ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

জীবনবিধ্বংসী নতুন মাদকে ঝুঁকছে তারুণ্য

  মো.ফরহাদ উজজামান

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২১, ২০:১৪  
আপডেট :
 ০১ জুলাই ২০২১, ০১:১৮

জীবনবিধ্বংসী নতুন মাদকে ঝুঁকছে তারুণ্য

দেশ ও জাতির আশা-ভরসা তরুণপ্রজন্ম। পৃথিবীর যত মহৎ কাজ হয়েছে প্রতিটির পেছনে রয়েছে তরুণদের অসামান্য অবদান। অথচ আজকের তরুণ প্রজন্মের মাঝে এলএসডি, ব্রাউনি বা গাঁজার কেক, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, স্ক্যাফ সিরাপসহ জীবন ধ্বংসকারী নতুন মাদকে আসক্তি বাড়ছে।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানস এর গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে জনসংখ্যার ৪৯ ভাগ মানুষ বয়সে তরুণ। মাদক ব্যবসায়ীরা এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে মাদকের ভোক্তা হিসেবে পেতে চায়। দেশে মাদকাসক্তদের ৮০ ভাগই কিশোর ও তরুণ।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, দেশের বাইরে গিয়ে অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে এসব মাদকের বিষয়ে ধারণা নিচ্ছে মাদক আসক্ত এসব তরুণেরা। এরপর সেইসব মাদক তৈরি ও সংগ্রহ করে তা যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীসহ প্রায় সব বয়সি মানুষের কাছে সরবরাহ করছে। এভাবে ক্রমশই বাড়ছে জীবনঘাতী এসব নতুন মাদক গ্রহণকারীর সংখ্যা।

বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তির নানা উৎস বিদ্যমান। ভাং, আফিম, গাঁজা ইত্যাদি প্রাচীনকালে ছিলো কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে ও বর্তমান সময়ে এর যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানকালের মাদকদ্রব্য হিসেবে , ফেনসিডিল, হিরোইন, মারিজুয়ানা, ইয়াবা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও নতুন মাদক হিসিবে যোগ হয়েছে এলএসডি, ব্রাউনি বা গাঁজার কেক, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, এমডিএমএ, খাট, ব্যথানাশক ট্যাবলেট ট্যাপেন্ডাডল, স্ক্যাফ সিরাপ ও এমফিটামিন পাউডার ককটেল বা ‘ঝাক্কি।

পাঁচ বছরে মাদক উদ্ধারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯-২০ সাল পর্যন্ত ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার ও ইনজেকটিং ড্রাগের ব্যবহার ক্রমশই বেড়েছে। এ ১২ বছরে শুধু এই নয়টি মাদক যে পরিমাণে উদ্ধার হয়েছে প্রচলিত দাম অনুযায়ী টাকার অঙ্কে তার পরিমাণ দাঁড়ায় আনুমানিক ১৪ হাজার ৩১৩ কোটি ৭৯ লাখ ৬২ হাজার ১৩০ টাকা।

এসব মাদক সংগ্রহ ও সরবরাহে বিভিন্ন পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় এবং সংগ্রহকারীরা নিজে গ্রহণ ও বিক্রি করে।

জনপ্রিয় ও আলোচিত মাদক ইয়াবা

দেশে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত মাদক ইয়াবা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা সাময়িকীতে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের ৫৮ শতাংশ ইয়াবাসেবী। গবেষকরা বলছেন, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে ইয়াবা জনপ্রিয় হতে শুরু করে ২০০০ সালের পর থেকে যখন টেকনাফ বর্ডার দিয়ে মিয়ানমার থেকে এই ট্যাবলেট আসতে শুরু করে। তারপর এটি খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। তার আগে নব্বই এর দশকে জনপ্রিয় ড্রাগ ছিল হেরোইন।

রাজধানীর মুক্তি নামের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মুক্তির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান কনসালটেন্ট ড. আলী আসকার কোরেশী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ইয়াবা গ্রহণ করলে সেটি শুরুতেই মানুষকে চাঙ্গা করে তোলে। আর সব মানুষই নিজেকে চাঙ্গা দেখতে ভালোবাসে। একারণে তারা ইয়াবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেনটাল হেলথের সাইকোথেরাপির অধ্যাপক ড. মোহিত কামাল বলেন, এটি অত্যন্ত ছোট্ট একটি ট্যাবলেট। ওয়ালেটে এবং নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগেও এটি সহজে বহন করা যায়। অনলাইনে অর্ডার দিলে পৌঁছে যায় বাড়িতে। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন যোগাযোগ অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার দেওয়া যায়। কিন্তু ফেনসিডিলের জন্যে বড় বোতল লাগে। সেটা বহন করা, খাওয়ার পর ফেলা অনেকের জন্যেই ঝামেলার। এছাড়াও এটি অনেক বেশি পরিমাণে খেতে।

আশির দশকের মাদক ফেনসিডিল

নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় ড্রাগ ছিল হেরোইন। তারও আগে আশির দশকে ফেনসিডিল ছিলো, হেরোইন ও ফেনসিডিলের চল এখনও আছে, কিন্তু সীমিত পর্যায়ে। অন্যদিকে, ফেনসিডিল ও হেরোইন খেলে শরীরে ঘুম ঘুম ভাব আসে। তন্দ্রার মতো হয়। একটা জায়গায় বসে তারা ঝিমুতে থাকে। সিগারেটের পর সিগারেট, চায়ের পর চা খেতে থাকে। এবং তখন সে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ফেনসিডিল ও হেরোইনের বেলাতেও দ্রুত গতিতে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। কারণ তারা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতে পারে না। তাদের খাওয়ার প্রয়োজনও খুব একটা পড়ে না। কারণ হেরোইন কিম্বা ফেনসিডিল খেলে ক্ষুধা কেটে যায়। ফলে তাদের সাধারণ পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হয় না। যার কারণে তাদের শরীরে সব ধরনের ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে শুরু করে।

আলোচিত মাদক এলএসডি

বাংলাদেশে সম্প্রতি এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের জের ধরে সামনে আসে তরুণদের মধ্যে এলএসডি বা লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড ব্যবহারের প্রবণতার খবর। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই শিক্ষার্থী বন্ধুদের সাথে মাদক এলএসডি সেবন করে একজন ডাব বিক্রেতার দা নিয়ে নিজেই নিজের গলায় আঘাত করেন।

২০১৯ সালে দেশে প্রথমবারের মতো অত্যন্ত ব্যয়বহুল এ মাদক আনা হয়েছিল কানাডা থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর ২৬ মে আটক করা হয় এ মাদকের দ্বিতীয় চালান। টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যবহার করে কুরিয়ারের মাধ্যমে অত্যন্ত ক্ষতিকারক এ মাদকের বড় চালান আসে। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের অনেকে বিদেশে গিয়ে ফেরার সময় আনেন এ মাদক। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এই মাদকের ব্যবহার রয়েছে। মাইক্রোগ্রামেই (১ গ্রামের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ) নেশা হওয়া এ মাদককে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী মাদক বলা হচ্ছে। ডার্ক ওয়েব ও বিটকয়েনর ব্যবহার হচ্ছে এখানে।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, মাদকাসক্তরা একটা মাদক নিয়ে বসে থাকে না। একটা গ্রহণ করার পর তারা নতুন কিছুর চিন্তা করে। মেয়েদের মধ্যেও এ প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এগুলোর বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে। শুরুতেই উপড়ে ফেলতে হবে শেকড়।

গাঁজার কেক বা ব্রাউনি

সম্প্রতি আলোচিত আরেক মাদক গাঁজার কেক বা ব্রাউনি। যা গাঁজার নির্যাস থেকে তৈরি হয়। গত ৯ জুন ৩০ পিস গাঁজার কেকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

পুলিশ বলছে, গাঁজা পানিতে সিদ্ধ করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এটি তৈরি হয়। এ বিষয়ে ডিএনসির কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, মাদক আইন ১৯৯০ হওয়ার আগে এই গাঁজা দিয়ে এক সময়ে ‘মোদক’ বানানো হতো। এটা গুড়সহ বিভিন্ন মিষ্টি দ্রব্যে মেশানো হতো। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও ছিল এর ব্যবহার। ব্রাউনিটা মোদকের আধুনিক সংস্করণ।

ক্রিস্টাল মেথ বা আইস

মাদকের জগতে আরেক ভয়ংকর সংযোজন ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। যা ২০১৯ সালে রাজধানীর জিগাতলা থেকে প্রথমবার উদ্ধার হয়। এরসঙ্গে আরও উদ্ধার হয় এমডিএমএ নামের আরেকটি মাদক তৈরির উপকরণও। সর্বশেষ ১৭ জুন রাজধানীর উত্তরা থেকে এই মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা তৌফিকসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা মেথ ল্যাব তৈরি করে ভেজাল আইস, ইয়াবার রং পরিবর্তন, ঝাক্কি মিক্স বা ককটেল মাদক তৈরি করছিল। এছাড়া খাট নামের এক ধরনের পাতাও মাদক হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।

এ মাদক দ্রব্যগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, এই মাদক সেবনের ফলে অনিদ্রা, মানসিক অবসাদ, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা হয়। আর মাদক এমডিএমএ প্রধানত ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যবহার হয়। এটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকটা এলএসডির মতোই। মাদক খাট সম্পর্কে তিনি বলেন, এর মধ্যে ক্যাথিন ও ক্যাথিনোন নামের দুই ধরনের উপাদান থাকে। যা মাদকের অন্যতম উপাদান।

নতুন মাদক এমফিটামিন পাউডার

আরেকটি একেবারেই নতুন মাদক হলো এমফিটামিন পাউডার। এটা মূলত ইয়াবার কাঁচামাল। সম্প্রতি এর ১২.৩ কেজি ধরা পড়ে। এছাড়া ইয়াবার বিকল্প হিসাবে ব্যবহার হয় ফার্মাসিউটিক্যাল ড্রাগ ট্যাপেন্ডাডল। এটা মূলত ভারত থেকে আসে। রাজশাহীতে ১৬ হাজার পিস ট্যাবলেটের একটি বড় চালান ধরা পড়ে। এটা ব্যথা নিরাময়ে ব্যবহার হয়। গত মাসেও এক জায়গা থেকে একটি বিশেষ ওষুধ কোম্পানির ১ লাখ এবং আরেক জায়গা থেকে ১০ হাজার ট্যাবলেট উদ্ধার করে।

ডায়েমেথিল ট্রাইপ্টেমিন বা ডিএমটি

লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড বা এলএসডির পরে এবার দেশে প্রথমবারের মতো উদ্ধার হয়েছে ডায়েমেথিল ট্রাইপ্টেমিন বা ডিএমটি নামক ভয়ঙ্কর এক মাদক।

জানতে চাইলে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক খন্দকার সাইফুল আলম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিদেশে পড়ালেখা করার জন্য অবস্থানকালেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরা জড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব নতুন মাদকে। কেউ থাইল্যান্ডে গিয়ে নতুন মাদক ডিএমটি তে আসক্ত হচ্ছে, কেউ আবার লন্ডনে গিয়ে এলএসডি সেবনে আসক্ত হচ্ছে। পড়াশুনা শেষে দেশে ফিরলেও আসক্তি থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে আমদানি করছে এলএসডি ও ডিএমটি।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নতুন মাদক ডিএমটি যার নাম Dimethyl Tryptamine। এটি একটি হ্যালুসিনোজেনিক ট্রিপটামাইন ড্রাগ। মূলত এটি মুখ দিয়ে এলএসডি সেবনের মতো, যা ধোঁয়ার মাধ্যমে শ্বাস নিয়ে বা ইনজেকশনের সঙ্গে নেয়া যায়। এটি সেবনের পর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গভীর হ্যালুসিনেশন তৈরি করে। এটি সেবনের পর দ্রুত হ্যালুসিনেশন হয় এবং তারা কল্পনার জগতে প্রবেশ করে। মূলত এ থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা হতে পারে, এমনকি জীবননাশও হতে পারে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, নতুন মাদকের ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুকে তাদের বিভিন্ন গ্রুপও রয়েছে। এলএসডিসহ নতুন মাদকগুলোর বেশিরভাগই ব্যয়বহুল এবং ক্ষতিকারক।

নতুন মাদকের তরুণদের আগ্রগের বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সম্প্রতি আমরা অপ্রচলিত কিছু মাদক দেখতে পাচ্ছি। তাদেরকে গ্রেপ্তার করছি। এরই মধ্যে ৪৬ হাজারের বেশি মাদক-কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মাদত আসক্তরা সবসময় নতুনত্ব চায়।

তিনি বলেন, উত্তরাতে একজন ইয়াবাসেবীকে গ্রেপ্তারের পর সেই মাদকসেবী জানিয়েছে তার দিনে ১০-১২টা ইয়াবা সেবনে কিছুই হয় না। এর জন্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাদকের ধরন ও গ্রহণকারীও পালটাচ্ছে। যেসব নতুন মাদক পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর রিঅ্যাকশন ও দাম অনেক বেশি। অনেক সময় বিদেশে পরতে যেয়েও তারা নতুন মাদকে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অল্প বয়সিরা নতুন নতুন মাদকে বেশি ঝুঁকছে।

নতুন মাদক এস্কাফ

গত ২৪জুন রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকা থেকে নতুন মাদক এস্কাফ (Eskuf) ও গাঁজাসহ ৪ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বাংলাদশ জার্নালকে বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের আড়াল করতে ব্যবসার ধরণে পরিবর্তন আনছে। তারই অংশ হিসেবে সবজি বিক্রেতা সেজে পিকআপ ভ্যানে করে নতুন মাদক সিরাপ এস্কাফ পরিবহন করছিল। ফেন্সিডিল জাতীয় ‘Codeine Phosphate’ সমৃদ্ধ সিরাপ এস্কাফ (Eskuf) প্রথম বারের মতো দেশে উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ৪ জনই পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে মাদক সংগ্রহ করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয় করতো।

মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও মাদকদ্রব্যের অবৈধ প্রবেশের ফলে আমাদের তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। গবেষনায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী। তার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনসহ রাজধানীতে সংঘটিত অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গেই মাদকের সম্পর্ক রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যেক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, সেসব প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা যেমন বিশেষ প্রয়োজন, তেমনিভাবে আইনি ব্যবস্থাপনাকেও আধুনিক ও শক্তিশালী করা সংশ্লিষ্টদের সচেতন দায়বদ্ধতা। দেশের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের মূল্যবান সময় ও জীবনকে সুরক্ষা দিতে সব ধরনের প্রাসঙ্গিক কার্যক্রমও বিশেষ জরুরি।

বাংলাদেশ জার্নাল-ওআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত