ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

মিলছে না বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি, করতে হচ্ছে ভিক্ষা

  পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:২৬  
আপডেট :
 ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:২৩

মিলছে না বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি, করতে হচ্ছে ভিক্ষা
ছবি: প্রতিনিধি

বৃদ্ধ মোস্তফা ভূইঁয়া কখনো ভিক্ষা কিংবা কখনো জেলের কাজ করে চলছেন। তার দাবি, তিনি দেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত অনেক বার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্না দিয়েও মেলেনি বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সদস্যরাও।

পটুয়খালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হলদিবাড়িয়া গ্রামের ৭১ বছরের এ বৃদ্ধ ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ভারতের বগাপার ট্রেনিং সেন্টারে বন্ধুক ও বোমার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে নোয়াখালীতে দুই মাস যুদ্ধ করেন। সেখান থেকে চট্টগামের পাহাড়ি এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাহাড় থেকে পড়ে আহত হন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোস্তফা ভূইঁয়া চলে আসেন তখনকার নিজ এলাকা চট্টগ্রামের সন্দীপ উপজেলার কাঠগড় ইউনিয়নে। নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে ২০ বছর আগে চলে আসেন কলাপাড়ায়। পরে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হলদিবাড়িয়া গ্রামের নুরুন নাহার নামের এক প্রতিবন্ধী নারীর সঙ্গে ঘর বাধেন। বর্তমানে স্ত্রীসহ পাখিমারা বাজার সংলগ্ন মোসলেম সিকদারের বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে পার করছেন মানবেতর জীবন। শরীর সুস্থ বোধ করলে করেন জেলের কাজ। আবার যখন অসুস্থ থাকেন তখন বেচেঁ থাকার একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায় ভিক্ষাবৃত্তি। ভিক্ষাবৃত্তিতে না নামতে পারলে অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাতে হয়।

নিজ অসহায়ত্বের কথা বেশ কয়েকবার জনপ্রতিনিধিদের জানালেও আজও তার ভাগ্যে জোটেনি বীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ কিংবা সরকারি কোনো সহয়তা।

টাকা পয়সা নয় মরার আগে মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি চান উল্লেখ করে বৃদ্ধ মোস্তফা জানান, দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ভারতে ট্রেনিং নিতে যান তিনি। সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর নাসীমের নেতৃত্বে তিনি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, মার একফোর রাইফেল, লাইট মেশিন গান, এসএস এলার, হ্যান্ড গ্রেনেড এসএস থার্টি সিক্স, এনটি ট্যাং মাইন ও গাছকাটা বারুদসহ প্রায় ১৫টি অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীতে দেশে ফিরে এসে চট্টগ্রামের ৪ নম্বর সেক্টরের মেজর শামিমের নেতৃত্বে দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা কুমিরা রেলপথে মাইন পুঁতে রাখার দায়িত্ব পালন করেন। সেদিন তাদের নেতৃত্বদানকারী মেজর শামিম পাকিস্তানিদের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। ওই দিনই পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে নিচে আছড়ে পড়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পান মোস্তফা ভূইঁয়া।

কলাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও প্রবীণ সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ রানা বলেন, ২০১৪ সালে যাছাই-বাছাই শেষে মোস্তফা ভূইঁয়াকে তালিকাভুক্ত করার জন্য আমরা কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড থেকে সুপারিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আজও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের গাফিলতিতেই আজ মোস্তফা ভূইঁয়ার এমন দশা।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের মুক্তিযোদ্ধা মধু মিয়া বলেন, আজ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে তার অবদান রয়েছে। আমরা তাকে নিয়ে বার বার প্রশাসনের কাছে গিয়েছি কিন্তু কোনো ফল পাইনি।

তবে এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়ে কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রাকিবুল আহসান বলেন, মোস্তফা ভূইঁয়ার সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া তিনি যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন তাদের সঙ্গেও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সদস্যরা কথা বলেছেন। এখনো যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের সকল কাহিনী তার মনে আছে। আমার উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে একটি দোকান এবং একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এছাড়া তাকে গেজেটভুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা করা হবে। আশা করছি, খুব শিগগিরই তার সকল দু:খ দুর্দশা ঘুচে যাবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/পিএল

  • সর্বশেষ
  • পঠিত