সাংবাদিককে মারধর: সেই ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:১৫

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় একতা ব্রিক্স কনসার্ন (এবিসি-০১) নামের অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। ওই অবৈধ ইটভাটার ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিক আবু আজাদকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে দেড় ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর করা হয়েছিল।
আজ সোমবার রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়নের মঘাছড়ির ওই ইটভাটায় অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আফজারুল ইসলাম ও নমুনা সংগ্রহকারী চন্দন বিশ্বাস অভিযানে অংশ নিয়েছেন।
অভিযানের সময় এবিসি ইটভাটার কোনো লাইসেন্স দেখাতে না পারায় সেটির চুল্লি, চিমনি এবং ইটভাটায় থাকা প্রায় এক লাখ ইট গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া পাহাড় থেকে এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কাটার দায়ে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের কেবিএম ইটভাটার মালিক মো. কামাল উদ্দীনকে ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, আইন ভঙ্গ করে সরকারি নির্দেশনা না মেনে কোন ইটভাটা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। আমাদের নিয়মিত অভিযান চলবে। সরকার ব্লক ইটের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে। যদি ইটভাটা মালিকেরা চায়, তবে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট তৈরির বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর সকালে রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ ইট ভাটার সংবাদ সংগ্রহের সময় এবিসি ইটভাটার ছবি তোলায় স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিউদ্দীন তালুকদার মোহনসহ ৫-৬ জন পিস্তল ঠেকিয়ে সাংবাদিক আবু আজাদকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে তার কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে বেঁধে রেখে তাকে নির্যাতন করে। পরে এবিসি ইটভাটার মালিক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে তার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে এবং মানিব্যাগ ও আইডি কার্ড- সব কেড়ে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
পরদিন ২৬ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় হতায় চেষ্টা, অপহরণ, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া, মারধর এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে মামলা করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবু আজাদ। মামলায় ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহিউদ্দিন তালুকদার মোহন (৪০), চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী (৫৫), ইটভাটার ম্যানেজার কামরান (৩০), মোহনের সহযোগী কাঞ্চন তুড়ির (৩০) নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাত আরো ৫-৭ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে অভিযুক্ত করা হয়। ওইদিন রাতেই আসামি কাঞ্চন তুড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একদিনের রিমান্ড শেষে আসামি কাঞ্চন তুড়ি বর্তমানে কারাগারে আছেন। ৩ জানুয়ারি বাকি আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেন।
এরপর ওই সাংবাদিককে আবারও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউপি কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী। এ সময় মামলার বাদী সাংবাদিক আবু আজাদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে, সাংবাদিক কয়ে (সাংবাদিক বলে) ইসলামপুরবাসীর মান ক্ষুন্ন করেছেন। ইসলামপুরের মানকে অসম্মানিত করেছেন। এসব করার জন্য যাঁরা পায়তারা করেছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আপনারা সাবধান হয়ে যান। আমার পেছনে যারা এমন কুচক্রি করেছেন, তাঁদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।’
ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ইসলামপুর ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। বক্তব্যটি ভাইরাল হলে নানা মহলে সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সাংবাদিক আবু আজাদকে আটকে রেখে মারধর করার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে