ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

খুলনায় রিপন হত্যা: ৫ বছর পর ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ২০:০৮

খুলনায় রিপন হত্যা: ৫ বছর পর ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রনি শিকদার। ছবি: প্রতিনিধি

খুলনায় আলোচিত মাহেন্দ্র চালক শেখ ওহিদুর রহমান রিপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রনি শিকদারকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বুধবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর লালবাগ থানার শহীদনগর এক নম্বর গলি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় র‍্যাব ৭-এর মিডিয়া শাখা থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

রনি চট্টগ্রামের হালিশহর থানার আদ্দোপাড়া এলাকার আবদুর রউফ শিকদারের ছেলে। নাম পাল্টে ‘জাহাঙ্গীর আলম’ ও ‘কলগার্ল বয়’ নামে দুটি আইডি দিয়ে বিভিন্নরকম টিকটক ভিডিও তৈরি করে তা আপলোড করতেন।

র‍্যাব জানায়, গত ২০১৬ সালে আসামি রনি শিকদার ও তার তিন বন্ধু মিলে অসৎভাবে লাভের আশায় গাড়ি ছিনতাইয়ের উদ্দেশে চট্টগ্রাম থেকে খুলনায় ঘুরতে যান। সেখান থেকে আসার সময় তারা ওই বছরের ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পরিকল্পনা করে চার বন্ধু মিলে ৭শ’ টাকা চুক্তিতে একটি মাহেন্দ্র গাড়ি ভাড়া নেয়। গাড়িতে উঠার পর কিছুদূর যেতেই তারা গাড়িটি ছিনতাই করে নেয়ার জন্য চালককে ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে আসামি রনি শিকদার ও তার বন্ধুরা মিলে টিপছুরি দিয়ে চালক রিপনকে উপর্যুপরী আঘাত করে এবং গলার ভেতর ছুরি ঢুকিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তখন তারা খুলনা নগরের লবণচরা এলাকায় রাস্তার পাশে চালক রিপনের লাশটি ফেলে দিয়ে গাড়ি ছিনতাই করে গোপালগঞ্জ জেলার দিকে রওনা হন।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানা পুলিশের সদস্যদের বসানো চেকপোস্টে তাদের মাহেন্দ্র গাড়ি চলার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় গাড়িটিকে সিগন্যাল দেয়া হয়। এ সময় তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি এবং তাদের কথায় গড়মিল থাকায় পুলিশ সদস্যরা সন্দেহ করেন। এক পর্যায়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে রিপনকে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই করার কথা স্বীকার করেন তারা। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মতে রিপনের লাশটি শনাক্তের পর উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে তাদের চারজনকে ওই হত্যাকাণ্ড ও গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক করা হয়।

এ ঘটনায় নিহত রিপনের ছোট ভাই বাদী হয়ে খুলনার লবণচরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় খুলনার লবণচরা থানা পুলিশ একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মামলায় ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে চলতি বছরের ২৯ মার্চ খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

র‍্যাব আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খুলনার লবণচরা থানা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আসামি রনি শিকদার ২ বছর পর আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হন। এরপর তারা আর আদালতে হাজিরা দেননি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্নভাবে আত্মগোপনে থাকেন। আসামি রনি শিকদার জামিনে বের হয়ে প্রথমে চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর ও আয়রনম্যানের কাজ করেন। এরপর সেখান থেকে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটো চালানো শুরু করেন। সর্বশেষ তিনি ঢাকার লালবাগ শহীদনগর এলাকার একটি চুড়ির কারখানার কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং নিয়মিত টিকটক ভিডিও করতেন।

পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রনির অবস্থান জানতে পেরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব সদস্যরা। গত ৫ অক্টোবর ঢাকার লালবাগ থানার শহীদনগর ১ নম্বর গলি থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি রনি শিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব কর্মকর্তা নুরুল আবছার বলেন, আসামি রনি প্রায়ই ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা যাওয়া করতো। সে মাঝে মাঝে চট্টগ্রামে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আসতো। সে নিজের আসল পরিচয় গোপন রাখার জন্য বিভিন্ন ঠিকানা প্রকাশ করতো। এছাড়াও সে তার জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের বাবার নাম পরিবর্তন করে।

তিনি আরও বলেন, আসামি রনি শিকদার তার নিজের নাম বাদ দিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল দিয়ে ‘জাহাঙ্গীর আলম’ ও ‘কলগার্ল বয়’ নামে দু’টি আইডি দিয়ে বিভিন্নরকম টিকটক ভিডিও তৈরি করে আপলোড করতো। আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত