ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

চট্টগ্রামে পরিবহন সেক্টরে যুক্ত ১৫ হাজারের বেশি শিশু

  মনির ফয়সাল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২২, ১৮:৫৫  
আপডেট :
 ২৪ জুন ২০২২, ১৮:৫৭

চট্টগ্রামে পরিবহন সেক্টরে যুক্ত ১৫ হাজারের বেশি শিশু

জীবিকার তাগিদে দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুল ছেড়ে যোগ দিচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। জাতীয় শ্রম আইন অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রম বলে গণ্য হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, লেখাপড়ার খরচ দিতে না পেরে এবং সংসারের অসচ্ছলতার গ্লানি মা-বাবাকে বাধ্য করে তার সন্তানকে শ্রমে নিযুক্ত করতে।

চট্টগ্রামে পরিবহন সেক্টরে বর্তমানে ১৫ হাজারেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথে যুক্ত। হেলপার তথা অস্থায়ী ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছে ৭১.৯০ শতাংশ শিশু। পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ঝূঁকিপূর্ণ পরিবহন শ্রমে যুক্ত হয়েছে ৩৬.৬৯ শতাংশ শিশু। শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৯১.৪২ শতাংশ শিশু।

এছাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার ১২.৭২ শতাংশ শিশু। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ২৪.৫০ শতাংশ শিশু। টিকটক তৈরি করে ৬.৮৩ শতাংশ শিশু। মাদকাসক্ত ১১.২৪ শতাংশ শিশু এবং এতে দেখা যায় কন্যা শিশু নয় ছেলে শিশুদের মধ্যেও ১৭.১৬ শতাংশ বাল্যবিবাহের শিকার।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের ৩৫টি স্পটের ৩৩৮ জন শিশুর ওপর গবেষণা ও জরিপ চালিয়ে এমনই তথ্য পেয়েছে ‘ঘাসফুল’ নামে একটি উন্নয়ন সংস্থা।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পরিবহন সেক্টরে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের ওপর গবেষণা প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন ‘ঘাসফুল’র বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন।

ড. মনজুরুল উল আমিন চৌধুরী পরিবহন সেক্টরে শিশুশ্রম বিষয়ে ডিজিটালি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে পরিবহন সেক্টরে বর্তমানে ১৫ হাজারেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথে যুক্ত। হেলপার কাম অস্থায়ী ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছে ৭১.৯০% শিশু।

এছাড়া বিভিন্ন সূত্র জানায়, শিশু শ্রমিকেরা জাহাজ ভাঙা শিল্প, ঝালাই কারখানা, পুরান লোহালক্কড়ের দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত। এসব কাজে নিয়োজিত বেশিরভাগ শিশুই দৈনিক ৭ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে।

রঙ্গাজীব নামের একটি শিশুশ্রমিক জানায়, তার বাবা অসুস্থ। মা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে আয় করেন। তাতে তাদের চলে না। তাই এখানে কাজ করছে সে।

শিশুশ্রমিক রাকিব জানায়, তার বাবা নেই। সংসারে অভাবের কারণে কাজ করতে হয়। সারাদিন পরিশ্রম করে দিনশেষে মায়ের হাতে ৩০০-৩৫০ টাকা তুলে দেয় রাকিব।

এ বিষয়ে শিশুসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক এমরান চৌধুরী বলেন, শ্রমজীবী শিশুদের ব্যাপারে দেশের সচেতন নাগরিক এবং দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সরকার বা রাষ্ট্র সবকিছু দেখবে এই বলে নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে এড়িয়ে যাওয়া অবহেলার শামিল।

‘একটি শিশু যেখানে কাজ করে সেখানে তার কাজ করার অনুকূল পরিবেশ আছে কি না, শিশুটিকে সঠিক বেতন বা মজুরি দেয়া হচ্ছে কি না, অসুস্থ হলে শিশুটি ছুটি বা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছে কি না, ক্লান্ত হলে সে বিশ্রামের সুবিধা পাচ্ছে কি না, কাজের ফাঁকে বিনোদনের ব্যবস্থা আছে কি না, নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে কাজ করানো হচ্ছে কি না, গৃহকর্মী হলে তার খাবার ও থাকার জায়গা স্বাস্থ্যমত কি না; এসব কিন্তু বাসাবাড়িতে এসে কেউ দেখাশোনা করবে না। এগুলো দেখার মূল দায়িত্ব যে বাসাবাড়িতে শিশুটি কাজ করে তাদের এবং প্রতিবেশির।’

এমরান চৌধুরী আরও বলেন, শিশুশ্রম বন্ধে বা কমিয়ে আনতে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে অভিভাবক ও মালিকপক্ষকে সচেতন করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে সরকারকে। কঠোর পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে অভিভাবকরা কাজে নয়, নিজ নিজ শিশু সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হয়। সামান্য রুজি রোজগারের জন্য শিশুকে কাজে না পাঠিয়ে তাকে যদি লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করা যায় তা হবে মা বাবা ও শিশুটির ভবিষ্যতের জন্য উত্তম বিনিয়োগ। মা বাবার মধ্যে এ সচেতনতাবোধ জাগাতে সচেতন মানুষ রাখতে পারে প্রশংসনীয় ভূমিকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত