ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

রাজধানীতে আসছে কোরবানির পশু, এখনো শুরু হয়নি বিক্রি

  আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ২০:০৭  
আপডেট :
 ০৩ জুলাই ২০২২, ২০:৩৪

রাজধানীতে আসছে কোরবানির পশু, এখনো শুরু হয়নি বিক্রি
ছবি: নিজস্ব

দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত হয়েছে রাজধানীর মোট ২১টি পশুর হাট। এসব হাটের প্রায় সবকটির প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। হাটের কিছু কিছু কাজ বাদ থাকলেও দ্রুত শেষ করার তোরজোড় চলছে। অপেক্ষা এখন ক্রেতা ও বিক্রেতার। ইতোমধ্যে দেশর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। গরু, মহিষ ও ছাগল আসা শুরু করলেও বেচাকেনা শুরু হয়নি। বেচাকেনা শুরু হতে আরও দুই-তিনদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিক্রেতা ও হাট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

হাটে গরু বাঁধার জায়গা পেতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিক্রেতারা। আকার অনুযায়ী প্রতিটি গরুর জন্য ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা লাগছে বলে জানান তারা। তবে হাট মালিক পক্ষ বলছে বিক্রেতারা বাড়িয়ে বলছে।

ফিজিয়ান জাতের একটি গরু নিয়ে পাবনা থেকে গাবতলি হাটে এসেছে ফিরোজ। গতকাল তিনি ঢাকায় এসে পৌঁছান। 'বাদশা' নামের এই গরুটির বয়স ৪ বছর। ওজন ১ হাজার ৪০০ কেজি। নিজ পালের বাছুরটি গত চার বছর ধরে যত্নে লালনপালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বাদশার জন্ম আমাদের বাড়িতে। আমাদের পালের বাছুর। জন্মের পর থেকে আমার মা বাদশাকে লালনপালন করেছে। বাদশার দাম হাঁকা হচ্ছে ১৭ লাখ। তবে হাটে এসে এখন পর্যন্ত দাম হয়নি। অনেকে ফোন নাম্বার নিয়ে গেছে। তারা ফোনে দাম করেছে।

ফিরোজ আক্ষেপ করে বলেন, আমার গরুটি বাঁধার জন্য এই জায়গা বাবদ দিতে হবে ২৩ হাজার টাকা। অর্ধেক টাকা জমা দিতে হয়েছে। বাকি অর্ধেক দিতে হবে গরু বিক্রি করে। গরু বিক্রি করতে না পারলেও এই টাকা দিয়ে হাট থেকে বের হতে হবে। অন্যান্য হাটে গরু বাঁধলে টাকা দিতে হয় না। সেসব জায়গা পানির লাইন, গরুর গোসল করানোর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এখানে উল্টা। এখানে গরু গোসল করাতে লাগে ৫০ টাকা। গরুর বাতাস দেয়ার জন্য ফ্যান কিনেছি। ফ্যানের বিদ্যুৎ বিল হিসাবে ৬০ টাকা গতকাল নিয়ে গেছে।

কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন হাফিজুর রহমান। সাড়ে ৩ বছর গরুটি লালনপালন করেছেন তিনি। 'গরিবের আশা' নামের এই গরুটির দাম চাচ্ছেন ১৬ লাখ। ঢাকায় আসার পর ফোনে সাড়ে ১০ লাখ টাকা দাম হয়েছে বলে জানান তিনি।

গরু বাঁধার জন্য ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে হাফিজুরকে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, গরু নিয়ে আমি নতুন ঢাকায় আসছি। চোখ বেঁধে টাকা নেয়ার মতো! কী আর করার, টাকা কিছু বেশি লাগলেও ভালো একটা জায়গা পেয়েছি, এতেই খুশি। এখন ভালোয়-ভালোয় বিক্রি করে বাড়ি যেতে পারলে হয়। হাটে এখনো ক্রেতা আসছে না। বিক্রিও হচ্ছে না। হয়তো দুই-চারদিন পর থেকে শুরু হবে।

ঝিনাইদহ থেকে গরু নিয়ে গত গত শুক্রবার গাবতলি আসছেন মো. ওসমান। তার গরুর দাম চাচ্ছেন ২৫ লাখ টাকা। এখনো দাম হয়নি। ৩ বছর ৪ মাস যাবত এই গরুটি পালন করেছে ওসমান। গরুটি বাঁধার জন্য তাকেও দিতে হয়েছে ২০ হাজার টাকা।

ঈদের হাট জমার আগেই গরু নিয়ে আসার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, আমার বড় গরু। ঈদের সময় রাস্তায় জ্যাম থাকবে, গাড়ি জ্যামে আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। জ্যামে আটকে গেলে গরু গাড়িতে থাকবে। গাড়িতে অধিক সময় দাঁড়িয়ে থাকলে গরু হাঁপিয়ে যাবে। অসুস্থ হয়ে পড়বে। এসব ঝামেলা এড়ানোর জন্যই আগে চলে আসছি।

গাবতলি হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য ছানোয়ার হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে যেসব গরু এখানে আসে, সেগুলোই আসছে। কোরবানির গরু এখনো আসা শুর করেনি। দুই একটা আসছে মাত্র। কোরবানির তিন-চারদিন আগে ভালোমতো আসা শুরু হবে। হাটের প্রস্তুতির কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। মেজর কাজ নাই, শেষ করেছি। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুতের কাজ চলছে, দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে।

হাটে গরু বাঁধতে অতিরিক্ত টাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওরা ( বিক্রেতারা) একটু বেশি বলে। টিপল লাগানো, বাঁশ পোতা, ময়লা পরিষ্কার, বালু ফেলা, ফ্যান লাগানো, উপরে ছাউনি দেয়া- এক কথায় জামাই আদর করার মতো তাদের রাখা হয়েছে। এগুলোর খরচতো তাদের দিতে হবে। গাবতলি পশুহাটের স্থায়ী জায়গায় বাঁধলে এক টাকাও লাগবে না। কোরবানি উপলক্ষে যে নতুন জায়গা তৈরি করা হয়েছে সেখানে টাকা লাগছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এ বছর কোরবানির হাটের জন্য গবাদিপশু সরবরাহের সংখ্যা গতবারের চেয়ে দুই লাখের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এ বছর গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। প্রায় ২৮ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়নি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত