ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

কুসিক নির্বাচন: আড্ডায়-চায়ের দোকানে নানা আলোচনা

  মোহাম্মদ শরীফ, কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২২, ১৯:৩২  
আপডেট :
 ১৬ জুন ২০২২, ২০:০০

কুসিক নির্বাচন: আড্ডায়-চায়ের দোকানে নানা আলোচনা

শেষ হলো কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। নাটকীয়তা আর উত্তেজনার মধ্যে শেষ হওয়া এই নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ ও গুঞ্জন। নির্বাচনের পরের দিনে সুনসান নিরবতা চলছে। তবে সম-মতাদর্শীদের সাথে চায়ের দোকান, পাড়া-মহল্লা আর আড্ডাস্থলে সিটি নির্বাচনের ফলাফল ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে রিফাতের জয় কঠোর প্রতিযোগিতা ও উত্তেজনার সর্বোচ্চে নিয়ে গেছে। গুঞ্জনে সাক্কুপন্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার শেষ চার কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল নিয়ে করছেন সমালোচনা। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে ফলাফল ঘোষণা কক্ষে নৌকার সমর্থকদের সাক্কুর ওপর হামলার ঘটনার নিন্দাও চলছে সমানতালে।

এদিকে নিজ দলীয় ভোটের হিসেব কষছেন সরকারদলীয় অনেকে। নগরীর টিএনটি মসজিদের পাশে রনি মিয়ার চা দোকানে নৌকার এক সমর্থক বলেন, ‘২৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি আছে। যেভাবে প্রচারণা করেছে, সেই অনুপাতে ভোট দিলে নৌকার বাক্সে ভোট থাকতো এক লাখ। কিন্তু ভোট দেয়নি!’

অন্যদিকে ফলাফল মেনে নিয়ে চায়ের আড্ডায় সব প্রার্থীকেই নানান যুক্তিতে জয় দেখাচ্ছেন অতি উৎসাহীরা।

পাঁচ মেয়রপ্রার্থী মধ্যে হাতপাখার রাশেদুল ও হরিণ প্রতীকের বাবুল যথাক্রমে ভোট পেয়েছেন ৩০৪০ ও ২৩২৯ ভোট। প্রচারণায় না থাকলেও নিজের ‘মুখ পরিচয়’ তুলে ধরতে বাবুল নির্বাচনে এসেছেন বলে জানা গেছে। ২ হাজার ৩০০ ভোট প্রাপ্তিও তার জন্য বিশাল বলেও আলোচনা করছেন অনেকে।

নগরীর হোমিওপ্যাথিক কলেজের সামনের চা দোকানে বসে বাবুলের কথা টেনে আউয়াল মিয়া বললেন, ‘সে (হরিণ প্রতীকের বাবুল) এত ভোট পাওয়ার কথা না। হয়ত ঘোড়া মনে করে অনেকে ভোট দিয়ে দিছে! তবে সে মুখ-পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছে, এটাই তার জয়।’

‘নির্বাচন আসলেই প্রার্থীতা দেবে’ যেন এমনই হয়ে উঠেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নীতি। এবার হাতপাখা নিয়ে মাঠে ছিলেন রাশেদুল ইসলাম। নির্বাচনী পরিবেশ ভালো থাকায় যথেষ্ট প্রচারণা করতে পেরেছে দলটি। সহিংসতা ও বাধা ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করাকে তাদের বিজয় হিসেবে দেখছেন চা দোকানের সমালোচকরা!

তবে বাকি তিন মেয়রপ্রার্থী সাক্কু, রিফাত ও কায়সারকে নিয়ে শুরু থেকে ছিল আলোচনা। চায়ের আড্ডায় যার যার কৌশল থেকে নানা দিক বিবেচনায় এগিয়ে রাখছেন তাদের সমর্থকরা।

কুমিল্লা সিটিতে নতুন মুখ ছিলেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত কেউ আন্দাজ করতে পারেনি নির্বাচন করবেন কায়সার। কুমিল্লা মহানগরে বিএনপির দুই গ্রুপিং চিরচেনা। একটাতে নেতৃত্ব দেন সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, অন্যটায় সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুর রহমান ইয়াসিন। অর্থাৎ নগরে ইয়াসিন গ্রুপ ও সাক্কু গ্রুপ নামে পরিচিত।

বিগত দিনের কুমিল্লায় বিএনপির গ্রুপিংয়ের তিক্ততা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সরকারি দলের চেয়ে নিজেদের গ্রুপিংকে বড় শত্রু মনে করেছে তারা। যার প্রতিফলন ঘটেছে এবারের সিটি নির্বাচনে। সাক্কুকে থামাতে স্ত্রীর ছোট ভাই ও মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন ইয়াসিন। নির্বাচনে কায়সারের পরাজয় ও দলীয় পদ হারানো প্রায় শতভাগ শঙ্কা থাকার পরও নির্বাচনে করেছেন প্রার্থীতা।

এই বিষয়টি ইঙ্গিত মেলে কায়সারের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর তার বক্তব্যেও। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জনতাকে একটি সুবিধাবাদী শ্রেণীর নির্যাতন থেকে মুক্তি দিতে মাঠে এসেছি। সাক্কু হলো স্থানীয় সাংসদের (বাহাউদ্দিন বাহার) হাতিয়ার। নির্বাচনের জন্য যদিও আমার দলীয় পদ নাও থাকতে পারে।’

অনেকেই মনে করছেন, কায়সার মূলত মাঠে ছিলেন ‘সাক্কু হঠাও’ উদ্দেশ্য নিয়ে। সে হিসেবে অনেকেই তাকে বিজয় মনে করছেন।

এদিকে ফলাফল ঘোষণা করলেও সাক্কুর সমর্থকরা এখনো মনে করেন সাক্কু হারেনি, তাকে হারানো হয়েছে। আদালত পাড়ায় রিকশাচালক মতিন মিয়া চা দোকানে রাজনৈতিক আড্ডায় বৃহস্পতিবার দুপুরে টেবিল চাপড়ে বলেন, ‘১০১ একটা কেন্দ্রের রেজাল্ট দিয়া অফিসার( রিটার্নিং কর্মকর্তা) টয়লেটে যায়, ফোনে কথা বলে; তারপর এসে নৌকাকে ফল দিয়া দেয়। এটা কি আমরা বুঝিনা! আমরা কি কাঁচা মাছ খাই বড় হইছি!’

বিএনপি নেতা কবির আহমেদ বলেন, ‘আমরা হিসেব করেছি সাক্কু ভাই প্রায় ৯০০ ভোটে পাশ। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তার এক অদ্ভুত ফোনে সব পাল্টে গেল।’ এই হিসেবে সমর্থকদের কাছে এখনো বিজয়ী সাক্কু!

এদিকে বুধবার রাতে নির্বাচন কমিশনের ফলাফলে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী নৌকার আরফানুল হক রিফাত। তিনি আজ বিকেলে নগর উদ্যানে বঙ্গবন্ধু ম্যূরালে ফুল দেন।

প্রসঙ্গত, সিটি নির্বাচনে কায়সার ভোট পেয়েছেন ২৯ হাজার ০৯৯ ভোট, সাক্কু ৪৯ হাজার ৯৬৭ ও রিফাত ৫০ হাজার ৩১০ ভোট।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত