ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষা: বেবিচকের অরাজকতা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৩২  
আপডেট :
 ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:১৭

প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষা: বেবিচকের অরাজকতা
পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তাসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকলেও বিমানবন্দরে উন্মুক্ত স্থানে করোনার নমুনা সংগ্রহ করছে একটি প্রতিষ্ঠান। ছবি নিজস্ব

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত পরীক্ষাগারগুলো চালু নিয়ে লুকোচুরি খেলছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সংস্থাটির সিদ্ধান্ত ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাচ্ছে। একেক বার একেক সিদ্ধান্তে বিমানবন্দরে স্থাপিত পরীক্ষাগারগুলো চালু নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সকল পদ্ধতি অনুসরণ করে করোনা পরীক্ষা করার জন্য বুথ তৈরি করে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হয়রান হয়ে পড়েছেন সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ রাতে উন্মুক্ত স্থানে নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে একটি প্রতিষ্ঠানকে করোনা পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিমানবন্দরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বেবিচকের শীর্ষ এক কর্মকর্তার ইচ্ছে অনুযায়ী স্থাপিত পাঁচটি পরীক্ষাগার চালুর বিষয়ে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের দায়িত্বশীল দপ্তরগুলোর নির্দেশনা রাখছেন না বরং গায়ের জোরে স্থাপিত পরীক্ষাগারগুলোর কার্যক্রম চালু আটকে রেখে একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করোনা পরীক্ষা শুরু করেছেন। যেটি ওই কর্মকর্তার আর্শীবাদপুষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। নাম হল- ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

সূত্র মতে, সোমবার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি ফ্লাইট রয়েছে। এজন্য দুপুরে বিমানবন্দরে স্থাপিত ছয়টি পরীক্ষাগারের সংশ্লিষ্টদের খুদে বার্তা পাঠানো হয়। ওই বার্তা অনুযায়ী সন্ধ্যার পর যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। খুদে বার্তায় ফ্লাইটের ৬ ঘণ্টা আগে যাত্রীরা উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা করবেন বলেও জানানো হয়। কিন্তু বিকেলেই সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে দেয়া হয়। বেবিচকের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার আর্শীবাদপুষ্ট প্রতিষ্ঠানে যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা করার জন্য ফন্দিফিকির শুরু করেন।

বিমানবন্দর সূত্র আরও জানায়, গত শনিবার ও রোববার দুইদিন বিমানবন্দরে স্থাপিত ছয়টি পরীক্ষাগারে টেস্ট রান করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) যাচাই করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠায় বেবিচক। যেটি রোববার রাতে চলে আসে। কিন্তু আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসওপি যাচাইয়ের ফল জানানো হয়নি। বেবিচকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আর্শীবাদপুষ্ট প্রতিষ্ঠান ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বার্থের জন্য অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিতেই এমন লুকোচুরি করা হয় বলে অভিযোগ।

পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তাসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকলেও বিমানবন্দরে উন্মুক্ত স্থানে করোনার নমুনা সংগ্রহ করছে একটি প্রতিষ্ঠান। ছবি নিজস্ব

এর আগে বিমানবন্দরে পরীক্ষাগার স্থাপনে বেবিচকের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অসহযোগীতার অভিযোগ পাওয়া যায়। একবার বহুতল কার পার্কিংয়ের ছাদে আরেকবার বিমানবন্দরের ভেতরে পরীক্ষা ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত দিয়ে বিলম্ব করা হয়। এছাড়া নতুন নতুন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয় পরীক্ষাগার স্থাপনে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। পরীক্ষাগার সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকলেও দফায় দফায় বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও বেবিচকের অসহযোগীতা ও সমন্বয়হীনতা এবং অহেতুক বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে তৈরি হয় জটিলতা। এসব কারণে বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও বেসামরিক বিমানমন্ত্রীসহ সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। তারা পরিদর্শনে গিয়ে দ্রুত পরীক্ষাগার স্থাপনে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগীতা করতে নির্দেশ দেন।

এদিকে বিমানবন্দরে দ্রুত করোনার পরীক্ষাগার চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকার পরও ল্যাব স্থাপন কার্যক্রমে অগ্রগতি না থাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেন প্রবাসী কর্মীরা। পরে এ বিষয়ে আবারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু বেবিচক এসবের তোয়াক্কা না করে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আর্শীবাদপুষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই কাজ দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়। শেষ পর্যন্ত তারাই জয়ী হোন। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেবিচকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে পরাজিত হয়। রাতে ওই কর্মকর্তার আর্শীবাদপুষ্ট প্রতিষ্ঠানেই উন্মুক্ত স্থানে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়। আর অন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ এক মাসের ওপর ধরে প্রস্তুতি ও শ্রম দিলেও তাদের কোন মূল্যায়ন দেয়াই হয়নি। তারা নিরাপত্তাসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে হাত ঘুটিয়ে বসে আছেন আর তাদের সামনেই পরীক্ষা করছে বেবিচকের এক কর্মকর্তার আর্শীবাদপুষ্ট প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা একে অরাজক পরিস্থিতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, পরীক্ষাগার স্থাপনের পর বেবিচক চেয়ারম্যান এবং বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা টেস্ট রানসহ যেসব পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সবগুলো পূরণ করা হয়েছে। স্থাপিত ল্যাবগুলো শতভাগ প্রস্তুত রয়েছে। এখন পরীক্ষাগার চালুর জন্য প্রয়োজন শুধু বেবিচকের অনুমতি। সেটি তারাই বলতে পারবেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার শর্ত আরোপ করে গত আগস্টে। কিন্তু বিমানবন্দরে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় এরপর থেকে দেশটিতে যেতে পারছেন না প্রবাসীরা। এরমধ্যে প্রবাসী কর্মীদের কারও কারও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারা এখনো প্রতিদিন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এসে ভিড় করছেন।

এরই মধ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের করোনা পরীক্ষাগার স্থাপনের সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এগুলো হলো- আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্টেমজ হেলথকেয়ার (বিডি) লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড এবং গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড। তবে ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা না মেনেই যাত্রীদের করোনা পরিক্ষা শুরু করেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমআর/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত