ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

গাজীপুরে কেক-পেটিস খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু, গ্রেপ্তার-৪

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:২৪

গাজীপুরে কেক-পেটিস খেয়ে  দুই শিশুর মৃত্যু, গ্রেপ্তার-৪
প্রতিকী ছবি।

গাজীপুরে কেক-পেটিস খাওয়ার এক ঘন্টার ব্যবধানে দুই বোনের মৃত্যু এবং ছয় মাসের এক শিশু অসুস্থ্য হওয়ার ঘটনার মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে নিহতদের বাবার দায়ের করা মামলায় চারজনকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন, গাজীপুর সদর থানার দক্ষিণ সালনা এলাকার বাসিন্দা লাবু মিয়ার ছেলে ও দোকানী মো. সাইফুল ইসলাম (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার শিশু মিয়ার ছেলে মো. সোহেল (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর থানার কোনাউর এলাকার দানু মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম (২৫) ও একই গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন(৪৫)। এদের মধ্যে দোকানী সাইফুল ইসলাম। অন্যরা সালনা এলাকার বেকারির কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

অপর দিকে তাজউদ্দীন মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তাদের মৃত্যু খাদ্যে বিষক্রিয়ায় হয়েছে। এখন খাদ্যে বিষক্রিয়ার উৎস খোঁজছে পুলিশ। সোমবার থেকে তারা পারিবারিক কলহ, পূর্ব শত্রুতাসহ কয়েকটি বিষয় সামনে নিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।

গাজীপুর মহানগরীর সালনা ইপসা গেট এলাকায় গত রোবাবর পেটিস ও কেক খেয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় আশামনি (৬) ও তার ছোট বোন আলিফা আক্তার (২)। তারা দুই জনই ওই এলাকার কারখানা শ্রমিক আশরাফুল ইসলামের মেয়ে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন বলেন, নিহত দুই শিশুর ময়না তদন্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের মৃত্যু খাদ্যে বিষক্রিয়ায় হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে খাদ্যে বিষ কোথা থেকে আসতে পারে।

গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম নিহত স্বজনরা জানায়, গাজীপুর মহানগরীর সালনা ইসপা গেট এলাকার এরশাদ হোসেনের বাড়িতে আশরাফুল ইসলাম সপরিবারে বসবাস করতো। স্বামী-স্ত্রী দুইজনই কারখানায় কাজ করলেও আশরাফুল পুরাতন চাকরি ছেড়ে দিয়েছে গত ডিসেম্বর মাসে। নতুন চাকুরিতে যোগদান করার কথা রয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি। যার কারনে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। রোববার সকালে মা সফুরা বেগম কাজে চলে যায়। সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে মেয়েদের আবদারের কারণে স্থানীয় দোকান থেকে পেটিস ও কেক কিনে দেন। তারা সেগুলি খেয়ে পাশেই খেলা করছিল। হঠাৎ বড় মেয়ে আশামনি অসুস্থ্য হয়ে বমি করতে থাকে। অসুস্থ অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় তাকে। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক আশামনিকে মৃত ঘোষনা করে। এক প্রায় এক ঘন্টা পর ছোট মেয়ে হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে পড়ে সেও মারা যায়।

শিশুদের পরিবার যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো সেই বাড়ির মালিক এরশাদ হোসেন বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুইজনই চাকুরি করায় বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন তার নানী মনোয়ারা বেগম। সকালে আশরাফুল স্থানীয় সাইফুলের দোকান থেকে কেক ও পেটিস কিনে দিয়ে বাহিরে যায়। কেক খাওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত্যু ঘোষণা করে। ওই বাসার ভাড়াটিয়া নিহত শিশুদের ফুফাতো ভাই ৬ মাস বয়সী সিয়ামও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

একই সময়ে তাদের সঙ্গে কেক খায় ১২ বছর বয়সী আলপনা আক্তার। সে বলে, কেক আমিও খেয়েছিলাম কিন্তু আমাদের কিছু হয়নি। কেক খাওয়ার পর আশামনি বমি করে আর আলিফা চিৎকার শুরু করে।

সোমবার বিকালে তাদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কল করলে ফোন ধরেন শিশুদের মা সফুরা বেগম। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এখন গাড়িতে আছি। মেয়েদের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম বলেন, এক সঙ্গে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় দুই বোনের ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। পারিবারিক কলহ, পূর্বশত্রুতাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত