ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন নিয়ে যা জানালেন প্রতিমন্ত্রী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৫০  
আপডেট :
 ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৫২

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন নিয়ে যা জানালেন প্রতিমন্ত্রী
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সংগৃহীত ছবি

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট) আগামী ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলক উৎপাদন এবং ৬ মাস পরে দ্বিতীয় ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট) বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাতারবাড়ি প্রকল্প পরিদর্শন করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭১ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৭ শতাংশ। পোর্ট ও পাওয়ায় প্লান্টের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। ২৭৫ মিটার উঁচু চিমনি নির্মাণ কাজ শেষ, বয়লার, টারবাইন জেনারেটর এবং প্রি-কমিশনিংয়ের আনুসাঙ্গিক কাজ চলমান রয়েছে।

পুরোমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দৈনিক ১৩ হাজার ১০৪ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এ জন্য কয়লা খালাসের জেটি ও সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে। বিশাল আকৃতির সাইলোগুলোতে ৬০ দিনের কয়লা মজুদ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কয়লার জেটিতে সরাসরি ৮০ হাজার টন ক্ষমতা সম্পন্ন মাদার ভেসেল ভিড়তে পারবে। আর মাদার ভেসেল থেকে কয়লা খালাস করতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই দিন। কয়লার সহজ পরিবহনের বিষয়টি মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বিশেষভাবে এগিয়ে রাখবে। পায়রা কিংবা রামপালে মাদার ভেসেল গভীর সমুদ্রে রেখে লাইটারেজে করে কয়লা খালাস করতে হয়। বিষয়টি একদিকে যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনি ব্যয়বহুল। লাইটারেজ ভাড়া ছাড়াও মাদার ভেসেলের অপেক্ষমান চার্জ হাজার হাজার ডলার গুণতে হয়। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসব ঝামেলা থাকছে না।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিজস্ব জেটিতে মাদার ভেসেল ভেড়ানোর জন্য ১৪.৩ কিলোমিটার লম্বা ( প্রস্ত ৩০০ মিটার) চ্যানেল খনন করা হয়েছে। নাব্যতা নিশ্চিত করার জন্য সেডিমেন্টেশন মিটিগেশন ডাইক করা হয়েছে। এতে করে বছর বছর ড্রেজিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে চ্যানেলটি। সমীক্ষায় দেখা গেছে বছরে ৮ মিলিয়ন টন পলি জমার সম্ভাবনা ছিল।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আরেকটি চ্যালেঞ্জ থাকে ছাই (অ্যাশ) ব্যবস্থাপনা। এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইফটাইম ২৫ বছরের ছাই মজুদ রাখার মতো অ্যাশপন্ড রাখা হয়েছে। পৃথক দুটি অ্যাশপন্ড একটির আয়তন ৯০ একর, আরেকটি বিস্তৃতি ৬০০ একর জুড়ে। কয়লা মজুদের জন্য ৮০ একর জমিতে কোল ইয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে।

সাগরের কোল ঘেষে গড়ে তোলা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যাতে সাইক্লোন কিংবা জলোচ্ছ্বাসে কবলে না পড়ে। সে জন্য সি লেভেল থেকে ১৪ মিটার উঁচু বাঁধের নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁধের ভেতরে অবস্থিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামো থাকছে ১০ মিটার উঁচুতে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সর্বোচ্চ উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস মাথায় রেখে এর ডিজাইন করা হয়েছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ৭ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। বাঁধের উচ্চতা থাকছে তার দ্বিগুণ পরিমাণে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন কয়লার পরিবর্তে এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও হতে পারে। আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে এলএনজি টার্মিনাল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষজ্ঞ টিম পরিদর্শন করে গেছেন, খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। কাজ শুরু থেকে ৪ বছরের মতো সময় লাগবে। বড় মজুদের ব্যবস্থা রাখা হবে। যাতে আপোদকালীন সময়ে ব্যবহার করা যায়।

বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে ২০১৪ সালের ১৬ জুন ঋণচুক্তি করা হয়। ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি ৩ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেবে জাইকা, অবশিষ্ট ৭ হাজার ৯৩৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএল এর নিজস্ব তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। আপাত দৃষ্টিতে প্রকল্প ব্যয় বিপুল পরিমাণ মনে হলেও এতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে অনেক বিষয় রয়েছে। নিজস্ব চ্যানেল খনন করা, কয়লার পাশাপাশি তেল, গ্যাস খালাশ ও মজুদের ব্যবস্থা থাকছে এখানে। রয়েছে আমদানি রপ্তানির উপযোগি গভীর সমুদ্র বন্দর। এটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর। যার বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, একে বহুমুখী প্রকল্প বলাই যুক্তিযুক্ত হবে। প্রকল্পের আওতায় আমদানিকৃত কয়লা লোড-আনলোড জেটি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, টাউনশিপ নির্মাণ, স্থানীয় এলাকায় বিদ্যুতায়ন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা চলে যাবে। এভাবে আরও অনেক খাতে ঋণ ভাগ হয়ে যাবে। জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশন, তোশিবা কর্পোরেশন ও আইএইচআই কর্পোরেশন এর কনসোর্টিয়ামকে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।

জাপানের আর্থিক সহায়তায় মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকায় ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। দুটি কেন্দ্রের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে ১৬০৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কয়লাকে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ বিবেচনা করা হয়, সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসা সরকারের জন্য দারুণ খুশির বার্তা নিয়ে আসছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত