ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২২, ১৮:১৮

নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন
ছবি- প্রতিনিধি

নড়াইলের লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার০ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ৬ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

রোববার বিকাল ৪ টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় পরিচালিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল সভাপতিত্ব করেন।

তাদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো-

১. নড়াইলের লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িত ধর্মান্ধ মৌলবাদী সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২. দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় নড়াইলের ডিসি ও এসপিকে প্রত্যাহার করতে হবে।

৩. বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৪. বাংলাদেশে অবিলম্বে আইন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং দেশের সকল মসজিদ-মাদ্রাসায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে।

৫. বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৬. সকল ধরণের মাদ্রাসায় নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ, শহীদ মিনার নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।

মানববন্ধনে নড়াইলের ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য অশোক সাহা বলেন, ‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের বাড়ি ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়েছে। মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দিয়ে আমাদেরকে এখনও হত্যার হুমকি দিচ্ছে কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পুরো গ্রাম নারী শূন্য হয়ে গেছে। বাড়ি লুটপাট করা হয়েছে। ভয়ে আমরা বাড়িতে অবস্থান করতে পারছি না। নিজের দেশে আমরা এখন অসহায়। সরকারের নিকট দাবি, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’ হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি না হলে এদেশ ছেড়ে তাদের চলে যেতে হবে বলে জানান তিনি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘দেশে আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে। নড়াইলে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বারবার হামলাই প্রমাণ করে জামাত-বিএনপি-হেফাজত আবার সক্রিয় হয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। প্রত্যেকটা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’

তিনি বলেন, ‘নড়াইলের প্রশাসনের দায়িত্ব কী? তারা কেনো এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে পারছে না? একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে জড়িত প্রত্যেককে শাস্তি দিতে হবে। প্রতি শুক্রবারকে টার্গেট করে বিএনপি-জামাত নাশকতার পরিকল্পনা শুরু করেছে। নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে বিএনপি-জামাত-হেফাজতের সন্ত্রাসীরা সরাসরি জড়িত ছিলো। নড়াইলের প্রশাসনের সামনে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পড়ানো হয়েছিলো। লোহাগড়ায় ঘটনায় প্রশাসন এখনও কেনো নীরব ভূমিকা পালন করছেন? অবিলম্বে নড়াইলের ডিসি ও এসপিকে অপসারণ করতে হবে। কারণ তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। অতীতের হামলাগুলোর কঠোর বিচার হলে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না।’

আল মামুন আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতেও বিএনপি-জামাত-হেফাজত ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছিলো। দেশের জনগণ তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। আমরা বিশ্বাস করি, অতীতের ন্যায় আবারও জনগণ বিএনপি-জামাত-হেফাজতকে রাজপথে সমুচিত জবাব দেবে।’ সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র আবার শুরু হয়েছে। এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। কারণ তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রকৃত শত্রু। এরা বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এখন দেশের মানুষ অনেক সচেতন। ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রকৃত চরিত্র ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। সামনে আরও হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। সেই ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য প্রতিনিয়ত বিএনপি-জামাতের ধর্ম ব্যবসায়ীরা ষড়যন্ত্র করছে। এরা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু। ধর্মীয় সভাগুলোতে জামাত-শিবিরের কিছু নামধারী আলেম অন্যধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। পবিত্র মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে এরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। এহেন ইসলাম ধর্ম বিরোধী কর্মকাণ্ড কখনোই বরদাশত করবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।’ তিনি ধর্মীয় লেবাশধারী উগ্রবাদীদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান।

মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন মজুমদার, ভাস্কর্য শিল্পী রাশা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/রাজু

  • সর্বশেষ
  • পঠিত