ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

"আব্বু অসুস্থ, বাধ্য হয়েই ধান কাটছি"

  গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ মে ২০২২, ২৩:২৯

"বাবা অসুস্থ। অনেক কষ্টে দুইজন শ্রমিক পেয়েছি। তাই বাধ্য হয়ে তাদের সাথে আমিও ধান কাটার কাজ করছি। ধান পঁচে গেলে সারা বছর না খেয়ে থাকতে হবে।" বাংলাদেশ জার্নালের এ প্রতিবেদককে এমনটাই জানায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার চাপাদহ পাঁচজুম্মা গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ১০ বছরের শিশু সন্তান সজিব আহম্মেদ। সজিবের মতো এমন অনেকেই শ্রমিক না পেয়ে নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন ধান কাটা মাড়াইয়ের উপকরণ।

কয়েকদিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর শ্রমিক সংকটে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন গাইবান্ধার বোরো চাষিরা। একদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে ধান কাটা মাড়াইয়ে শ্রমিক সংকট। এ অবস্থায় পাকা ধান ঘরে তুলতে না পেরে চোখের সামনেই পচে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল।

সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা, খোলাহাটি, লক্ষ্মিপুর, মালিবাড়ি এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গাসহ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে থৈ থৈ পানি। কোথাও আবার হাটু পানি। এরইমধ্যে ধান কাটছেন কৃষকরা। মাঠভরা পাকা ধান পড়ে আছে পানির নিচে। গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ, আর শ্রমিক সংকটের কারণে সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। ঝড়ো বাতাসে পাকা, আধাপাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে অধিকাংশ এলাকার সব ধান ডুবে গেছে পানির নিচে। রোদ না থাকার ফলে মাড়াই করা কাঁচা ধানের আটি (খড়) শুকাতে পারছেন না তারা। ফলে গো-খাদ্য নিয়েও দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। এদিকে পাকা ধান বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে হেলে থাকায় চিতা ধরে নষ্ট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন উদ্বিগ্ন কয়েকজন কৃষক।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউপির চাপাদহ গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষক মমতাজ মিয়া বলেন, "আকাশত মেঘ দেখলেই, খালি আল্লাহ আল্লাহ করি। কয়েকদিনের ঝরিতে (বৃষ্টি) ক্ষ্যাতত পানি জমি গেছে। এক মন ধান ব্যাচি একটা কামলা (শ্রমিক) পাওয়া যায় না। চিন্তা করচ্যি, আগামীবার থাকি আর ধানই আবাদ করবেরনম"।

লক্ষ্মিপুর ইউনিয়নের বালা আটা গ্রামের বৃদ্ধা আজিরন বেগম ও তার মেয়ে নাসিমা আক্তার ধান কেটে পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে আসছেন। অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তারা বলেন, "দুইদিন ধরে কামলা (শ্রমিক) খুঁজেছি। পাইনি। যদিও পাওয়া যায়, তাও আবার মজুরি ৭'শ টাকা চায়। বৃষ্টির পানিতে পাকা ধান ডুবে গেছে। নিরুপায় হয়ে মা-মেয়ে মিলে ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছি। পেট তো বাঁচাতে হবে তাই না?"

সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, "২৮ শতক জমির ধান ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কেটে নিয়েছি। সেই ধান ট্রাক্টর দিয়ে বাড়িতে আনতে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এরপর মাড়াই বাবদ খরচ হয়েছে ৭০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, এই ২৮ শতক জমি তৈরি করতে প্রথমে হাল ও পানি বাবদ খরচ হয় ৫০০ টাকা। এরপর ৩ কেজি ধানের বীজ বাবদ ৭৫০টাকা, রোপণ বাবদ ২ হাজার ২০০ টাকা, পানি সেচ বাবদ ২ হাজার ১০০ টাকা, ফসল নিড়ানি বাবদ ১ হাজার টাকা এবং সার ও কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

মোট খরচ বিঘায় ১২ হাজার ৭৫০ টাকা। ধান আসবে আনুমানিক ১৫ মন। ২৮ জাতের এই ধানের বর্তমান মূল্য মণ প্রতি ৭০০ টাকা হলে ১৫ মণ ধানের দাম দাঁড়ায় ১০হাজার ৫০০ টাকা।

চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়েছে। এতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৪১ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন। তবে ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে কিছু ফসল নষ্ট হলেও সার্বিক ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, মাঠের ৯০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা প্রায় শেষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক জায়গায় পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে। আমরা সেগুলো হারভেস্টার মেশিন দিয়ে দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছি। আবহাওয়া খারাপ থাকায় কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন। আগামী আরও কয়েকদিন আবহাওয়া খারাপ থাকতে পারে।"

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত