ঢাকা, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

মাথায় গুলি নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে ১৬ মাসের শিশু

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২২, ১০:৫৪

মাথায় গুলি নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে ১৬ মাসের শিশু
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে সুসান্না ত্রিপুরা, বয়স মাত্র ১৬ মাস। এই বয়সে গুলি সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও মাথায় গুলি নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

পাশে বসে মেয়ের কান্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মা রুংদতি ত্রিপুরা। ছোট্ট মেয়েটির মাথা, বুক ও মুখে গুলি লেগেছে, সে ব্যথায় কেঁদে উঠছে বার বার। চিকিৎসকরা জানান, মাথায় রয়ে যাওয়া ছড়রা গুলির কারণে তার এ অবস্থা।

গত মঙ্গলবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্বামী ও শ্বশুরকে হারানো রুংদতি শোককে পাথর চাপা দিয়ে সুসান্নাকে বাঁচানোর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ওই দিন নিহত হন তার স্বামী সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা (৩০), শ্বশুর বিছাই চন্দ্র ত্রিপুরা (৫০) এবং পাশের বাড়ির কিশোর ধনরাং ত্রিপুরা (১৫)।

এ ঘটনার জন্য স্থানীয় লোকজন পাহাড়ে গড়ে ওঠা নতুন সংগঠন ‘কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে’ (কেএনএফ) দায়ী করছে।

হাসপাতালে রুংদতি ত্রিপুরার পাশেই রয়েছে মুখে গুলি লাগা চার বছর বয়সী এক ছেলে। নাম অনন্ত ত্রিপুরা। সে রুংদতির আরেক সন্তান। অনন্ত ত্রিপুরার মুখের বামপাশে গুলি লাগলেও সে এখন শঙ্কামুক্ত।

হাসপাতালে বোনের আশেপাশে থাকলেও তার ছোটবোনের কী হয়েছে, তা নিয়ে সে নির্বিকার। সাইজাম পাড়ায় স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ ও দুই সন্তান নিয়ে ছিলো রুংদতির পরিবার। শ্বাশুড়ি পূর্বতী ত্রিপুরা বিলাইছড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকায় তিনি বেঁচে যান।

রুংদতি জানান, সন্ধ্যাবেলা আমি রান্না করছিলাম। আমার দুই ছেলে-মেয়ে বাড়ির বারান্দায় তাদের দাদুর সাথে খেলছিলো। আমার স্বামীও ঘরের ভেতরে ছিলো। হঠাৎ করে ২৫-৩০জন লোক এসে এলোপাথাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এসময় আমার শ্বশুর বিছাই ত্রিপুরা ও স্বামী সুভাষ ত্রিপুরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দাদুর সাথে থাকায় আমার দুই ছেলে-মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। আমি কোনোরকমে সেখান থেকে পালিয়ে প্রথমে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাদের নিয়ে যাই।

সেখানকার ডাক্তাররা মেয়েকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এখানে ভর্তি করেছি। ডাক্তাররা বলেছেন, মাথায় গুলি লেগেছে। কয়দিন থাকতে হবে জানি না। মেয়ে যখন ঘুমে থাকে, তখন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু ঘুম ভাঙলেই কাঁদতে থাকে।

এর মধ্যে সুসান্নার মাথার সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে, রোববার তার প্রতিবেদন দেখে চিকিৎসকরা বলছেন, ছরড়া গুলি মাথায় রয়ে গেছে। তবে বয়স খুব কম হওয়ায় গুলি বের করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মাহমুদা বেগম ঘটনার দিন বলেছিলেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে পৌঁছানো কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ।

বাংলাদেশ জার্নাল/রাজু

  • সর্বশেষ
  • পঠিত