ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

নানকের পরিচয়ে চাকরির সুপারিশ করে তারেক গ্রেপ্তার

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৫৫

নানকের পরিচয়ে চাকরির সুপারিশ করে তারেক গ্রেপ্তার
ছবি- প্রতিনিধি

২০০৬ সালে কারারক্ষী পদে নিয়োগ পায় মো. তারেক সরকার। ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার কারণে চাকুরিচ্যুত হয় সে। বর্তমানে সে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নাম ব্যবহার করে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে তদবির বাণিজ্য করে। এসব কারণে কারাভোগ ও করতে হয়েছে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের পরিচয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে ফোন করে চাকরির সুপারিশ করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক এক কারারক্ষী।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় পল্টন মডেল থানারে পলওয়েল সুপার মার্কেট তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ডিভাইস ও সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন।

তিনি বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক পরিচয় দিয়ে একটি নম্বর থেকে গ্রেপ্তার তারেক মোবাইলে ফোন করে। প্রতারক চাকরির বিষয়ে সিনিয়র সচিবকে জোর সুপারিশ করে। বিষয়টি সচিবরে সন্দেহ হলে তিনি ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

মো. ফারুক হোসেন বলেন, ডিএমপি’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রযুক্তির মাধ্যমে ফোন নম্বরের খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি জাহাঙ্গীর কবির নানকের নম্বর নয়। এটি একটি প্রতারক চক্রের নম্বর। উক্ত প্রতারক আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যর মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে তার রাজনৈতিক ও সামাজিক সুনাম ক্ষুন্ন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।

গ্রেপ্তারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার তারেক গত ২১ নভেম্বর নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন ইনডেক্স প্লাজা মার্কেটে অবস্থিত এক্সচেঞ্জ গ্যালারী নামক মোবাইল ফোনের দোকান থেকে অপ্প এ-৩৩ মডেলের একটি ফোন কেনে। ফোনটি কেনার সময় সে কৌশলে ঐ দোকান থেকে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা একটি রবি নম্বর সম্বলিত সিমকার্ড নিয়ে যায়। ওই মোবাইল ফোন এবং নম্বর ব্যবহার করে সে গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে আওয়ামীলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম পরিচয় ব্যবহার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে ফোন করে।

উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন আরও বলেন, গ্রেপ্তার প্রতারক নরসিংদী জেলা জাতীয়তাবাদী প্রচারদলের সদস্য সচিব। নিজেকে সে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকনের এপিএস বলে পরিচয় দিতো। সে ২০০৬ সালে কারারক্ষী পদে নিয়োগ পায় এবং ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার কারণে চাকুরিচ্যুত হয়। বর্তমানে সে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নাম ব্যবহার করে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে তদবির বাণিজ্য করে।

তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজ পত্র, নিয়োগ প্রতি আর্থিক লেনদেনের হিসাব ইত্যাদি পাওয়া গেছে।

ডিএমপির এই মিডিয়া কর্মকর্তা বলেন, এর আগে গ্রেপ্তার তারেকের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী মডেল ও টাঙ্গাইল সদর থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুটি মামলাসহ ডিএমপি’র গুলশান থানায় গত বছরের ২১ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা একটি মামলা হয়। এই মামলার এজাহার থেকে জানা যায় বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নাম পরিচয় ব্যবহার করে তৎকালীন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জনাব মো. মোমিনুর রহমান মামুনকে হোয়াটস অ্যাপে ফোন করে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য সুপারিশ করে। এই মামলায় ৬ মাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়।

বিএনপি নেতার পিএস পরিচয় ব্যবহার করার বিষয়ে তারেকের সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তের প্রয়োজনে যদি পিএস পরিচয়ের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে ওই বিএনপি নেতাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এমনকি তার কারারক্ষী পদে চাকরি নেয়ার সময় কোনও সুপারিশ ছিল কি না সেই বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফজেড/এএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত