ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ইউটিউবে দেখে সফল মুক্তাচাষী সুজন

  পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:২৯  
আপডেট :
 ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:১৭

ইউটিউবে দেখে সফল মুক্তাচাষী সুজন
চাষী মো. সুজন হাওলাদার

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ইউটিউবে দেখে মুক্তা চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষী মো. সুজন হাওলাদার।

উপজেলার ধুলাশ্বার ইউনিয়নের চাপলি বাজার এলাকায় চাষ হচ্ছে এ মুক্তা। প্রাথমিকভাবে ২০১৯ সালে মাত্র ১০ মাসেই এ সফলতার মুখ দেখেছেন এই চাষী। প্রথমবার ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ১ লাখ টাকা বিক্রি করেন।

পরবর্তীতে ২০২০ সালে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ২ লাখ টাকা বিক্রি করেন। এই চাষকে এখন পেশা হিসেবে নিয়ে বর্তমানে ২০২১ সালে চাষের পরিমান বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকা খরচ করে বছর শেষে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা বিক্রির আশা করেছেন সুজন।

সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়ির নিজস্ব মাত্র ৩০ শতকের পুকুরে তিনি এ মুক্তার চাষ করছেন। পুকুরে ভাসমান অবস্থায় মুক্তার জন্য ঝিনুক রাখা নেটের ব্যাগ রয়েছে।

পুরো পুকুরে রশিতে বেঁধে রাখা রয়েছে প্রতিটি ব্যাগ। আর এ রশি ও ব্যাগগুলো পানিতে ঝুলিয়ে রাখতে ভাসমান ফুলুট রশি বেঁধে তা ভাসিয়ে রাখা হয়েছে।

মুক্তা চাষি সুজন জানান, ২০১৯ সালে ইউটিউবে ভিডিও দেখে লালমনিরহাটের লিটন নামের এক চাষীর সহযোগিতায় সখ করে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পুকুরে ৭৫০টি ঝিনুক নিয়ে চাষ শুরু করেন। তাতে তিনি প্রথম বছরেই চাষে সফলতা পেয়েছেন। তিনি গ্রামের পুরানো পুকুর থেকে এ ঝিনুক সংগ্রহ করেন। প্রতিটি ঝিনুক সেটিংসহ ৩০ টাকা করে খরচ হয়।

তিনি বলেন, প্রতিটি ঝিনুক থেকে দুটি করে মুক্তা আসবে, এখানের ঝিনুকগুলো নিউক্লিয়ার ডাইস ও মেন্টাল টিস্যু পদ্ধতিতে চাষ করে থাকি। মেন্টাল টিস্যু পদ্ধতিতে চাষে একটু সময় বেশি লাগে। এদের খাবারের জন্য বেশী কিছু দিতে হয় না, মাঝে মাঝে কাঁচা গোবর ও পানি পরিস্কার করার জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। আমি চাষ শুরু করার পরে এখন পর্যন্ত আমার হাতে ১৫৩ জনকে এই চাষ করার পদ্ধতি শিখিয়েছি। এখনও যারা নতুন করে আসতে চায় তাঁদেরকে আমি বলবো এই চাষ বেশ লাভজনক এবং একটি পুকুরে একসাথে দুটি চাষ করা যায় এটা সবচেয়ে ভালো একটি দিক।

চাষ পদ্ধতি: ঝিনুক সংগ্রহ করে তার খোলসের ভিতরের শিরা কেটে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মুক্তা তৈরির জন্য সেটিং করা হয়। একটি ঝিনুকে ২টি মুক্তা জন্ম নিবে। আর এ ঝিনুকগুলো যাতে মাটিতে না মিলে যেতে পারে সে জন্য একটি নেটের ব্যাগে করে পানিতে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। আর এসব ব্যাগ যাতে সব সময়ই পানিতে থাকতে পারে সেজন্য পুকুরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রশি বেঁধে ওই সব ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এজন্য কিছু ফুলুট ওই রশির মাঝে মাঝে বেঁধে দিতে হবে।

এভাবে ওই সব ব্যাগে ঝিনুক রেখে ব্যাগগুলো ঝুলিয়ে রাখলে ওই ঝিনুকের ভেতর মুক্তা তৈরি হয়। আট-দশ মাস পর প্রতিটি ঝিনুক থেকে পরিপূর্ণ মুক্তা পাওয়া যায়। মুক্তার দুটি ধরন রয়েছে। এর একটি নিউক্লিয়ার ডাইস ও অন্যটি মেন্টাল টিস্যু। তবে মেন্টাল টিস্যুর (সময় একটু বেশি লাগে) থেকে নিউক্লিয়ার ডাইসের মুক্তার চাহিদা বেশি।

সুজনের প্রতিবেশী ফখরুল বলেন, আমরা প্রথমে ওরে নিষেধ করলেও পরবর্তীতে দেখলাম এই মুক্তা চাষ করেই সে সফল। এখন আমরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছি এই চাষে। এই চাষে সবচেয়ে সুবিধা একটি পুকুরে একদিকে মুক্তা অন্যদিকে মাছ চাষ করা যায়।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, কলাপাড়া উপজেলায় ধুলাশ্বারের সুজন নামে এক চাষী অনেক আগ থেকে সফলতার সাথে মুক্তা চাষ করে আসছে। আমরা তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি, পরবর্তীতে সরকারি বড় কোনো সহযোগিতা পেলে তাকে দেয়ার চেষ্টা করবো, তাকে দেখে এখন উপজেলার অনেকেই এই পেশায় আসছে এবং নবীন যারা আছে তাদেরকে আমরা বলি যে এই চাষে সফলতা পেতে তারকাছ থেকে প্রাথমিক ধারণাটা নিতে।

আমরা চাচ্ছি সরকারি ভাবে এই উপজেলা একটি ঝিনুক দিয়ে মুক্তা চাষের প্রকল্প নিয়ে আসতে যাতে সফলতার সাথে এই চাষ করতে পারে চাষীরা এবং তাদেরকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে পারি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত