চকরিয়া নাইট বিচ ওয়াক। এছাড়া বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট নামের বইয়ের প্রথমদিকের দ্বিতীয় পাতায় গায়ত্রীর নিজ হাতে ইংরেজীতে লেখা আছে ‘৫/১০/২০১৩ উইথ মাই সিনসিয়ার লাভ, ইউরস গায়ত্রী’।

এজাহারে এসবের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা এবং আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীসহ অন্যান্য ঘটনাও উল্লেখ করা হয়।

গায়ত্রী কোথায়?

পিবিআই জানতে পেরেছে বাবুল আক্তারের কথিত বান্ধবী গায়ত্রী অমর সিং বর্তমানে ইউরোপের একটি দেশে জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর এ কর্মরত। তার অবস্থান জানতে চেয়ে এবং মামলার প্রয়োজনে তার সাথে কথা বলার অনুমতি চেয়ে গত সপ্তাহে ইউএনএইচসিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান। তিনি বলেন, আমরা গায়ত্রী অমর সিংয়ের অবস্থান জানার চেষ্টা করছি। তাকে পাওয়া গেলে তার সাথে সরাসরি অথবা ভার্চুয়ালি কথা বলবো। তবে গায়ত্রী এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ কোনো ফ্যাক্টর নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, গায়ত্রীকে পাওয়া না গেলেও মামলার স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে না। তার সাথে বাবুলের হয়তো বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু মিতু হত্যায় গায়ত্রীর জড়িত থাকার প্রমাণ এখনো দেখছি না।

বাবুলের সন্তানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

পিবিআই সূত্রানুযায়ী, আদালতের অনুমতি নিয়ে বাবুলের পুত্র মাহিরকে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদিও ঘটনার সময় বাবুল পুত্র মাহিরের বয়স ছিল ৭ বছর। কিন্তু মাকে হত্যার ঘটনা সচক্ষে দেখেছে। এসব যদি তার মনে থাকে তা সে তদন্ত সংস্থাকে অবহিত করতে পারবে। তখন সে কী দেখেছিল, আসামিদের বৈশিষ্ট্য কী ধরনের ছিল সেসব বিষয় তদন্তের স্বার্থে অন্যতম একটি উপাদান হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের শেষ পরিণতি

শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়। পরে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার পাঠানো হলেও ২৯ মে তাকে ফেনী জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

এদিকে, মিতু হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন মামলার তদন্তকারী এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত