ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

পদ্মা সেতু উদ্বোধন: গোপালগঞ্জে আনন্দের বন্যা, আসবে আমূল পরিবর্তন

  গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২২, ১৮:৩৫

পদ্মা সেতু উদ্বোধন: গোপালগঞ্জে আনন্দের বন্যা, আসবে আমূল পরিবর্তন

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১২ জেলার স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে গোপালগঞ্জে বইছে আনন্দের বন্যা। একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন সবাই। এ সেতুর ফলে গোপালগঞ্জ জেলা ও বাসিন্দাদের জীবনে যোগাযোগ, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, চাকুরি, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেতে আমূল পরিবর্তন আসবে।

শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই ব্যবসা-বণিজ্যের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হবে এমন আনন্দে যেই আসছেন তাকেই মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন জেলা শহরের বাজার রোডের ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার সাহা। এছাড়া সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আলোচনা করছে পদ্মার সেতুর ভূমিকা নিয়ে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খুশি এ জেলার মানুষ। পদ্মা সেতুর কারণে চিকিৎসা, পড়ালেখা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হবে। ঢাকার সাথে গোপালগঞ্জে সড়ক যোগাযোগে ভোগান্তি কমে আসবে বলেও মনে করেন এ জেলার মানুষ।

কৃষি খাত: গোপালগঞ্জ জেলাকে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ করেছে কৃষিখাত। জেলার প্রায় দেড়লাখ হেক্টর জমিতে এ জেলার কৃষকেরা নানান ফসল উৎপাদন করেন। পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় কৃষকদের নিজস্ব ক্ষেতে ফলানো কৃষিপণ্য পদ্মা সেতু হয়ে পৌঁছে যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এতে কৃষকেরা তাদের ন্যায্যমূল্য পাবে।

স্বাস্থ্য খাত: পদ্মা সেতু চালু হলে গোপালগঞ্জের স্বাস্থ্য খাতে বড় ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতুর জন্য এ জেলায় রাজধানী ঢাকা থেকে কোন চিকিৎসক আসতেন না। রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার সময় ফেরিঘাটে সময় ব্যয় হওয়ার জন্য অনেক রোগী ফেরিঘাটে মারা যেতেন। পদ্মা সেতু চালু হলে এ জেলার মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই অল্প সময়ে ঢাকা পৌঁছাতে পারবে। নিতে পারবেন জরুরি স্বাস্থ্যসেবা।

পর্যটন খাত: এ জেলায় রয়েছে মহান স্বাধীনতার স্থাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল। ইতিমধ্যে সমাধিস্থলকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে স্থাপত্য শৈলীর নানান নিদর্শন। এছাড়া কবি সুকান্ত, সঙ্গীত শিল্পী অ্যান্ড্রু কিশোরের পৌত্রিক ভিটা। রয়েছে চোখ ধাধানো পদ্ম আর লাল শাপলার বিল। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা সহজে আসতে পারবেন।

শিক্ষা খাত: গোপালগঞ্জ জেলায় দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার জন্য আগ্রহী হবেন।

শিল্প কলকারখানা খাত: পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ জেলায় বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন। এ জেলায় গড়ে উঠবে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা। এ জেলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃস্টি হওয়ায় কমে আসবে বেকারত্বের চাপ।

শিক্ষার্থী দিপ্তী ঠাকুর বলেন, পদ্মা সেতু না থাকার কারণে অনকে সময় ঢাকায় ভালো কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে সময়মত উপস্থিত হতে পারিনি। তবে এখন আমাদের পদ্মা সেতু হয়েছে। ঢাকায় যেতে আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। সময়মত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।

জেলা শহরের বাজার রোডের ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার সাহা দীপু জানান, বঙ্গবন্ধু কন্য দেশের উন্নয়নে যে বিপ্লব ঘটিয়েছে তার প্রকৃত উদাহরণ এই পদ্মা সেতু। এই সেতুর উদ্বোধনের ফলে গোপালগঞ্জে ব্যবসা বাণিজ্যের বন্ধ দ্বার খুলে গেল। এই জেলা এখন ব্যবসা বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্যা বলেন, এতোদিন পদ্মা সেতু না থাকায় এ জেলায় শিল্প কলকারখা গড়ে ওঠেনি। ফলে এ জেলায় রয়েছে বেকারত্বের চাপ। তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ার মাধ্যমে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। এখন বড় বড় ব্যবসায়ীরা এ জেলায় শিল্প কলকারখান গড়ে তুলেতে আগ্রহ দেখাবেন। ফলে এ জেলায় বেকারত্বের চাপ কমে আসবে।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে রাজধানী ঢাকার সাথে গোপালগঞ্জের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হবে। পদ্মা সেতু না থাকার করনে আগে অনেক রোগী ফেরী ঘাটে গিয়ে মারা যেতেন। কিন্তু এখন আর সেটি ঘটবে না। মমূর্ষ রোগীরা সরাসরি ঢাকায় গিয়ে উন্নত চিকিৎসকা সেবা নিতে পারবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত