ইতালি নেয়ার কথা বলে লিবিয়ায় অপহরণ, গ্রেপ্তার ২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২২, ১৪:৫৭ আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২২, ১৫:৩৯
ইতালি নেয়ার কথা বলে দুবাই ও সিরিয়া হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে অপহরণ করে নির্যাতনের পর মুক্তিপণ দাবি করতো একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র। এই চক্রের বাংলাদেশি দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনাল টিম। সেইসঙ্গে অপহৃত ভুক্তভোগী সফিকুল ইসলাম ওরফে শফিউল্লাহকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করে দেশে আনা হয়েছে।
গ্রেপ্তার মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা হলেন- বাদশা (৩১) ও রাজিব মোল্লা (৩৫)। গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, শফিউল্লাহ নামের একজন ভুক্তভোগীকে গ্রেপ্তার বাদশা ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে গত ৪ অক্টোবর ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে দুবাই পাঠান। দুবাইয়ে অবস্থান করা গ্রেপ্তার রাজিবের আত্মীয় ও সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য সবুজ দুবাই এয়ারপোর্টে ভুক্তভোগীসহ আরও ২০ জনকে রিসিভ করে একটি বাসায় নিয়ে যান।
দুবাই থেকে সিরিয়া হয়ে লিবিয়ার মিসরাত এলাকার একটি ক্যাম্পে গ্রেপ্তার বাদশা ও রাজিবের বোন জামাই সুলতানের নেতৃত্বে ভিকটিমকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করে মোবাইলফোনে তার পরিবারকে কান্না শুনিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার নিরুপায় হয়ে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের যোগাযোগ করে। সেইসঙ্গে যাত্রাবাড়ী থানায় মানবপাচার আইনে গত ২৭ অক্টোবর একটি মামলা করে। এপর গোয়েন্দা তেঁজগাও বিভাগ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের দেশীয় দুই সদস্য বাদশা ও রাজিব মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে।
ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মাধ্যমে লিবিয়ায় অবস্থান করা সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য সুলতানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুক্তভোগী সফিকুল ইসলামকে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জানিয়েছেন, তারা আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য বাদশা ও রাজিব ভুক্তভোগীসহ দেশের বেকার যুবক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকদের ইতালি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাচার করেন।
সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের বিদেশে অবস্থান করা অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের অপহরণ করে ক্যাম্পে আটক রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে।
এদিকে ভুক্তভোগী সফিকুল সায়বাদিকদের বলেন, তার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিপুরে। ভাগ্য বদলাতে ১৩ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার জন্য চক্রটির সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। প্রথমে সাত লাখ টাকা দেন ও পরে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল।
তিনি বলেন, লিবিয়ায় যেতে মানবপাচারকারী চক্রটিকে সাত লাখ টাকা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে দুবাই যাই। দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে সিরিয়া যাই ৪০ জন বাংলাদেশি। সিরিয়ায় একটি ঘরে তিনদিন কোনো খাবার না দিয়ে আটকে রাখা হয় আমাদের। কেউ বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারেনি। রাজিবের বোন জামাই সুলতানের নেতৃত্বে আমাদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
সফিকুল বলেন, তিনদিন পর সিরিয়া থেকে লিবিয়ায় যাই। লিবিয়ায় সুলতান নামে একজনকে বলা হয় আমরা রাজীবের লোক। লিবিয়ায় আমিসহ ৪০ জনের ওপর নির্যাতন চালায় এবং পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে দেশে পরিবারকে ফোন দেয়। পরে আমার বড় ভাই তেজগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে তারা আমাকে উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন-অ্যাম্বুলেন্সে গাঁজা বহনকালে আটক ৫
বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমএস