ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

গুদাম কর্মকর্তাকে সাংসদের বাড়িতে আটকে টাকা আদায়ের চেষ্টা!

  নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২১, ১৯:২৫

গুদাম কর্মকর্তাকে সাংসদের বাড়িতে আটকে টাকা আদায়ের চেষ্টা!
খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের বাড়িতে লালপুর উপজেলা সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামের পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে ৮ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সংসদ সদস্যের তিন ঘনিষ্ঠজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। দুই আসামি রাসেল ও কালামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনুল ইসলাম নিজেকে সাংসদ শহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে রফিকুল ইসলামকে ফোন করে বাগাতিপাড়ায় সাংসদের বাড়িতে আসতে বলেন। তার কথামতো তিনি বেলা দেড়টায় সাংসদের বাড়ির অতিথিশালায় পৌঁছান। সেখানে ১০ মিনিট কথা বলার পর সাংসদ ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।

‘এরপর রফিকুল ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করলে রাসেল নামের এক যুবক বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেন। পরে কালাম নামের অপর এক যুবক তার পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করান। সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রাখার পর একটা সাদা কাগজে তাকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। রাসেলের কাছ থেকে তিনি আট লাখ টাকা ধার নিয়েছেন এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে তা পরিশোধ করবেন, এমন কিছু লেখা ছিল ওই কাগজে।’

এক পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে রোকনুল ইসলাম তাকে ফোন করে বলেন, ‘লেনদেনটা সেরে ফেলেন, কখন দেবেন?’

এ ঘটনার পর রাত ১০টার দিকে রফিকুল ইসলাম লালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করতে যান। দীর্ঘ সময় ধরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাটি শোনেন। তবে ঘটনাস্থল (সাংসদের বাড়ি) বাগাতিপাড়া থানা এলাকায় হওয়ায় তিনি অভিযোগ ফেরত দেন। পরে তিনি বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে ভোর ৪টায় খাদ্য কর্মকর্তাকে বাড়ি থেকে বাগাতিপাড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়।

এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, খাদ্যগুদামে সরকারি গম কেনা নিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায় করার জন্যই আমাকে এভাবে নাজেহাল করা হয়েছে। আটক থাকা অবস্থায় আমার কাছ থেকে নগদ টাকা বা ব্যাংকের চেক আদায় করতে না পেরে তারা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। ঘটনাটি পুলিশ সুপার জানেন।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাংসদ শহীদুল ইসলাম বলেন, তার চরিত্রে 'কালিমা লেপনের' জন্য তার বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটার অভিযোগ করা হয়েছে। খাদ্য কর্মকর্তা আমার সাথে দেখা করে চলে গেছেন। পরে আমার বাড়িতে আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এটাও সেই ষড়যন্ত্রের একটা অংশ।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, এ ঘটনায় বাগাতিপাড়া থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করাও হয়েছে। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা হবে।

এদিকে ওই ঘটনার পর নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর খাদ্যগুদাম সংলগ্ন পরিত্যক্ত একটি বাসা থেকে ২০০ বস্তা সরকারি গম উদ্ধার করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মি আক্তার ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্রলাল চাকমার উপস্থিতিতে উদ্ধারকৃত গম পুনরায় খাদ্যগুদামে মজুদ করা হয়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্র লাল চাকমা জানান, গুদামে জায়গা না হওয়ায় গোপালপুর সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ২০০ বস্তা সরকারি গম পরিত্যক্ত ওই বাসায় সরিয়ে রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত