ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

ব্যক্তিগত টাকায় স্কুলে এসি লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকাদান

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ২২:০৬

ব্যক্তিগত টাকায় স্কুলে এসি লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকাদান
ছবি- প্রতিনিধি

পাবনার বেড়া উপজেলার অনেক এমপিওভুক্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে করোনা টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সেই বেড়া উপজেলারই শুধু রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত একটি নন-এমপিও হাইস্কুল ‘কাশীনাথপুর বিজ্ঞান স্কুল’ এর পরিচালকরা নিজেদের ব্যক্তিগত টাকায় সব শ্রেণিকক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেই গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইউনিয়ন সদরের বাইরে স্থাপিত তাদের এ স্কুলটি ফলাফলের দিক থেকেও পাবনা জেলায় শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে।

কাশীনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমান জানান, পাবনার বেড়া উপজেলার ইউনিয়ন সদরেরও বাইরে তাদের স্কুলটি স্থাপিত। এ স্কুলে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির মোট শিক্ষার্থী ৭ শতাধিক। এ বছরও তাদের স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৩৯ জন শিক্ষার্থী। তারা শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ রাখেন না। তাদের নানাধরণের সৃজনশীল ও মানবিক কাজে সম্পৃক্ত করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে।

তিনি জানান, তাদের শিক্ষার্থীদের কোভিড- ১৯ টিকা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে টিকা দেয়ার কথা জানিয়েছে তাদের। স্কুলে এসি না থাকলে শিক্ষার্থীদের উপজেলা সদের গিয়ে টিকা নেয়ার কথা জানান হয়। এ বিষয়টি জানার পর প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা নিজেদের টাকা দিয়ে এসি কিনে খুব দ্রুত কাজটি কাজটি সম্পন্ন করেছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দূরে গিয়ে টিকা নিতে হয়নি। যাতায়াতের ভোগান্তি যেমন হয়নি তেমনি এসির জন্য তাদের কোনরকম টাকা দিতে হয়নি।

বেশকিছু ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কথা হয় এ প্রতিনিধির। ১০ম শ্রেণির ছাত্রী প্রজ্ঞা পারমিতা অর্থি জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ এয়ার কন্ডিশনার কিনতে তাদের কাছ থেকে একটি টাকাও নেননি। তারা নিজ বিদ্যালয়ে কোন টাকা দেয়া ছাড়াই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণিকক্ষে বসে টিকা নিতে পেরেছেন।

দশম শ্রেণির ছাত্র ফারহান উৎস জানায়, তাদের দূরের কোনো জায়গায় যেতে হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষই এসি কিনে বিদ্যালয়ে টিকা দেবার ব্যবস্থা করেছেন।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি মোখলেছুর রহমান মুকু জানান, দূরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে অন্যান্য অভিভাববকরাও খুশি।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ডা. আমিরুল ইসলাম সানু জানান, জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের এ স্কুলটি শুরু থেকেই ব্যতিক্রমী। এখানকার শিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে অসহায়দের সহায়তা করে, শীতার্তদের বাড়ি গিয়ে শীতবস্ত্র পৌঁছে দেয়। আবার ফলাফলে দিক থেকে বিদ্যালয়টি জেলার অন্যতম একটি সেরা স্কুল। এ স্কুলটি নন-এমপিও, তবে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।

তিনি জানান, এ বিদ্যালয়ের ৮ জন পরিচালক নিজেদের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়টিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করেছেন। এসি যন্ত্রগুলো টিকা দেয়ার জন্য দুইদিন ব্যবহার হবে। তবে আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আর প্রচণ্ড গরমে কষ্ট পেতে হবে না। তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে পাঠ নিতে পারবে। টিকাদান উপলক্ষে এ কাজটি করতে পেরে তারা আনন্দিত বলে জানান।

পাবনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও পাবনা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আলহাজ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস জানান, বেড়া উপজেলার অনেক এমপিওপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান টিকার জন্য টাকা আদায় করে সমালোচিত হয়েছেন। আবার বিদ্যালয় থেকে দূরে গিয়ে টিকা নিতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইনে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের কষ্ট হয়েছে বেশি। সেই বেড়া উপজেলারই নন-এমপিও কাশীনাপুর বিজ্ঞান স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খবির উদ্দিন বলেন, উপজেলা সদর থেকে দূরে স্থাপিত এ স্কুল। যমুনা তীরবর্তী দুর্গম চরাঞ্চল থেকেও শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়াশোনা করে। সেখান থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা নেয়ার ক্যাম্পের দূরত্ব ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার। সেখানে আসা যাওয়া করতে দীর্ঘ পথ হাঁটার পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যাতায়াতের পেছনেও খরচ হতো। আবার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হতো। সেখানে বিদ্যালয় কতৃপক্ষর এমন উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী জানান, উপজেলা সদরের বাইরে অবস্থিত নন-এমপিও কাশীনাথপুর বিজ্ঞান স্কুল একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার মানও উন্নত। বিদ্যালয়টির পরিচালকরা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে তাদের সুনামটি ধরে রেখেছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত