ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

লাখ টাকায় কেনা গরু, চামড়ার দাম তিনশ’ টাকা

লাখ টাকায় কেনা গরু, চামড়ার দাম তিনশ’ টাকা

কোরবানির পশুর চামড়াকে বলা হয় ‘গরিবের হক’। কারণ চামড়া বিক্রির টাকা সদকা হিসেবে গরিব, এতিম ও ফকির-মিসকিনদের দান করার বিধান আছে। টানা গত কয়েক বছর ধরে ফড়িয়া সিন্ডিকেটের অদৃশ্য কারসাজিতে কোরবানির চামড়া বিকিকিনিতে নৈরাজ্য চলছে। গরিবেরা তাদের হক বঞ্চিত হচ্ছে। রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় কোরবানির ঈদের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা মেলেনি। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই নিকটবর্তী মসজিদ মাদরাসায় কোরবানির চামড়া দান করছেন। কোনো কোনো এলাকায় লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩০০ টাকায়।

রাজধানীর গুলশান থানাধীন শাহজাদপুর এলাকার বাসিন্দা গোলাম জাকারিয়া এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া ৩০০ টাকায় বিক্রির কথা জানিয়ে বলেন, কোরাবানির গরুর চামড়া বি্ক্রির টাকা প্রতিবার আমি কয়েকজন গরিব আত্মীয়-স্বজনকে দান করে থাকি। অন্যবার বিকেলের আগেই চামড়া বিক্রি হয়ে গেলেও এবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো চামড়া ব্যবসায়ী আমাদের এলাকায় আসেনি। এ অবস্থায় মাদ্রাসায় চামড়া দান করার কথা ভাবি। কিন্তু মাদ্রাসার ছাত্রদেরও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে সন্ধ্যার পর প্রতিবেশির মাধ্যমে আসা একজন বিক্রেতার কাছে নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হই।

বুধবার রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার, পল্টন, মতিঝিল, মিরপুর, মোহামম্মদপুর এলাকায় দেখা গেছে এই চিত্র। এসব এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছর পাড়া মহল্লায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ঘুরে ঘুরে কমবেশি দামে চামড়া কিনলেও এবার সুকৌশলে সিন্ডিকেট করে তারা চামড়া কিনতে বাড়ি বাড়ি ঘোরেননি। গোপনে গোপনে লোক পাঠিয়ে চামড়া কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর বলেছেন, চামড়া ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে, যা দাম পান ছেড়ে দেন। অনেকেই বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে ক্রেতা না পেয়ে নামমাত্র দামে বিক্রি করেছেন কিংবা মাদ্রাসায় দান করে দেন।

করোনার কারণে এবার মাদ্রাসা থেকেও সেভাবে শিক্ষার্থীদের কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য পাড়া-মহল্লায় দেখা যায়নি।

দেশের একসময়ের অন্যতম রপ্তানীপণ্য কাঁচা চামড়া বাজারে গত কয়েকবছর ধরে বিপর্যয় লেগেই আছে। সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার নির্ধারিত দাম বেঁধে দিলেও বাস্তবে সেই দাম মিলেনি। ফড়িয়া সিন্ডিকেটের কারসাজিতে প্রতিবছরই চামড়ার ধাপে ধাপে কমেছে। ট্যানারি মালিকরা চামড়ার নির্ধারিত দাম দেওয়ার দাবি জানালেও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরত্বে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পাননি ন্যায্য মূল্য। গত কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়ায় মৌসুমী ব্যবসায়ী চামড়া বেচাকেনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এরই প্রভাবে কোরবানির চামড়া অবিক্রিতই থেকে যাচ্ছে।

চামড়া নিয়ে কারসাজি বন্ধে চলতি বছর কোরবানির ঈদের আগে চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই অনুযায়ী লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু ও মহিষের চামড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কেনার কথা ট্যানারিগুলোর। রাজধানীতে কোরবানির পশুর চামড়ার সরকার নির্ধারিত দরের অর্ধেক দামও মিলছে না।

ট্যানারি ব্যবসায়ীদের গড় হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি বড় গরু থেকে ৪৫ বর্গফুট পর্যন্ত চামড়া পাওয়া যায়, ছোট গরুতে পাওয়া যায় ২০ বর্গফুট। সর্বনিম্ন ৪০ টাকা দর হিসাব করলে বড় গরুর লবণযুক্ত চামড়া ১ হাজার ৮০০ টাকা ও ছোট গরুর চামড়া ৮০০ টাকায় ট্যানারিগুলো কেনার কথা। এই হিসাবে লবণের দাম, অন্যান্য খরচ ও আড়তদার মুনাফা বাদ দিলে বিক্রেতারা প্রতিটি লবণযুক্ত চামড়া ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু ছোট-বড় সব গরু মিলিয়ে রাজধানীর চামড়া বিক্রেতারা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যেই চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০টাকার চেয়ে বেশি দিয়ে চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই কাঙ্খিত দামে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অধিকাংশ লোকজন নিকটবর্তী মসজিদ মাদরাসায় কোরবানির চামড়া দান করছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল- ওআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত