ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

শ্রীপুরে ৬ দিনে তিন হত্যাকাণ্ড, হামলায় আহত অনেকে

  আনিছুর রহমান শামীম, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২১, ১৯:১২

শ্রীপুরে ৬ দিনে তিন হত্যাকাণ্ড, হামলায় আহত অনেকে
ছবি- গুগল ম্যাপ থেকে

গাজীপুরের শ্রীপুরে গত ২১ জুলাই থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত তিনটি হত্যাকাণ্ড এবং হামলার ঘটনায় সাবেক জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক আহত হয়েছেন। হত্যার শিকার হয়েছেন একজন কৃষক, একজন ছাত্রনেতা ও একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

তারা হলেন- উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের গাজিয়ারন গ্রামের কৃষক অব্দুল আজিজ (৫৫), শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য পৌরসভার বেড়াইদেরচালা গ্রামের সৈয়দ মাহবুব হোসেন মাসুম আহমেদ (২২) ও তেলিহাটী ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন।

প্রত্যেকটি ঘটনার মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শফিউল্লাহ শফিক।

গত কয়েকদিনে শ্রীপুরে পিটিয়ে ও অগ্নিসংযোগে তিনটি হত্যা এবং একাধিক হামলায় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য পোস্ট করেন শ্রীপুরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তারা এসব ঘটনায় উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

শ্রীপুরের গাজিয়ারন গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২৩ জুলাই জমি সংক্রান্ত বিরোধে কৃষক আব্দুল আজিজের সাথে প্রতিপক্ষদের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে তা বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নেয়। দুইপক্ষ লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এ ঘটনায় কৃষক আব্দুল আজিজসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। তাদের প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে গুরুতর আহত দুইজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

কৃষক আব্দুল আজিজের ছেলে শহীদুল্লাহ জানান, অবস্থার অবনতি হলে কৃষক আব্দুল আজিজকে রোববার (২৫ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে তিনি মারা যান।

মামালার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার-উপ পরিদর্শক (এসআই) সজীব হাসান জানান, এ ঘটনায় কৃষক আব্দুল আজিজের ছেলে বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেছে। হাসপাতালে কৃষক আজিজ মৃত্যুর খবর পেলে স্থানীয় জনতা ও বাদীর স্বজনেরা আসামি হেলিম খান ও আরিফ খানকে সোমবার (২৬ জুলাই) রাতেই আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ ওই দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

এদিকে শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা গ্রামের মৃত আবুল হোসনের ছেলে সৈয়দ মাহবুব হোসেন মাসুম আহমেদ (২৫) ঈদের দিন বুধবার (২১ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মাওনা চৌরাস্তায় চামড়া কেনাবেচা করে বাসায় ফেরেন। বাসায় পৌঁছে তার কক্ষের দরজা খোলা দেখে কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারপাশ থেকে ৭/৮ জন তাকে ঘিরে মারপিট শুরু করে। পরে দৃর্বৃত্তরা তাকে বাড়ির বাইরে বের করে লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে পালিয়ে যায়। হামলাকারীরা আগে থেকেই বাড়ির অন্যান্য ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকিয়ে দেয়ায় তার চিৎকার শুনে বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরে আহাতাবস্থায় সে নিজেই বাইরে থেকে আটকিয়ে দেয়া একটি ঘরের দরজা খুলে দিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে।

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া জানান, মুমূর্ষু অবস্থায় তার স্বজনেরা মাসুম আহমেদকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইন্সটিউিট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মারা যান। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।

অপর একটি ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) রাত ৯টায় উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের চৌরাস্তায় (তেলিহাটি মোড়) ভাই ভাই ট্রেডার্স থেকে একটি গ্যাস সিলিন্ডার কেনা নিয়ে দোকান মালিক মোজাম্মেলের হোসেনের সাথে স্থানীয় তোফাজ্জল সরকারের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তারা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে তোফাজ্জলের ভাই মোফাজ্জল সরকার ও তাইজু সরকার এসে দোকানে হামলা চালায়। তারা দোকানের ক্যাশ বাক্সসহ আসবাব ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা দোকানের ক্যাশ বাক্সের ড্রয়ার ভেঙ্গে নগদ টাকা লুট ও পেট্রোল ঢেলে দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। এতে দোকান মালিক ও তার তিন ভাই দগ্ধ হয়।

এ ঘটনায় দোকান মালিক মোজাম্মেল হোসেনের ভাই তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে অভিযুক্ত করে শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকালে শ্রীপুর থানায় মামলা একটি মামালা দায়ের করেন। চারদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (২৬ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরিফ মৃত্যুবরণ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় শ্রীপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শাহজাহান মন্ডলের ছেলে তাজিম মন্ডলের সাথে শ্রীপুর চৌরাস্তা (বাসস্ট্যান্ড) এলাকার মনির হোসেনের মোটর পার্টসের দোকানে মবিল ও খুচরা যন্ত্রাংশ কেনাবেচা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। খবর পেয়ে সাবেক ওই কাউন্সিলর এগিয়ে আসলে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

এ সময় তারা কাউন্সিলরকে হামলা করে আহত করে। হামলার ঘটনা একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ ২৪ এর স্থানীয় প্রতিনিধি ও কাউন্সিলরের ভাগিনা আল আমীন ভিডিও ধারণকালে তিনিও হামলার শিকার হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে বলে জানান শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক মো. হারুন-অর রশীদ ফরিদ জানান, গত কয়েকদিনে শ্রীপুরে ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনটি হত্যাকাণ্ড এবং সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধির ওপর হমালা জনমনে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর চেষ্টা করছে কিছু দুষ্কৃতিকারী। অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান তিনি।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ শফিক বলেন, সবগুলো ঘটনার মামলা হয়েছে। পুলিশ একটি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় দুজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। ছাত্রলীগ নেতা মাসুম আহমেদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পিবিআই তদন্ত করছে। অন্যসব ঘটনায় গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। খুব শিগগিরই গ্রেপ্তারের সংবাদ পাওয়া যাবে। সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের সকল তাৎক্ষণিক তৎপরতা সম্পর্কে জানে না। সে কারণে হয়তোবা মন্তব্য করতে পারে। তবে আইনি অগ্রগতির তথ্যগুলো পেলে অবশ্যই প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত