ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

মিতু হত্যাকাণ্ড: গায়ত্রী সম্পর্কে যা জানালো ইউএনএইচসিআর

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২১, ১৫:০৬

মিতু হত্যাকাণ্ড: গায়ত্রী সম্পর্কে যা জানালো ইউএনএইচসিআর
ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিং

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যাকাণ্ডে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের কথিত প্রেমিকা গায়ত্রী অমর শিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) দেয়া সেই চিঠির উত্তর পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ২৩ মে ইউএনএইচসিআরকে চিঠি দেয় পিবিআই।

বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।

তিনি জানান, গত জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ওই চিঠির উত্তর পেয়েছি। গায়ত্রী সম্পর্কে সংস্থাটি পিবিআইকে শতভাগ সহযোগিতা করেছে। বেশকিছু তথ্য দিয়েছে৷ এসব তথ্য যাচাই বাছাই করে গায়ত্রীর বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। মিতু হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। তবে গায়ত্রী সম্পর্কে চিঠিতে সংস্থাটি কী তথ্য দিয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু প্রকাশ করতে পিবিআই নারাজ।

পিবিআই সূত্র শুধু জানাচ্ছে, ইউএনএইচসিআর এটি নিশ্চিত করেছে যে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার (প্রটেকশন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন গায়ত্রী অমর সিং। ফিরতি চিঠিতে সংস্থাটি এও জানিয়েছে, গায়ত্রী এখন আর ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে যুক্ত নেই। তবে তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি চিঠিতে।

কে এই গায়ত্রী?

গায়ত্রী অমর সিং একজন ভারতীয় নাগরিক। তিনি জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার—ইউএনএইচসিআর এর ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন কক্সবাজারে। তিনি উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রটারডামে রয়েছেন। সেখানেও তিনি ইউএনএইচসিআর-এর লিগ্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর আগে জানা গিয়েছিল।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাবুল আক্তার সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকাকালে প্রথমবার গায়ত্রীর সাথে বাবুলের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন স্ত্রী মাহমুদা মিতু। ওই সময় বাবুল আক্তার তার মোবাইলের সিমটি দেশে রেখে যান। আর বিভিন্ন সময়ে গায়ত্রী মোট ২৯টি এসএমএস পাঠান বাবুল আক্তারের সিমে। পরে প্রতিটি এসএমএসই হাতে লিখে নোট করে রাখেন মিতু। ২৯টি ম্যাসেজের সবগুলোই ইংরেজিতে লেখা। ম্যাসেজগুলোতে গায়েত্রী ও বাবুলের মধ্যে গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

এছাড়া বাবুল আক্তারকে গায়ত্রীর উপহার দেয়া ‘TALIBAN’ ও ‘Best kept secret’ নামে দুটো বইও হাতে আসে মিতুর। যার মধ্যে ‘TALIBAN’ বইয়ের শেষ প্রচ্ছদের আগের পাতায় বাবুল আক্তার নিজ হাতে গায়ত্রীর সাথে পরিচয় ও সম্পর্কের নানা খুঁটিনাটি তথ্য নোট করে রাখেন।

সেই নোট অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর গায়ত্রীর সাথে প্রথম দেখা হয় বাবুলের। দুজনে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হাঁটেন ৮ অক্টোবর। এসব তথ্যের সাথে ১০ অক্টোবর গায়ত্রীর জন্মদিনের তথ্যও ওই পাতায় নোট করে রাখেন বাবুল আক্তার।

সেখানে লেখা ছিল- ‘আমাদের ভালো স্মৃতিগুলো অটুট রাখতে তোমার জন্য এই উপহার। আশা করি, এই উপহার আমাদের বন্ধনকে চিরস্থায়ী করবে। ভালোবাসি তোমাকে, গায়েত্রী।’ একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় গায়েত্রী তাদের প্রথম দেখা, প্রথম একসঙ্গে কাজ করা, প্রথম কাছে আসা, মারমেইড হোটেলে ঘোরাফেরা, রামু মন্দিরে প্রার্থনা, রামুর রাবার বাগানে ঘোরাফেরা এবং চকরিয়ায় রাতে সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি স্মৃতির কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট নামের বইয়ের ২য় পাতায় গায়েত্রী নিজ হাতে ‘তোমার ভালোবাসার গায়েত্রী (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা)’ লেখেন।

মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন এজাহারে অভিযোগ করেন, তার মেয়ে মিতু এই ‌‘অনৈতিক সম্পর্কের’ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন বাবুল। নির্যাতনের বিষয়টি মিতু জানিয়েছিলেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তার বাবা।

সম্প্রতি মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছিলেন বাবুলের নিকটাত্মীয় সাইফুল। তিনি শুধু পিবিআইয়ের কাছেই এসব তথ্য স্বীকার করেননি। সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় দেয়া আদালতেও কিলিং মিশনের বিস্তারিত তুলেও ধরেছেন সাইফুল ও মামুন। মূলত এরপরই খুনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বাবুল আক্তারের নাম উঠে আসে। কেননা এর আগে কিলিং মিশনের দলনেতা হিসেবে মুছার নাম অন্যদের জবানবন্দিতে উঠে এলেও কার নির্দেশে বা কে মাস্টার মাইন্ড তা স্পষ্ট ছিল না। এতোদিন পর স্পষ্ট হয়েছে মূলত, বাবুল আক্তারই মিতু হত্যার মাস্টার মাইন্ড ও নির্দেশদাতা।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল ৭টা ১৭ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে করে তিন দুর্বৃত্ত মিতুকে ঘিরে ধরে প্রথমে গুলি করে। এরপর কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। ওই সময় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন বাবুল আক্তার। মামলাটি চট্টগ্রামের নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ৩ বছর ১১ মাস তদন্তে থাকার পর গত বছরের মে মাসে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।

তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এরপর মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় এজাহার দায়ের করেন।

এজাহারে সাবেক এসপি মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার, কিলিং স্কোয়াডের সদস্য মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু, ওরফে কসাই কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকু মাইজ্যা ও শাহজাহান মিয়াকে আসামি করা হয়েছে। যদিও এদের মধ্যে দু’জন পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন এবং বর্তমানে জেলে আছে দু’জন। পুলিশের মতে, নিখোঁজ রয়েছেন কিলিং স্কোয়াডের নেতৃত্বদানকারী মুসা।

এছাড়া স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। ২৯ মে থেকে বাবুল আক্তার ফেনী কারাগারে আছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত