ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

বাতাসে লাশের গন্ধ, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েও জ্বলছে চট্টগ্রাম

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২২, ২৩:৪৪  
আপডেট :
 ০৬ জুন ২০২২, ১০:০৮

বাতাসে লাশের গন্ধ, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েও জ্বলছে চট্টগ্রাম
২৪ ঘণ্টা পেরিয়েও কিছু কন্টেইনারে অনবরত আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ছবি- সংগৃহীত

পোড়া লাশের গন্ধ, আহতদের আর্তনাদ আর স্বজনহারাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের বাতাস। এরই মধ্যে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েও নিস্তার দেয়নি সীতাকুণ্ডের আগুন। এখন পর্যন্ত অনবরত আগুন জ্বলে যাচ্ছে বিএম ডিপোর অনেক কন্টেইনারে, এমনকি আবারও বিস্ফোরণের আশঙ্কাও রয়েছে কন্টেইনারগুলোতে। এদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাশের মিছিল।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৯ ফায়ার সার্ভিসকর্মীসহ ৪৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও আগুনে পুড়ে দুগ্ধ আর আহত হয়েছ্যেন আরও চার শতাধিক। ফায়ার সার্ভিস কর্মী, পুলিশ সদস্যসহ আহতের তালিকায় নাম লিখিয়েছে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দারাও।

রোববার বিকেল পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

শনিবার (০৪ জুন) রাত ১১ টার দিকে লাগা আগুন রোববার (০৫ জুন) রাত ১১ টা পার হলেও নিস্তার দেয়নি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট নিরলস কাজ করে যাচ্ছে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে। সকাল থেকেই ফায়ার সার্ভিসের সাথে যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরাও এগিয়ে আসে তাদের সহায়তায়। এতো মানুষের আপ্রাণ চেষ্টাও কাজে লাগেনি কন্টেইনারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। মাঝে মাঝে কিছু সময়ের জন্য আগুনের মাত্রা কিছুটা স্তিমিত হতে দেখা গেলেও পরে আবারও তা দাউদাউ করে জ্বলে উঠতে দেখা যায়।

কন্টেইনারগুলোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকায় গতকাল রাত থেকেই একের পর এক বিস্ফোরণ হতে থাকে কন্টেইনার। এছাড়াও অন্য আরও কেমিক্যালের উপস্থিতির কারণে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।

আরও পড়ুন: সন্ধ্যার পর ফের বাড়তে শুরু করে আগুনের মাত্রা

ডিপোর গেটের সামনে ও চট্টগ্রাম মেডিকেলে ক্রমাগত ভিড় করেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের স্বজনরা। নিজেদের প্রিয়নজনকে খুঁজে ফিরছে তাদের দু চোখ। কেউ কেউ আবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্বজনকে না পেয়ে ডিপোর সামনে এসে অপেক্ষা করছেন। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশ।

সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আরবান সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিমের প্রধান আরিফুল ইসলাম হিমেল বলেন, সকাল থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এখনও পুরোপুরি নেভানো যায়নি। কিছু কন্টেইনারে এখনও আগুন জ্বলছে। সেনাবাহিনীর প্রায় ২০০ জনবল এখানে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মী নিহত

এদিকে আগুনে দগ্ধ আর আহতদের নিরলস চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আর স্বাস্থ্যকর্মীরা। গতকাল রাত থেকেই নিঃস্বার্থ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ।

কন্টেইনার ডিপোর আগুনের ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিএম ডিপোর মালিক কর্তৃপক্ষ। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দেয়া হবে বলে জানআনো হয় তাদের পক্ষ থেকে।

আরও পড়ুন: আগুন নেভেনি ২০ ঘণ্টায়ও, মৃত বেড়ে ৪৯

অন্যদিকে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিমকে। এতে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মো. আনিসুর রহমান।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত