ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৫৬

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন
ছবি: প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ে পানির নিচে তলিয়ে গেছে আগাম আলু চাষিদের স্বপ্ন। টানা দুইদিন বৃষ্টির কারণে ডুবে গেছে আগাম আলু রোপণ করা জমিগুলো। চাষিরা বলছেন, গত এক সপ্তাহর মধ্যে যারা আলুর বীজ রোপণ করেছিল তারা বেশ ক্ষতির আশংঙ্খায় রয়েছে।

সদর উপজেলার আকচা এলাকার বিভিন্ন আলু ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, আগম রোপণ করা আলুর সবগুলো ক্ষেতই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিটি জমিতেই চাষিরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ডুবে যাওয়া আলু তুলতে ব্যস্ত। যদিও এখনি জমি থেকে আলুর বীজ তুলে ফেলার প্রয়োজন মনে করছে না জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

ঠাকুরগাঁও কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এবার ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু রোপণ করা হয়েছে। দুইদিনে জেলায় বৃষ্টির পরিমান ৬৫.৬ মিলিমিটার। জেলার প্রায় ২৫৫ হেক্টর জমি আক্রান্ত অবস্থায় আছে।

তলিয়ে যাওয়া ক্ষেত থেকে আলু তুলতে থাকা আজমতকে দেখা যায়, ছেলেকে সাথে নিয়ে আলু তুলে তুলে একটি ঝুড়িতে রাখছেন। তার সাথে কথা হলে জানান, পানির নিচে থাকলে আলুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। কিছুদিন আগেই রোপণ করা হয়েছে। এখনই তুলতে হচ্ছে। তিনি বললেন, আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেলে। জানি না কিভাবে মহাজনের ঋণ শোধ করবো।

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মনসুর মিঞা। তিনি এবার ২ একর জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, এবারতো আলুতে অনেক লোকসান হয়েছে। তাই আগাম আলু চাষ করে কিছুটা লোকসান ঘোচানোর সপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু সব স্বপ্ন পনিতেই ডুবে গেলো।

কথা হয় আলুচাষি ফারুখ মোদীর সাথে। তিনি বলেন, প্রতিবছর আলুর মৌসুমে অধিক লাভ পাবার আশায় আমরা এ এলাকার আলুচাষিরা আগাম জাতের আলুর বীজ লাগাই। গত বুধবার সকালে ৪০ শতক জমিতে রোমানা জাতের হাইব্রিড আলুর বীজ লাগিয়েছি। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আজ জমি থেকে আলুর বীজগুলো তুলতে না পারলে আলুগুলো সব পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে।

আকচা গ্রামের আলুচাষিদের দেয়া তথ্যমতে, এ গ্রামের প্রায় ৩০ জন চাষির প্রত্যেকেই সর্বনিম্ন ৮/১০ বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন। আলুচাষিদের মধ্যে কামাল ১৪ বিঘা, মাজেদ উদ্দিন ১২ বিঘা, সোহেল রানা ১২ বিঘা, কমেত সাকু ১২ বিঘা, জাকের হোসেন ১১ বিঘা, আলাউদ্দিন ১০ বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন। এছাড়াও জেলার অন্যান্য এলাকাতেও একই সমস্যা চোখে পড়েছে।

আলুচাষি কামাল বলেন, এবার আমি ১৪ বিঘা জমিতে ৫৬ বস্তা আলুর বীজ লাগিয়েছি। খরচ পড়েছে প্রায় ৯৮ হাজার টাকা। সার, শ্রমিক খরচ ও জমি চাষ খরচ প্রায় ৯৭ হাজার টাকাসহ সব মিলে শুধু আলুবীজ লাগাতেই প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দুইদিনের টানা বৃষ্টিতে আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেলো।

ঠাকুরগাঁও কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হাসেন জানান, বেশি লাভের আশায় প্রতি বছরই এ জেলায় আগাম আলুর চাষ হয়। টানা দুইদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে রোপণ করা বেশকিছু জমির বীজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি নেমে গেলে এর পরিমান বের করা সম্ভব হবে।

এমন অবস্থায় (বৃষ্টি চলাকালীন) ক্ষেত থেকে আলু না তুলে এমনিতেই রেখে দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আবু হাসেন জানান, আলুগুলো তুলেও কোনো লাভ হবে না। তুলে রেখে দিলেও সেগুলো পঁচে যাবে। বৃষ্টি কমার পর অবস্থা অনুযায়ী ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ানাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত