ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চালু না হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে ধর্মঘট

  টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০১:৩৯  
আপডেট :
 ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০৮

সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চালু না হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে ধর্মঘট
ছবি- প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে দ্রুত জাহাজ চালু না হলে আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালে জন্য ধর্মঘট শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপে ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

রোববার বিকেলে দ্বীপের জেটিঘাট থেকে বাজার পর্যন্ত স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে এ মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনের নেত্বতে ছিলেন-হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি, স্প্রীড বোট মালিক সমিতি, সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতি, অটোরিক্সা মালিক সমিতি, রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি, দোকান-পাট ও বাজার সমিতি ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ দ্রুত চালু না হলে আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনের সকল আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, দোকানপাটসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।

তারা আরো বলেন, সেন্টমার্টিনের ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। বছরে মাত্র ৪ মাস পর্যটন ব্যবসা করে যে আয় হয়, সেটি দিয়ে বাকি সময় অতিবাহিত করতে হয় তাদের। এখন নাফনদীর নাব্যতা সংকটের অজুহাতে টেকনাফ–সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করায় পর্যটক সীমিত হয়ে গেছে দ্বীপে।ফলে ব্যবসায়ীদের আয় কমে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে দ্বীপে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে বলে দাবি করেন বক্তারা।

জানা যায়, টেকনাফ থেকে নাফ নদী হয়ে প্রতিবছর ৮ থেকে ১০টি পর্যটকবাহী জাহাজে প্রতিদিন সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেন প্রায় ৮ থেকে ১৫ হাজার পর্যটক।টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন নৌপথে ১২টি জাহাজ চলাচল করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাজ চলাচল করত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে। চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সাগর উত্তাল ও কালবৈশাখীর আশঙ্কায় তিনটি নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে আগামী ৮ডিসেম্বর থেকে আরও একটি জাহাজ চলাচল শুরু হবে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সৈয়দ আলম বলেন, টেকনাফ থেকে জাহাজ চালু না হলে এ দ্বীপের মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে।আয়-রোজগার না থাকায় আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। এ বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।

সেন্টমার্টিন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ আবুল হোসাইন বলেন, আমাদের পেটে লাথি না মেরে, আমাদেরকে একেবারেই মেরে সাগরে বাসিয়ে দিন। টেকনাফ থেকে জাহাজ চালু না হওয়ার অর্থ আমাদের পেটে লাথি মারার সমান।

হোটেল-রিসোর্ট মালিক এসোসিয়েশন সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, টেকনাফ থেকে জাহাজ চালু না হওয়ার জন্যে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। তারা নাব্যতা সংকটের অজুখাত দেখিয়ে নিজেদের একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাইছে এবং কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে গলাটিপে মেরে ফেলার কৌশলে নেমেছে। সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করার বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঐ সব পরিবেশের নামধারী সংগঠনগুলো। এরা পরিবেশের নাম দিয়ে বরং দ্বীপের পরিবেশের ক্ষতি করছে।

হোটেল-রিসোর্ট মালিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, অহেতুক নাব্যতা সংকট দেখিয়ে টেকনাফ-সেন্ট মাটিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।টেকনাফ বন্দরে মিয়ানমারের বাণিজ্যিক জাহাজ ও কাগোট্রলার প্রতিনিয়ত চলাচল করছে।এই বাণিজ্যিক যানবাহনগুলো পর্যটকবাহী জাহাজের চেয়ে আকারে অনেক বড় এবং অনেক বেশি পণ্য বহন করেন।এতো বড় বড় বাণিজ্যিক পণ্যবাহী জাহাজ-কাগো চলাচল করতে পারলে পর্যটকবাহী জাহাজ কেন চলতে পারবে না ? আমার দৃঢ় বিশ্বাস এ নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করতে কোনো অসুবিধা হবে না।দেশের পর্যটন শিল্পকে বেগবান করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় টেকনাফ থেকে আবারো জাহাজ চলাচলের অনুমতি কামনা করছি।

সাবেক ইউপির চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খাঁন বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলেই সবই সম্ভব।দ্বীপবাসী তাহার সহযোগিতা চাচ্ছি।টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে অনুমতির মধ্য দিয়ে আমাদের দ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট নিরসন হবে।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের নাফ নদীর মোহনা ও মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় একাধিক ডুবোচর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।বিভিন্ন সময়ে পর্যটকসহ জাহাজ ডুবোচরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ার খবর গণমাধ্যমেও একাধিবার এসেছে।এরমধ্যে ডুবোচরে আটকা পড়ে গত এপ্রিল ও মে মাসে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি করা পণ্য নিয়ে আসা ট্রলারের মধ্যে কাঠভর্তি সাতটির বেশি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে।সবদিক বিবেচনার পাশাপাশি পযর্টকদের নিরাপত্তার জন্য এবার টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।তবে সরকারিভাবে নিদেশনা পাওয়া গেলে আর কোনো বাধা থাকবে না।

উল্লেখ্য যে, চলতি বছরের গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে আয়োজিত এক সেমিনারে পর্যটন সচিব মো.মোকাম্মেল হোসেন সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ নৌপথে নাফনদীর নাব্যতা–সংকট ও একাধিক বালুচর জেগে ওঠার কথা বলে জাহাজ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত