ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু: হ্যাক নাকি পাসওয়ার্ড বেহাত?

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৩৯  
আপডেট :
 ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৫

অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু: হ্যাক নাকি পাসওয়ার্ড বেহাত?
গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি- প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পাঁচটি ওয়ার্ড থেকে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চক্রটি ৫ হাজার জন্মসনদ তৈরি করেছে বলে দাবি পুলিশের।

অন্যদিকে চসিক বলছে- গত দুই সপ্তাহ ধরে ৫৪৭টি সনদ ইস্যু করেছে চক্রটি। সংখ্যা অমিল হলেও প্রশ্ন উঠেছে, হ্যাকের মাধ্যমে নাকি কাউন্সিলরের আইডি-পাসওয়ার্ড বেহাত হওয়ায় এমন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে অধিকতর তদন্তের দাবি তুলে পুলিশ সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলেও কাউন্সিলর কার্যালয়ের যোগসূত্র খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল মঙ্গলবার চসিকের ১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে এ অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি। অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা না হলেও কাউন্সিলর কার্যালয়ের বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক ফয়সাল কাদের।

আর অভিযানে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য ওঠে এসেছে। সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের জন্য নির্দিষ্ট আইডি থাকলেও অনেক সময় তা তাদের ব্যক্তিগত সহকারী ও জন্মনিবন্ধন সহকারীরা ব্যবহার করে থাকেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের আইডির পাসওয়ার্ড তাদের ব্যক্তিগত সহকারী ও জন্মনিবন্ধন সহকারীর কাছে থাকে। সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা মনে করেন। এই কারণে আইডি হ্যাকের ঝুঁকি তৈরি হয়।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলছেন- কাজের সুবিধার্থে ব্যক্তিগত সহকারীকে আইডি এবং পাসওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। তবে তাতে কোন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটছে না। যদিও সম্প্রতি কার্যালয়টিরও জন্মনিবন্ধন সার্ভারের ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গেল ১০ জানুয়ারি ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী আনোয়ার হোসেন নগরীর খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন।

জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ডের সার্ভারের আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু দেয়ার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিটি কর্পোরেশনে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে দুদক টিম প্রথমে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে এবং পরবর্তীতে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড ও ১১ নম্বর কাট্টলী ওয়ার্ডে অভিযান চালায়। এরমধ্যে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে গিয়ে কাউন্সিলরের নামে থাকা ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড তারই একান্ত সচিব ব্যবহার করার সত্যতা পান। এসময় তারা কার্যালয় দুটিতে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

অভিযানে দুদক সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ৫৪৭টি জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করার প্রমাণ পেয়েছে। নগরীর ১১, ১৩, ৩২, ৩৮ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের আইডি ব্যাবহার করে এসব জন্মসনদ নিবন্ধন করা হয় বলেও নিশ্চিত হয় দুদক। তবে এ বিষয়ে দুদক আরও বিস্তারিত তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, পাঁচটি ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে জালিয়াতির ঘটনার পর সব ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে- তারা যেন তাদের ব্যক্তিগত আইডির পাসওয়ার্ড ব্যক্তিগত সহকারী বা জন্মনিবন্ধন সহকারীকে না দেন।

১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কাউন্সিলর হিসেবে আমি দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে জন্মসনদ নিয়ে অনেক বাণিজ্য হয়েছে। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর তা শক্তভাবে প্রতিহত করছি। যেহেতু আমি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি, তাই ওয়ার্ড অফিসের কার্যক্রমে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য কাছে একান্ত সচিব সার্বক্ষণিক অফিসে থাকে। ফলে তাকে সার্ভারের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। সে আমার খুবই বিশ্বস্ত। অন্তত এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি, তার দ্বারা কোন অনৈতিক কাজ হয়নি।

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল কাদের বলেন, ‘যার নামে আইডি পাসওয়ার্ড দেয়া আছে, তাকেই তা ব্যবহার করতে হবে। অন্য কেউ ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই। তবে সব বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে, পরবর্তীতে আসল তথ্য উদঘাটন হবে।’

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান বলেন, আমার মূল ওয়েবসাইটি দেশ ছাড়াও পুরো পৃথিবীজুড়ে চলছে। সাইট হ্যাক হয়নি। সবমিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার ইউজার আইডি-পাসওয়ার্ড রয়েছে। দেশের বাইরে এম্বাসিগুলোতে শিক্ষিত লোকজন করে তাই কোনো সমস্যা হয় না। দেশেরগুলোতে সমস্যা হওয়ার কারণ হলো জনপ্রতিনিধি ও জন্মনিবন্ধন সহকারী নিজেরা কম্পিউটার বুঝে না। তাই অন্যের সহায়তা নিয়ে এসব করে থাকে। গ্রাম পর্যায়ে তো উদ্যোক্তার নামে সম্পূর্ণ তৃতীয় ব্যক্তিকে এসব আইডি-পাসওয়ার্ড হস্তান্তর করা হয়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যে গত ১১ তারিখ থেকে এ সমস্যা চলছে তা আমাকে জানায়নি। আমি জেনেছি গত সোমবার রাতেই। জানার পরই তালিকা অনুসারে ৫৪৭টি জন্মসনদ বাতিল করার কাজ চলছে। একইসাথে আমরা তদন্ত করে দেখছি, কিভাবে আইডি-পাসওয়ার্ড প্রতারক চক্রের হাতে গেল। বের করা কঠিন কিছু হবে না। কেননা যারা জন্মনিবন্ধন করেছে তারা জানে কাদের মাধ্যমে করিয়েছে। সূত্র ধরে টান দিলে সহজে বেরিয়ে আসবে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় জন্মনিবন্ধন সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে পাঁচ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করেছে হ্যাকার চক্র। এ ধরনের সনদ তৈরি করতে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা করে নিত তারা। এই জালিয়াত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোস্তাকিম (২২), দেলোয়ার হোসাইন সাইমন (২৩), আব্দুর রহমান আরিফ (৩৫) ও ষোলো বছরের এক কিশোর। নগরের খুলশী থানাধীন ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আইডি হ্যাকিং এর ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলাটির বাদী ছিলেন ওয়ার্ডটির জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. আনোয়ার হোসেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত