ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

কেলেঙ্কারি পিছু ছাড়ছে না বিমানের

  আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২২, ০০:০৫

কেলেঙ্কারি পিছু ছাড়ছে না বিমানের
ফাইল ছবি। সংগৃহীত

একের পর এক দুর্ঘটনা, সংঘর্ষ আর অপ্রীতিকর ঘটনায় কেলেঙ্কারি পিছু ছাড়ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। দায়িত্বে অবহেলার পরও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলেই ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থার সেবার মান কমছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে রোববার (৩ জুন) রাতে আবারও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি বোয়িং বিমানের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে চলতি বছরে চতুর্থবারের মতো বিমানে বিমানে সংঘর্ষ হলো। এর মধ্যে গত এক মাসেই হয়েছে ৩ বার। দিন দিন দুর্ঘটনা বাড়তে থাকলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিটি ঘটনার পরই তদন্ত কমিটি হয়। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়। কিন্তু এরপরও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয়নি।

রোববার রাত সোয়া ৯টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৮৭ এবং বোয়িং-৭৩৭ এর সংঘর্ষে দুটি বিমানেরই ডানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমান দুটির মধ্যে একটি আগে থেকেই পার্ক করা অবস্থায় ছিল। অন্যটি যাত্রী নামিয়ে পার্কিংয়ের দিকে আসছিল। তখনই এই সংঘর্ষ হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে সংঘর্ষের কারণে ৭৮৭ উড়োজাহাজের ডান পাশের ডানা এবং ৭৩৭ উড়োজাহাজের বাম পাশের ডানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ ঘটনা নিশ্চিত করে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, এ ঘটনার তদন্তে বিমানের প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি দল কাজ করছে। দলটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সোমবার (৪ জুলাই) দলটির একটি প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে। তখন এ ঘটনায় উড়োজাহাজ দুটির কী পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ও এর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে।

তবে সোমবারে প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্তকারী দল। তাহেরা খন্দকার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আমরা এখনো পাইনি। পেলে আপনাদের দেয়া হবে।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমানের একটি বোয়িংয়ের আরেকটি বোয়িংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে দুটো উড়োজাহাজই কিছু দিনের জন্য গ্রাউন্ডেড হয়। সে ঘটনায় গত ১১ মে বিমানের মুখ্য (প্রিন্সিপাল) প্রকৌশলীসহ পাঁচজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এরপর গত ৪ জুন বিমানের দাঁড়িয়ে থাকা একটি বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলার একটি ব্যাগবাহী ট্রলি এসে ধাক্কা দিলে উড়োজাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গত ১৬ জুন বিমানের একটি বোয়িং-৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ যাত্রী নামানোর পর অঘটনের শিকার হয়। নিয়মানুযায়ী বোর্ডিং ব্রিজের সঙ্গে উড়োজাহাজের দরজার সংযোগ না খুলেই সেটি পার্কিংয়ে নেয়ার জন্য ধাক্কা (পুশব্যাক) দিতে শুরু করেন রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত কর্মীরা। এতে বোর্ডিং ব্রিজে ক্যানোপি ও উড়োজাহাজের দোরগোড়ার সংযোগস্থলের সংস্পর্শ হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় বোর্ডিং ব্রিজে থাকা ঘর্ষণ প্রতিরোধক রাবারের সঙ্গে ঘর্ষণ লাগে। বিমানের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানা যায়।

এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশ হয়েছে হ্যাঙ্গারে (উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের স্থান) নেয়ার সময়। বিমানে বিমানে সংঘর্ষের একাধিক কারণ রয়েছে বলে জানা গেছে।

একটি সূত্র বলছে, হ্যাঙ্গারে উড়োজাহাজ বের করা ও রাখার যে নিয়ম রয়েছে, তা যথাযথভাবে মানেন না গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। কিছু কিছু সময় হ্যাঙ্গারে উড়োজাহাজ সরানোর সময় অসতর্ক থাকেন। যার কারণে ধাক্কার ঘটনাগুলো ঘটছে। তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ না হওয়ার কারণেও এসব দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

বারবার কেনো এমন ঘটনা ঘটছে জানতে চাইলে তাহেরা খন্দকার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখানে নানান বিষয় থাকে। দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনায়। প্রতিটি ঘটনার পর আমাদের ম্যানেজম্যান্ট তদন্ত কমিটি করে। তদন্তে কারো অপরাধ পেয়ে থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। এক একটা ঘটনার কারণ এক এক রকম। নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

বর্তমানে বিমানের উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৪, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও পাঁচটি ডিসি ৮-৪০০। ১৯টি আন্তর্জাতিক ও ৭টি অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে বিমানের ফ্লাইট চলছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত