ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

আলোক মোল্লার পালে এখন ৭৯ গরু

  মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহ

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১৬:২৪  
আপডেট :
 ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১৬:৩২

আলোক মোল্লার পালে এখন ৭৯ গরু
গরু পালনকারী আলোক হোসেন মোল্লা। ছবি: প্রতিনিধি

আধুনিক সুযোগ সম্পন্ন খামারে নয়, সনাতন নিয়মে গ্রামের মাঠে মাঠে গরু চড়িয়ে সাফল্য পেয়েছেন আলোক হোসেন মোল্লা। মাত্র একটি গরু থেকে এখন তার পালে ৭৯টি গরু। ঘরবাড়ি, উঠান ও গোয়াল জুড়ে শুধু গরু আর গরু। প্রথমে দেখলে মনে হবে ছোটখাটো গরুর হাট।

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের ইসারত মোল্লার ছেলে আলোক হোসেন মোল্লার দিন কাটে মাঠে মাঠে। গরুর যত্ন করতে গিয়ে ৪৭টি বসন্ত পার করেছেন, কিন্তু সংসার করতে পারেননি। সম্পূর্ণ দেশি খাবার দিয়ে (বিচুলি, খড় ও মাঠে চড়িয়ে) গরু লালনপালন করেন আলোক। এই গরু পালনের মাধ্যমে করেছেন সহায়- সম্পত্তি ও ব্যবসা। গ্রামে তৈরি করেছেন ফ্ল্যাট-বাড়ি। বড় ভাই সলোক মোল্লা স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। আর ছোট ভাই পলক হোসেন মোল্লা করেন সারের ব্যবসা।

ছোট ভাই পলক হোসেন মোল্লা জানান, ছোট বেলায় তাদের বাড়িতে হালের গরু ছাড়া একটি মাত্র গাভি ছিল। পিতার মৃত্যুর পর ২০০৪ সাল থেকে গরু পালন শুরু করেন। সেই যে যাত্রা শুরু, এখন তাদের বাড়িতে ৭৯টি গরুর বড় একটি পাল। বছর শেষে ১০/১২টি করে গরু বিক্রি হয়, যা থেকে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা আসে। তাছাড়া সারা বছর সংসারে দুধের যোগান হয় গরু থেকেই।

গরুর প্রধান প্রতিপালক আলোক হোসেন মোল্লার সঙ্গে কথা হয় হরিণাকুন্ডু উপজেলার গোপিনাথপুর মাঠে। তার ভাষ্য মতে, গরু তাদের সংসারে আশির্বাদ স্বরূপ। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে মাঠে ১৬ বিঘা জমি কিনেছেন। ছোট ভাইয়ের ব্যবসায় দিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। সংসারের বেশির ভাগ খরচ আসে গরু বিক্রি থেকে।

তিনি জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি নিজ গ্রাম ছাড়াও আশপাশের গ্রামে গরু চড়িয়ে বেড়ান। তার কোন সহযোগী রাখাল নেই। ফলে গরু পালন করা এখন খুবই কষ্টকর। এই বিরাট গরু পাল রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে আর বিয়েশাদি করা হয়নি বলেও আলোক হোসেন জানান।

হরিশপুর গ্রামের কলেজছাত্র সজল হোসেন জানান, এতো বড় গরুর পাল তাদের এলাকায় নেই। আধুনিক সুযোগসম্পন্ন খামার ছাড়া মাঠে মাঠে গরু চড়িয়ে ওই পরিবারটি এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবু জানান, আলোক হোসেন আমার বাল্য বন্ধু। তার আরেক ভাই সলোক ইউপি সদস্য। তারও ২০টি গরু আছে। দুই ভাই মিলে গরু পালন করেন।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বন্ধু আলোক হোসেন গরু পালন করেন। সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাইয়ে এতো বড় গরুর পাল গড়ে তুলেছেন তারা। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর পরিবারটি ৩০ লক্ষ টাকার গরু বিক্রির পরও কোটি টাকা মূল্যের গরু সবসময় মজুত থাকে। বর্তমান ৩০টি গাভি এবং শিগগির বাছুর হবে বলেও চেয়ারম্যান জানান।

বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জল কুমার কুন্ডু জানান, ঘটনা জানার পর অফিস থেকে গরু প্রতিপালককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের অনেক সেমিনারে তারা অংশগ্রহণও করেন। অফিস থেকে গরুর কৃমিনাশক ট্যাবলেটসহ নানা উপকরণ দেয়া হয়। তিনি জানান, করোনাকালীন সময়ে দুই ভাইকে সহায়তা হিসেবে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এই পরিবারটি হরিণাকুন্ডুর সম্পদ বলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জল কুমার কুন্ডু উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত