ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:৪৫  
আপডেট :
 ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:১৮

৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস
ছবি - সংগৃহীত

আজ ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে ঠাকুরগাঁও মহকুমায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনতার দুর্বার প্রতিরোধে পরাজিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের জনগণ ওই দিন ভোরে ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন।

হানাদারদের পরাজয়ের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দে উদ্বেলিত কন্ঠে জয়বাংলা ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে সবাই।

২৫ মার্চের পর দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধ। শুরু থেকে পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে মুক্তাঞ্চল। সেখান থেকে পরিচালিত হয় চূড়ান্ত লড়াই। ১৫ এপ্রিলের পর ঠাকুরগাঁও এলাকায় শুরু হয় হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটপাট আর বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাটিভাঙ্গা ও রানীশংকৈল উপজেলার খুনিয়াদীঘি পাড়ে মুক্তিকামী লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ১৭ এপ্রিল জগন্নাথপুর, গড়েয়া শুখাপনপুকুরী এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষ ভারত অভিমুখে যাওয়ার সময় স্থানীয় রাজাকাররা তাদেরকে জড়ো করে মিছিলের কথা বলে পুরুষদের লাইন করে পাথরাজ নদীর তীরে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।

একইভাবে রানীশংকৈল উপজেলার খুনিয়াদিঘীর পাড়ে গণহত্যা চালানো হয়। হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার নিরিহ মানুষজনকে পাকবাহিনী ধরে এনে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। মানুষের রক্তে এক সময় লাল হয়ে উঠে ওই পুকুরের পানি। পরবর্তিতে এ পুকুর খুনিয়াদিঘি নামে পরিচিত পায়।

ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তি বাহিনীর সাথে পাকিস্তানী বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় জুলাই মাসের প্রথম দিকে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গেরিলারা হানাদার বাহিনীর ঘাটির উপর আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে। বেশ কিছু ব্রিজ ও কালভার্ট উড়িয়ে দেয় তারা। দালাল রাজাকারদের বাড়ি ও ঘাটিতে হামলা চালায়। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক অভিযান চালায়।

মুক্তি বাহিনীর যৌথ অভিযানে পঞ্চগড় মুক্তিবাহিনীর দখলে আসলে পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যায়। এরপর ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু হয় ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে। মিত্রবাহিনী যাতে ঠাকুরগাঁও দখল করতে না পারে সেজন্য পাকসেনারা ৩০ নভেম্বর ভূল্লী ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তারা সালন্দর এলাকায় সর্বত্র বিশেষ করে ইক্ষু খামারে মাইন পুতে রাখে। মিত্রবাহিনী ভূল্লী ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাংক পারাপারের ব্যবস্থা করে।

১ ডিসেম্বর ভূল্লী ব্রিজ পার হলেও মিত্রবাহিনী যত্রতত্র মাইন থাকার কারণে ঠাকুরগাঁও শহরে ঢুকতে পারেনি। ওই সময় শত্রুদের মাইনে দুটি ট্যাংক ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর এফ এফ বাহিনীর কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মাইন অপসারণ করে মিত্রবাহিনী ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়। ২ ডিসেম্বর সারারাত প্রচন্ড গোলাগুলির পর শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে সৈয়দপুরে আশ্রয় নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোর রাতে শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত