ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

নড়াইলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি: বেড়েছে সহিংসতা, সাত মাসে ১০ খুন

  শরিফুল ইসলাম, নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২২, ১৮:১৯  
আপডেট :
 ০৪ আগস্ট ২০২২, ১৮:২১

নড়াইলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি: বেড়েছে সহিংসতা, সাত মাসে ১০ খুন

শান্তিপূর্ণ নড়াইলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। কয়েক মাসে বেড়েছে হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা। গত দুই মাসে জেলার দুটি এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দুইজনের রহস্যজনক ১০ জন হত্যা ও খুনের শিকার হয়েছেন। সংঘটিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ ও চুরির ঘটনা।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব সহিংসতাকে কেন্দ্র করে অর্ধশতাধিক বাড়ি-দোকান ভাচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। কয়েকশ’ বাঁশ, বনজ ও ফলদ গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জমির ফসল কেটে নেয়া হয়েছে।

এসব ঘটনায় কয়েকশ’ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই এখন বাড়িছাড়া। সম্প্রতি চুরির ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো।

সর্বশেষ রোববার (৩১ জুলাই) দিঘলিয়া ইউনিয়নের নোয়াগ্রামের জাফর আলীর ছেলে মুক্তার হোসেন (৪৫) খুন হন। তার পরিবার জানায়, শনিবার সন্ধ্যার দিকে মুক্তার ও তার ছেলে ইসমাইলকে বাড়ির সামনে থেকে একই গ্রামের মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরদিন রোববার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

৩০ জুন ভোরে পুরুলিয়া ইউনিয়নের পুরুলিয়া গ্রামের জুতা/স্যান্ডেল ব্যবসায়ী কামরুল শেখকে মসজিদ কমিটি গঠন ও জমির বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষরা বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা করে। এ সময় কামরুলের ৫ ভাই গুরুতর জখম হয়। এ ঘটনায় কামরুলের ভাই জাকির শেখের বাম পায়ের গোড়ালির ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে।

২২ জুন দুপুরে শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের গহের বিশ্বাসের ছেলে বেকারি ব্যবসায়ী আজিজুর বিশ্বাসেকে (৪৫) স্থানীয় প্রতিপক্ষরা গ্রাম্য বিরোধের জের ধরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।

১৩ জুন বিকেলে জমির বিরোধের জের ধরে প্রকাশ্যে দিঘলিয়া ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামের বকু মোল্লার ছেলে এইনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল মোল্লাকে (৫০) স্থানীয় প্রতিপক্ষরা খুন করে।

৩০ মে সন্ধ্যার পর কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামের পেতা শেখের ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম শেখকে (৫৫) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রতিপক্ষরা হত্যা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেলকাড়া গ্রামের আসামিপক্ষের একজন অভিযোগে বলেন, এ ঘটনার পর বাদীপক্ষ তাদের ২৫টি পরিবারের ৩০টি বাড়ি ভাংচুর ও বেশ কয়েকটি বাড়ি লুটপাট, ঝাড়ের কয়েক’শ বাঁশ ও গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এখন জমির ফসলও কেটে নিয়ে যাচ্ছে। অর্ধশত নারী-পুরুষ বাড়িছাড়া। তবে কোটাকোল ইউপি চেয়ারম্যান হাসাল আল মাহমুদ বলেন, ঘটনার পর উত্তেজনার বশে কিছু ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে কিছু আসামি ছাড়া সবাই বাড়িতে বলে জানান তিনি।

১৮ এপ্রিল নড়াইল পৌরসভার ভাটিয়া এলাকার চা বিক্রেতা ইমাম হাসান রাজুকে (৪০) ৫শ' টাকা চুরির অভিযোগে একই এলাকার জুয়েল শেখ (৪০) কুপিয়ে হত্যা করে।

১৪ এপ্রিল রাতে দুর্বৃত্তরা দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামের বদির খানের ছেলে সোহেল খানকে (৪০) পার্শবর্তী পূর্বদিঘলিয়া গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে কুপিয়ে হত্যা করে।

স্থানীয় দুই অপহরণকারীর দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা না দেয়ায় ১৫ মার্চ মাইজপাড়া ইউনিয়নের বোড়ামারা গ্রামের পোলট্রি ব্যবসায়ী ওবায়দুর রহমানের ছেলে ৫ম শ্রেণির ছাত্র শিশু আরাফাতকে হত্যা করে।

১ মার্চ পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চর-বল্লারহাট এলাকায় আঠারোবাঁকি নদীর পাশ থেকে অজ্ঞাত নারীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

১৭ মার্চ বিছালী ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের দীপেন বিশ্বাসের ছেলে শান্তি বিশ্বাসের মরদেহ নিখোঁজের ৩ দিনপর বড়খোলা গ্রামের একটি পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে ১৮ জুন সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র মহানবী (সাঃ)কে অবমাননাকারী ভারতের বহিস্কৃত বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্টকে কেন্দ্র করে কলেজ ক্যাম্পাসে সহিংস ঘটনা ঘটে। উত্তেজিত ছাত্র ও জনতা পুলিশের সামনে ৩ শিক্ষকের ৩টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় ও কলেজের শিক্ষক শ্যামল ঘোষকে মারধর করে এবং কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুলিশের সামনে জুতার মালা পরিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেয়।

এর প্রায় একমাস পর ১৫ জুলাই দিঘলিয়া ইউনিয়নের সাহাপাড়ায় এক কলেজছাত্র ফেসবুকে মহানবী (সাঃ)কে নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর বিক্ষুদ্ধ লোকজন ওইদিন সন্ধ্যার পর দিঘলিয়া বাজারের সনাতন ধর্মের ৬টি দোকান, সাহাপাড়ার ৫টি বাড়ি ও ৪টি মন্দির ভাংচুর করে। এর মধ্যে আখড়াবাড়ি মন্দির ও গোবিন্দ সাহার দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি আধাপাকা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ৪ জন আহত হয়।

এছাড়া ১২ ফেব্রুয়ারি নোয়াগ্রাম ইউয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের তায়জুল ইসলামকে (৪৬) স্থানীয় প্রতিপক্ষরা কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।

১২ জুলাই নড়াগাতি থানার যোগানিয়া বাসস্ট্যান্ডেরা পার্শবর্তী ইনজাহার মোল্যার বসতবাড়ি ও বসতভিটা দখলের উদ্দেশ্যে একই এলাকার ইছাবুল ও তার লোকজন হামলা চালিয়ে ইনজাহারের পরিবারের ৫ নারীসহ ৭ জনকে আহত করে এবং ১২টি বড় আম, জাম ও লিচু গাছ কেটে নিয়ে যায়।

২২ জুলাই রাতে দুর্বৃত্তরা চাচুড়ী ইউনিয়নের সুমেরুখোলা গ্রামে একটি ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে ৩ লক্ষাধিক টাকার মাছ মেরে ফেলে।

২৮ জুলাই রাতে দুর্বৃত্তরা কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামের বিপুল চক্রবর্ত্তী, বিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী ও নিশিকান্ত সাহার বাড়ির পারিবারিক মন্দিরের তালা কেটে ১০-১২ ইঞ্চি সাইজের ১২টি তামা, কাঁসা, পিতল ও পাথরের বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তিসহ কাঁসা ও পিতলের বেশকিছু তৈজসপত্র নিয়ে গেছে। এর কয়েকদিন আগে পার্শবর্তী কদমতলা বাজারে ২টি মুদি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।

এসব সহিংসতা প্রসঙ্গে নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, নড়াইলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আমি নড়াইলে আসার পর এসব সহিংস ঘটনা কমেছে। তিনি নড়াইলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে মনে করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত