ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

দেশজুড়ে বাড়ছে সহিংসতা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৯

দেশজুড়ে বাড়ছে সহিংসতা
সহিংসতা। প্রতীকী ছবি

রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্তে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে একাধিক হত্যাকাণ্ড। যার বেশিরভাগই বীভৎস ও রোমহর্ষক। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র আপন স্বজনরাই বেছে নিচ্ছেন খুনের মতো নিকৃষ্ট পথ। স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে, স্ত্রী খুন করছে স্বামীকে, মা খুন করছে সন্তানকে, সন্তান খুন করছে বাবাকে, স্বামী পুড়িয়ে মারছে স্ত্রীকে, ভাই খুন করছে ভাইকে। খুনের পরে বীভৎস লাশগুলো নাড়িয়ে দিচ্ছে মানুষের বিবেক।

মূলত সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই সহিংসতা বাড়ছে। রোববারও দেশের বিভিন্ন জেলায় হত্যা, ধর্ষণসহ সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এরমধ্যে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা থেকে এক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বগুড়ায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকার আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের এক নিরাপত্তাকর্মীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঢাকার সাভারে কিশোরীকে কক্ষে আটকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গাইবান্ধায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক যুবতীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

কিশোরগঞ্জ: জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল কাশেম বজলুর (৫৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে পাকুন্দিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নাহিদ হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন। বজলু উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তার বাড়ি ওই ওয়ার্ডের মিরদী এলাকায়। নাহিদ আরও বলেন, বজলু কাঠের ব্যবসা করেন। শনিবার বিকেলে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, আর ফেরেননি। রোববার সকাল ১০টার দিকে বুরুদিয়া ইউনিয়নের পুখিয়া এলাকায় রাস্তার পাশে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়া: বগুড়ায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে শ্রী গোপাল চন্দ্র দাস (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ২টায় উপজেলার শেখেরকোলা ইউনিয়নের তেলিহারা গ্রামে এ ঘটনা সংঘটিত হয়। নিহত গোপাল ওই এলাকার চিত্তরঞ্জন দাসের ছেলে। তিনি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। এ ঘটনায় পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো— কাজল চন্দ্র সরকার (৩২), পাপ্পু সরকার (৩৫), হেলাল মিয়া (৪০) এবং বিমল চন্দ্র সরকার (৩৭)। এ ঘটনার মূল হোতা বিপ্লব পলাতক রয়েছে।

জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাত ১টায় বিপ্লব, গোপালসহ চার-পাঁচজন মিলে তাসের মাধ্যমে জুয়া খেলছিল। খেলার এক পর্যায়ে গোপালের সাথে বিপ্লবের কথাকাটি ও হাতাহাতি হয়। পরে রেগে বিপ্লব গোপালের বুকে লাথি মারে। তখন সাময়িক মীমাংসা করে তারা খেলা শেষে সবাই যার যার বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে যাওয়ার পর গোপালের বুকে ব্যথা অনুভব করে পরে পরিবারের লোকজন গোপালকে দ্রুত বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, গোপালের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শজিমেক হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। বিষয়টি জানার পর ভোরে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার মূল হোতাকে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

সাভার: ঢাকার আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের এক নিরাপত্তাকর্মীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, জুয়া খেলার সময় দ্বন্দ্বের জেরে তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ও মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের নগরচর এলাকায় অবস্থিত দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা হলমার্ক ভবনের পাশের জঙ্গল থেকে রোববার সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত রয়েল সরকার (৩৫) কুড়িগ্রাম জেলার কচাকাটা থানার সাতানা গ্রামের বাসিন্দা।

সাভার ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রাসেল মোল্লা বলেন, ‘ভোরে হলমার্ক গ্রুপের ভবনটির পাশের জঙ্গলে গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় ওই নিরাপত্তাকর্মীকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘হলমার্কের বন্ধ কারখানার ভেতরে থেকেই ওই ব্যক্তি যন্ত্রাংশ দেখভালের কাজ করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, রাতে জুয়া খেলার সময় দ্বন্দ্বের জেরেই তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ও মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হত্যার পর দুর্বৃত্তরা পালিয়েছে।’

এ ঘটনায় অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি সাভার মডেল থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ঢাকার সাভারে এক কিশোরীকে কক্ষে আটকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরেক শিশুকেও আটকে নির্যাতন ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। শনিবারের এ ঘটনায় ওইদিনই গভীর রাতে উপজেলার আশুলিয়ার পূর্ব ডেন্ডাবর এলাকা থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়।

আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু মণ্ডল রোববার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে মূল অভিযুক্ত মো. ইমনকে আটকের কথা জানালেও বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত করেননি তিনি।

১৫ বছর বয়সী কিশোরী বলেন, ‘আমার বোন এখানে ভাড়া বাসায় থেকে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে। বৃহস্পতিবার আমি আশুলিয়ায় বোনের বাসায় বেড়াতে আসি। ওইদিন রাতে বাসার পাশে একটি দোকানে মোবাইলে টাকা তুলতে গেলে কৌশলে ইমন নামের এক ছেলে আমার নম্বর জেনে নেয়। পরে শনিবার রাতে সে আমাকে ফোন করে ফুসলিয়ে বাসার সামনে ডেকে নেয়। এর আগেও বোনের বাসায় এসে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘পরে ইমন পাশেই তার বন্ধু আশরাফুলের বাড়িতে আমাকে কৌশলে নিয়ে যায়। এ সময় আমার পাশের বাসার একটা শিশু মেয়ে সঙ্গে ছিল।’

কিশোরী বলেন, ‘কক্ষে ঢোকার পর ইমনসহ তিনজন ভেতর থেকে দরজা আটকে দেয়। এ সময় তারা আমাকে ধর্ষণ করে। একই সময় আমার সঙ্গী শিশুটিকে আরেক কক্ষে আটকে রাখে আরেকজন। পরে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কক্ষের দরজা বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে যায় তারা। আমার চিৎকারে বাসার এক ভাড়াটিয়া তালা ভেঙে আমাদের উদ্ধার করে।’

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক যুবতীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একটি ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ। শনিবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো— দরবস্থ গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৪০) ও হাদি আকন্দের ছেলে মনির আকন্দ (৪৪)। তারা স্থানীয়ভাবে জিনের বাদশা হিসেবেও পরিচিত।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি ইজার উদ্দিন মুঠোফোনে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মূলহোতা জাহিদুল ইসলাম নিজেকে সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগী ওই যুবতীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার দেখা করার কথা বলে জাহিদুল যুবতীকে দরবস্তর ইউনিয়নের একটি কলাবাগানে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানেই জাহিদুল ও তার সহযোগীরা তাকে ধর্ষণ করে।

এ সময় তার কাছে থাকা হাতে ও গলার স্বর্ণালঙ্কারে এবং হাত ব্যাগে রাখা নগদ টাকা লুট করে নেয় সংঘবদ্ধ জিনের বাদশার চক্রটি। এ কারণে গত শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ওই যুবতীর পরিবার থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও বলেন, দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে আসামিদেরকে ধরতে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। অবশেষে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত