ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

কাউন্সিলর একরামুল কারও ব্যক্তিগত আক্রোশে খুন হননি: আইজিপি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:০৬

কাউন্সিলর একরামুল কারও ব্যক্তিগত আক্রোশে খুন হননি: আইজিপি
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। ছবি: প্রতিনিধি

চার বছর আগে কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরাম নিহত হওয়ার ঘটনার সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেন, কাউন্সিলর একরামুল হকের ঘটনা অনৈতিক। এ ধরনের কিছু চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। এটা আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি। এটা ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে আইজিপি’স প্রেস কনফারেন্সে নানা প্রশ্নের সঙ্গে একরাম নিহত হওয়া নিয়েও তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংবাদিকদের আইজিপি এসব কথা বলেন।

একরামুল হক কারও ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে খুন হননি বলে দাবি করে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বিষয়টা হলো যে এটা আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি। এটা ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। তাদের সঙ্গে কিন্তু যে ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন, তার কিন্তু ব্যক্তিগত বিরোধ নেই, ব্যক্তিগত বিষয়ও না। এটা আমরা অনেকেই চিহ্নিত করার চেষ্টা করি ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু সেটা না।

তিনি বলেন, আমাদের দেখার দায়িত্ব আমাদের সহকর্মী কেউ ম্যান্ডেটের বাইরে গেছেন কি না? যদি ‘ওভার স্টেপ’ করে থাকে, তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।

একরামের ঘটনায় কোনো তদন্ত চোখে না পড়ার কথা এক সাংবাদিক জানালে প্রতিক্রিয়ায় বেনজীর দাবি করেন, একাধিক তদন্ত হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের এনকোয়েরি হয়েছে, আমি যখন চলে আসি, তখন ইন্টারনাল এনকোয়ারির আদেশ দিয়ে এসেছি। তদন্ত হয়নি, এ কথা ঠিক না। বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে।

আরেক প্রশ্নে জবাবে বেনজীর বলেন, কারও কাছেই জাদুর কাঠি নেই যে আমি সব কিছু অর্জন করে ফেলবো। অর্জনের বিষয়টা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া এবং কখনও শেষ না হওয়া প্রক্রিয়া। অর্জনের প্রক্রিয়া কখনও থেমে থাকে না। সংগঠন হল জীবন্ত বিষয়, আর জীবন্ত বিষয়ের বৈশিষ্ট্য হলো ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।

অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত দায়িত্বে আছি। আগামীকাল অবসর নেবো। এর পরে অবসর নিয়ে ভাববো। অবসরের পর সমাজের অংশ হিসেবে মানুষের সঙ্গে বসবাস করবো বাকি জীবন। মানুষের অনেক অবদান রয়েছে আমার প্রতি; আমি চেষ্টা করবো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের পাশে দাঁড়াতে।

এর আগে আইজিপি তার বক্তব্যের শুরুতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের সাথে আমার ১২ বছর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করায় গভীর আত্মীক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। চাকরি জীবনের ৩৪ বছরের মধ্যে দীর্ঘ ১২ বছর আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন আমার পথ চলাকে সুগম করেছে। এজন্য আপনাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। মহান রাব্বুল আল আমিনের রহমত এবং প্রধানমন্ত্রীর বদন্যতায় আমি ডিএমপি কমিশনার, ডিজি র‌্যাব ও আইজিপির মতো তিনটি জন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার এই পথ চলায় আপনারা আমাকে যে সহায়তা করেছেন, তার জন্য আপনারদের নিকট আমি চিরঋণী। সেই সাথে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

তিনি বলেন, ডিএমপি কমিশনার হিসেবে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার তৈরি করে সাংবাদিকদের সাথে সেতু বন্ধন তৈরির কাজটি করেছি আমি। যার ফলে সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। তাছাড়া র‌্যাবের প্রধান থাকাকালীন সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে ঢাকার মিডিয়া পাড়া খ্যাত কারওয়ান বাজারে একটি অত্যাধুনিক মিডিয়া উইং স্থাপন করেছি। আর ক্র্যাবের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো অত্যন্ত নিবিড়। সংগঠনটির সুখে-দুঃখে আমি তাদের পাশে ছিলাম।

পেশাগত দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করলেও দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করলেও কল্যাণমূলক একটি রাষ্ট্র গঠনে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আইজিপি।

পেশাগত জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিলো, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নোত্তরে আইজিপি বলেন, একটি চ্যালেঞ্জের কথা আমি স্মরণ করি, তা হলো ফরমালিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। গণমানুষকে ফরমালিনের হাত থেকে রক্ষা করতে মোবাইল কোর্ট পর্যন্ত পরিচালনা করতে হয়েছে। এটি ছিলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতেও অনেক আত্মত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

পুলিশ বাহিনীর কর্ণধার হিসেবে আপনার প্রত্যাশা, সাফল্য ও ব্যর্থতা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাফল্য এবং ব্যর্থতা না বলে অর্জন বা অর্জন করতে না পারা এভাবে বিবেচনা করা উচিত। আমার যা অর্জন তা আপনাদের সম্মুখেই আছে। আর যেটুকু পারিনি সেটুকু আমার পরবর্তী উত্তরসূরি অর্জন করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করি।

সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি ও মির্জা মেহেদী তমাল বলেন, ক্রাইম রিপোর্টাররা পুলিশকে বন্ধু মনে করে। ক্র্যাবের সদস্যদের সাথে বর্তমান আইজিপির সর্ম্পক ছিলো মধুর ও বন্ধুত্বপূর্ণ। ক্র্যাবকে নিজের সংগঠন মনে করতেন তিনি। আধুনিক পুলিশের জন্য যা করা প্রয়োজন তিনি সকল কিছুই করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ তার এই কাজের সুফল পেতে শুরু করেছে।

ক্র্যাব সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে কাজ করে থাকে এবং ভবিষ্যতেও করবে উল্লেখ করে আইজিপির সার্বিক মঙ্গল কামনা করেন তিনি। বর্তমান আইজিপির মতো নবনিযুক্ত আইজিপিও ক্র্যাবের পাশে থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/রাজু

  • সর্বশেষ
  • পঠিত