ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত শেখের কিল্লায় নেই মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন

  লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১২:৪১  
আপডেট :
 ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১২:৪৬

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত শেখের কিল্লায় নেই মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন
ছবি: প্রতিনিধি

‘পাশে ভুলুয়া নদীর জেগে ওঠা বিশাল চর। তবুও খোলা আকাশের নিচে মেঘনাপাড়ের ভূমিহীন মানুষের দুর্ভোগ অন্তহীন। এমন খবর পেয়ে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছায় ছুটে আসেন “বঙ্গবন্ধু”।

ওইদিন নিজে মাটি ভরাটে অংশ নিয়ে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য ‘গুচ্ছগ্রাম’ নামে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন জাতির জনক। সেখানে মাটির মধ্যে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সেই থেকে ওই স্থানটি লোকমুখে ‘শেখের কিল্লা’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ‘শেখের কিল্লা’কে ঘিরে মানুষের কত আবেগ, কত স্মৃতি! শেখের কিল্লায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি অবিস্মরণীয় করে রাখতে ওই স্থানে মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ সংবলিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্বপ্ন কমপ্লেক্স’ তৈরি এখন সময়ের দাবি।

শেখের কিল্লার ওই সমাবেশের প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল হাশেম, আব্দুল মালেক বাচ্চু। সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে অবহেলিত রামগতির গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। গুচ্ছগ্রামের এ মাটিতে বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন পড়েছিল ৪৯ বছর আগে। কিন্তু এখনো সে স্মৃতি হাতড়িয়ে বেড়াই। বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠতেই চোখ ঝাপসা হয়। যেখানে তিনি মাটি ফেলছিলেন, সেখানে খুঁজি তার স্পর্শ, তার পদচিহ্ন।

তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ওই দিনের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ। তাদের কথা অনুযায়ী শেখের কিল্লায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সমাবেত কৃষক শ্রমিক জনতার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘দেশ আমাদেরকেই গড়তে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে দেশ গড়া ও অর্থনৈতিক মুক্তি আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে বঙ্গবন্ধু কোদাল দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা তৈরির কাজ উদ্বোধন করেছিলেন। গণমানুষের অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাশ্রমে ওই দিন নির্মাণ হয়েছিল ১৫ কিলোমিটার মাটির রাস্তা, যা এখন নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে রামগতির আলেকজান্ডার যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।

আব্দুল হাশেম বলেন, ‘শেখের কিল্লায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই স্মৃতি ধরে রাখতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কোনো স্মৃতি স্মারক গড়ে না তুললে, তরুণ প্রজন্ম কীভাবে জানবে এখানে শেখ মুজিবের পদধূলি জমে আছে?

ছবি: প্রতিনিধি

স্থানীয় ও এলাকাবাসী জানায়, ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নে ৫৯০ একর জমিতে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু। ওই স্থানে তিনি নিজ হাতে মাটি ফেলে প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজের সূচনা করেন।

পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে মাটি ভরাটকৃত স্থানটি ‘শেখের কেল্লা’ হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পায়। এ প্রকল্পে দুইশ’ ভূমিহীন পরিবারের প্রত্যেককে আড়াই একর ও দশ পরিবারের প্রত্যেককে ৩০ শতাংশ করে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে ১৯৭২-৭৪ সালে বরাদ্দ পাওয়া পরিবারগুলো এ স্থানে তাদের বসতি গড়েন। এ

ছাড়াও এখানে সম্প্রতি দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৮০টি পরিবারকে ৮ শতাংশ করে জমি ও ঘর দেয়া হয়। বর্তমানে গুচ্ছগ্রামে অন্তত ছয়শ’ পরিবারের ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ বসবাস করছে। এখানে খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, বাজার, কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল-মাদরাসা ও প্রদর্শনী খামারের জন্য আলাদাভাবে জমি বরাদ্দ দেয়া আছে। এছাড়া ২৫টি পুকুর রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, শেখের কিল্লায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৩ সালে নামফলক স্থাপন করে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র (ডরপ)। এরপর ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্মৃতি ইতিহাস রক্ষা কমিটি’ গড়ে তোলে স্থানীয় গ্রামবাসী। ডরপ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আব্দুল মালেক, চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবুল কালাম, নতুন প্রজন্মের আলাউদ্দিনসহ অনেকে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি স্থানটি পরিদর্শন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্মৃতি স্তম্ভ’ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। কিন্তু স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ঘোষণার দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই।

বঙ্গবন্ধুর সেদিনের জনসভার অন্যতম নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণকারী ডরপ এর নির্বাহী পরিচালক এএইচএম নোমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বেচ্ছাশ্রম, উৎপাদন ও গ্রামোন্নয়ন ফলে রামগতিতে সয়াবিন, বাদাম ও আলু উৎপাদন এলাকা হিসাবে পরিচিতি, যা এখন ‘সয়াবিন জেলা লক্ষ্মীপুর’।

একইভাবে গ্রামোন্নয়ন মডেল হিসেবে এ রামগতিতেই বিশ্বগ্রাম (১৯৭২-৭৩) গুচ্ছগ্রাম (১৯৮৫-৮৬) সালে প্রতিষ্ঠা হয়। অপার সম্ভাবনার মধ্যেও আমরা হতাশ যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত শেখের কিল্লার স্মৃতি রক্ষায় ৪৯ বছর পার হয়ে গেলেও প্রকৃত কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত