ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রবাসীর ছদ্মবেশে ১৫ বছরে ৩০০ প্রবাসীকে লুটেছে তারা!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২২, ১৬:১০  
আপডেট :
 ০২ অক্টোবর ২০২২, ১৬:১৪

প্রবাসীর ছদ্মবেশে ১৫ বছরে ৩০০ প্রবাসীকে লুটেছে তারা!
ছবি: নিজস্ব

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টি চক্রের তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বিমানবন্দর এলাকায় তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য দীর্ঘ দিনের। বিমানবন্দরের টার্মিনালে প্রবাসী যাত্রীর ছদ্মবেশে একটি চক্র ওঁৎ পেতে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বাংলাদেশি প্রবাসী ও শ্রমিকদের টার্গেট করে এই চক্রটি সর্বস্ব লুটে নেয়।

গত ১৫ বছরে এই চক্রের খপ্পরে পড়েছে অন্তত তিন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদশি। সম্প্রতি কুয়েত প্রবাসী এক বাংলাদেশির দায়ের করা মামলায় এই চক্রের মূলহোতা মো. আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

শুধু প্রবাসীই নয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিমানবন্দর, রেলষ্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ব্যাংক ইত্যাদি স্থানে সাধারণ যাত্রীদেরও টার্গেট করে থাকে। এই অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিষক্রিয়ায় অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। র‍্যাব বলছে, গত মাসের শুরুর দিকে কুয়েত প্রবাসী এক ব্যক্তি হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

এ সময় বিমানবন্দরে আগে থেকেই ওত পেতে থাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে টার্গেট করে ও ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার পথে তাকে অজ্ঞান করে সোনা ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন।

ঘটনায় জ‌ড়িত‌দের গ্রেপ্তা‌রে র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। তারপর অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা ও ১৫টির অধিক মামলার আসামী আমির হোসেন ও তার তিন সহযোগীকে রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী থানা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এসময় লুটের স্বর্ন ও মোবাইল এবং অজ্ঞান করতে ব্যবহার করা বেশ কিছু উপকরণও উদ্ধার করে।

রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেন তারা আট থেকে নয় সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টি চক্র।

তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে বিগত ১৫ বছর ধরে রাজধানীতে এই কাজ করে যাচ্ছে। মূলত বিমানবন্দর ও টার্মিনালগুলোতে ওত পেতে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য অপেক্ষা করে। এসময় হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাস ফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করে তারা। পরবর্তীতে এই চক্রটি এমন প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে যার জন্য অপেক্ষমান কোন আত্মীয়,স্বজন বা গাড়ি নেই। তারা কৌশলে বিদেশ ফেরত ব্যক্তির সাথে কুশল বিনিময় করে চক্রের অন্য সদস্যদের তাদের নিকট আত্মীয় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিত।

প‌রে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে একই এলাকার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। পরবর্তীতে এই চক্রের সদস্যরা সবাই একসাথে বাসের টিকেট কেটে যাত্রা শুরু করে। গাড়ি বা বাসে ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যগণ প্রবাসী ব্যক্তিকে কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে অচেতন করে। তারপর অজ্ঞান হয়ে গেলে প্রবাসীর কাছে থাকা যাবতীয় মালামাল নিয়ে চক্রটি পরবর্তী স্টেশনে নেমে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আমির হোসেন জানায় যে, সে বিমানবন্দর কেন্দ্রীক একটি অজ্ঞান পার্টি চক্রের মূলহোতা। সে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে। পরবর্তীতে সে বিমানবন্দর এলাকায় একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকুরীর আড়ালে বিগত ১৫ বছর ধ‌রে এই অপকর্মের সাথে জড়িত। দীর্ঘ এই সময়ে সে প্রায় ৩০০ জন ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান করে তাদের মূল্যবান মালামাল ও সম্পদ লুট করে নিয়েছে। চক্রের আরো ছয়,সাত জন বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিল যার মধ্যে একাধিক সদস্য বর্তমানে কারাগারে আছে।

আমির হোসেনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে এবং সে বেশ কয়েকবার কারাভোগ করেছে। বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া আরেক সদস্য লিটন তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে এবং লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে সে মাইক্রোর ড্রাইভার পেশার আড়ালে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত আমিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে। সে একাধিকবার একই ধরণের মামলায় গ্রেপ্তাতার হয়েছিল। বিভিন্ন সময় চক্রটি কৌশলে প্রবাসী যাত্রীদের মাইক্রোবাসে পরিবহন করে সর্বস্ব লুট করে নেয়। তখন সে মাইক্রোবাসের চালনার দায়িত্বে থাকে। এছাড়াও সে বিভিন্ন সময় বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের অনুসরণের কাজ করে থাকে। আবু বক্কর পারভেজ ৮/৯ বছর বিভিন্ন জুয়েলারী দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করত। স্বর্নের দোকানও ছিলো। এই জুয়েলারী দোকানের আড়ালে সে বিগত ২/৩ বছর যাবত চক্রটির লুটকুত স্বর্ণ গ্রহণ, রুপ পরিবর্তন ও বিক্রয়ের সাথে জড়িত ছিল। জাকির হোসেন নামের আরেক সদস্য ছাপাখানার ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে। গত কয়েক বছর আগে আমিরের মাধ্যমে এই চক্রে যোগ দেয়। সে লুট কোড়া স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারী দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের সাথে জড়িত ছিল।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত