ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

একই পরিবারের ৮ জন দৃষ্টিহীন, খেয়ে-পরে বাঁচতে চান তারা

  শ্রীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:০৭

একই পরিবারের ৮ জন দৃষ্টিহীন, খেয়ে-পরে বাঁচতে চান তারা
একই পরিবারের ৮ জন দৃষ্টিহীন। ছবি- প্রতিনিধি

প্রথমে বাবা এবং এক এক করে সন্তান ও তার নাতিরাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছেন। ওই পরিবারে এখন আটজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। দিনের একবেলা খেলে আরেক বেলা খাবার থাকে না ঘরে। সরকারিভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা ১৫ দিনে শেষ হয়ে যায়। প্রতিবন্ধী হওয়ার এ সংকট থেকে পরিবারটি যেন বের হতে পারছে না। মাঝে মধ্যে অর্থ সাহায্য পেলেও চিকিৎসা সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি কখনো।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার উজিলাব (হলাটিরচালা) এলাকার হোসেন আলী এখন প্রয়াত। গত ২০০০ সনে তিনি মারা যান। তার একটি চোখে কিছুই দেখতেন না। আমৃত্যু তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটিয়েছেন। মৃত্যুর সময় তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে যান।

একমাত্র স্ত্রী ছাড়া সবাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রী রাশিদা অনেক কষ্টে সন্তানদের বড় করেন এবং প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে-সাদী দেন। বিধি বাম তাদের ঘরে জন্ম নেয়া শিশুরাও জন্মান্ধ।

বংশ পরমপরায় অন্ধত্বের গ্লানি মুছবে কিনা তা নিয়ে তারা শংকিত। চিকিৎসায় কেউ এগিয়ে আসলে তাদের এ গ্লানি মুছে যাবে বলেও স্বপ্ন দেখেন তারা। নিজের চেষ্টায় চলতে চান কিন্তু নিয়তি তাদের সে সুযোগ না দেয়ায় বাধ্য হয়ে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন প্রতিবন্ধীর শিকার পরিবারের সদস্যরা।

পরিবারের একমাত্র সুস্থ নারী হোসেন আলীর স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, স্বামী মারা গেছে ২০০০ সনে। এর পর চার সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করেন, বিয়ে দেন। এখন তাদের ঘর থেকে জন্মগ্রহণ করা শিশুরাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করছে। কোনাদিন ভাত মিললে খান না মিললে না খান অবস্থায় চলছে।

হোসেন আলীর বড় ছেলে আমীর হোসেন বলেন, আমার কোনো উপার্জন নাই। একবেলা খাইতে পারলে আরেক বেলা খাইতে পারিনা। একটি বাউল গানে ঢোল বাজাতেন। প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানুষজন সাধারণত নিতে চায়না। এখন আবার পায়ে সমস্যা হওয়ায় বেশি সংকটে পড়েছেন। প্রতিবন্ধী ভাতা প্রতিজন তিন মাস পর পর ২২৫০ টাকা পান। এ টাকা দিয়ে সংসার চলে না। সরকারিভাবে কমমুল্যে যে পণ্য বিক্রি হয় তার জন্য কোনো কার্ড আমাদের দেয়া হয় না। প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ায় সেটা থেকেও বঞ্চিত আমরা।

হোসেন আলীর বড় মেয়ে হাসিনা আক্তার জানান, আমরা চার ভাই-বোন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এখন আমার সংসারেও এক ছেলে এক মেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েছে। এখন আমরা সরকারের কাছে ভালো কোনো সহযোগিতা চাই। তারা লেখাপড়াও করতে পারেনা। আড়াই বছরের শিশুটিও এখন অসহায়।

হোসেন আলীর ছোট ছেলে জাকির হোসেন বলেন, বাবা মারা যাওয়ার সময় আমি ছোট ছিলাম। ছোট থেকে এ পর্যন্ত বেড়ে উঠলেও কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা এমনকি পড়ালেখারও সুযোগ পাইনি। আমার এক মেয়ে আছে জোনাকী। সেও দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীন হয়ে জন্ম নেয়ায় তার বয়স যখন এক বছর তখন তার মা আমাকে ও জোনাকীকে ছেড়ে চলে গেছে। আমাকে মেনে সে সংসার করলেও ভবিষ্যতে আরও সন্তান আসলে এরকম হবে সেজন্য তার মা চলে যায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদেরকে সুযোগ সুবিধা বা উন্নতমানের চিকিৎসা কেউ করাতে চায় তাহলে ভাল।

ছোট মেয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, তিনমাস পর পর সমাজসেবা অফিস থেকে সরকারিভাবে ২২৫০ টাকা করে পাই। এখন ৫ মাস চলছে। এখনও কেউ টাকা পয়সা পাইনি। বিত্তবানরা যদি আমাদের সাহায্য সহযোগীতা করেন তাহলে আমরা ৮/১০টা মানুষের মতো খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারি।

আমীর হোসেনের ছেলে ইমন বলেন, আমি আর দাদী ছাড়া আমার বাবা, চাচা, ফুফুসহ পরিবারের সবাই অন্ধ। আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমার বাবা অনেক কষ্ট করে। কেউ যদি আমাদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসে আমরা বাবা, চাচা ও ফুফুকে নিয়ে ভালভাবে চলতে পারতাম।

শ্রীপুর উপজেলা সামজসেবা কর্মকর্তা মন্জুরুল ইসলাম বলেন, মৃত হোসেন আলীর পরিবারের আটজন প্রতিবন্ধী। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করেছি। উপজেলা আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামুল্যে ঘর প্রদান করা হয়েছে। স্বোচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত