ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য: বন্ধ হয়নি অবৈধ ওয়েবিল

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৪৮  
আপডেট :
 ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:০১

বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য: বন্ধ হয়নি অবৈধ ওয়েবিল
ফাইল ছবি

রাজধানীতে চলাচলরত গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য চলছেই। সেই সঙ্গে অবৈধ ওয়েবিল তো আছেই। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় বাস ভাড়া।

গত ২৯ আগস্ট রাতে ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলে লিটারপ্রতি ৫ টাকা করে দাম কমায় সরকার। এরপরই নতুন করে বাস ভাড়া সমন্বয় করা হয়।

বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ৫ পয়সা কমানো হলেও আগের মতোই ভাড়া নিচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে গণপরিবহনগুলো। তবে কিছু গণপরিবহন সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে। বাসগুলোতে এমন ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে শুক্রবার রাজধানীর ৬টি পয়েন্টে একযোগে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বিআরটিএ। নতুন নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী দূরপাল্লার গণপরিবহনে কিলোমিটার প্রতি দুই টাকা ১৫ পয়সা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে দুই টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রাজধানীর অধিকাংশ রুটেই এর কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।

মিরপুর সাড়ে ১১ অনিক প্লাজা থেকে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। যেখানে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া আসে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সা। তবে এই গন্তব্যে ৩৮ টাকা ৩৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন চালকের সহকারীরা। মিরপুর সুপার লিংকের চালকের সহকারী বাপ্পী বলেন, আজিমপুর রুটে কোনো ভাড়া কমেনি, ভাড়া কমবে কেনো? আজিমপুর পর্যন্ত ভাড়া আসে ৩৮ টাকা। কিন্তু যাত্রীরা ৩৫ টাকা বা ৩৬ টাকা ভাড়া দিচ্ছেন। মিরপুর সুপার লিংক বাসটি মিরপুর ১২ থেকে রোকেয়া সরণি, ধানমন্ডি ২৭ হয়ে আজিমপুরে যায়।

মিরপুর-১১, ১২ থেকে ওঠা যাত্রীরা ঠিক ভাড়াই দিচ্ছেন। কিন্তু যারা আগারগাঁও বা তার আগে থেকে ওঠা যাত্রীরা কম ভাড়া দিচ্ছেন। যাত্রীরা এখন ম্যাপ দেখে ভাড়া হিসাব করে দিচ্ছে বলে জানান বাপ্পী। অনিক প্লাজা থেকে সদরঘাটের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। সেখানে নির্ধারিত ভাড়া থেকে ৪৫ টাকা হলেও সদরঘাটের আগে যারা নামছেন তাদের কাছ থেকেও একই ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

বিহঙ্গ পরিবহনের চালকের সহকারী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সদরঘাট পর্যন্ত ৯৫ পয়সা ভাড়া কমেছে। সেটা যাত্রীরা কীভাবে দেবে। যাত্রীরা ভাড়া কম দিতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, এবার ভাড়া নিয়ে একটু বেশি ঝামেলা হচ্ছে। যারা বোঝেন তারা ঠিক ভাড়া দিচ্ছেন। যারা বোঝেন না তারা ভাড়া কমেছে বলে বাসে ঝামেলা করছেন। তার মতে, ভাড়া আরো বাড়ানো দরকার, কেননা ৩৪ টাকা তেলের দাম বাড়ানোর পরে বাসভাড়া ৪-৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন আড়াই হাজার টাকার তেল বেশি লাগে। কিন্তু মালিক সারাদিনে এক হাজার টাকাও পান না। মিরপুর থেকে উত্তরা, বাড্ডা, মহাখালীতেও বাড়তি ভাড়া নেয়া অব্যাহত রয়েছে পরিবহনগুলোর। এক্ষেত্রে কম দূরত্বে গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া।

মিরপুর-১২ থেকে মাটিকাটা ইসিবি পর্যন্ত চার কিলোমিটারে ১০ টাকা ভাড়া হয়। অথচ ওই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে নিচ্ছেন ২৫ টাকা। ওয়েবিল নিষিদ্ধ হলেও সে অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

এদিকে সরকারের বাসভাড়া সমন্বয়ের সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না যাত্রীরা। তারা বলেন, কোনো রুটেই ভাড়া কমেনি। ভাড়া কীভাবে সমন্বয় হলো? সামান্য হলেও এতে আসলে পরিবহন মালিকদের সুবিধা হলো। যাত্রীদের কোনো উপকার হয়নি। মতিঝিলগামী যাত্রী আসাদ রহমান বলেন, পাঁচ পয়সা কমানোর কোনো দরকার ছিলো না। সময় নিয়ে আরও বড় অংকের টাকা কমানো দরকার ছিলো। এই সিদ্ধান্তে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা বাড়বে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০১১ সালে একবার দুই পয়সা কমানো হয়েছিলো বাসভাড়া। আবার ২০১৬ সালে তিন পয়সা কমানো হয়েছিলো। সেটার প্রভাব সড়কে ছিলো না। এবারও পাঁচ পয়সা কমানো হয়েছে। যেখানে এক টাকাই খুঁজে পাওয়া যায় না সেখানে পাঁচ পয়সা কমানো যাত্রীদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছু না।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার বলেন, নতুন বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কিলোমিটারে দুই টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারিত নতুন ভাড়া পরিবহনগুলো নিচ্ছে কিনা, সেটি তদারকি করতে সকাল থেকে বনানী এলাকায় আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। যেসব বাসের বিরুদ্ধে ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং যেটির সত্যতা মিলছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তিন নম্বর পরিবহনের বাসটি নির্ধারিত ভাড়া থেকে যাত্রীপ্রতি পাঁচ টাকা করে বেশি ভাড়া নিচ্ছিলো। সেজন্য আইন অনুযায়ী বাসটিকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অপরাধে আজ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৯টি বাসের বিপরীতে ৭৭০০০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/রাজু

  • সর্বশেষ
  • পঠিত