ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

চাকরি ছেড়ে ড্রাগন চাষে স্বপ্ন দেখছেন আশিকুল

  কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৩

চাকরি ছেড়ে ড্রাগন চাষে স্বপ্ন দেখছেন আশিকুল
ড্রাগন চাষে স্বপ্ন দেখছেন আশিকুল ইসলাম। ছবি- প্রতিনিধি

আশিকুল ইসলাম। একটি বেসরকারি এগ্রো কোম্পানিতে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে তার নিজে কিছু করার ইচ্ছা। বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ শুরু করেছেন। ধান, গম ও প্রচলিত শষ্যের পরিবর্তে উচ্চমুল্যের ফল চাষ করছেন তিনি। এবছর ড্রাগন, কমলা, মালটা, পেয়ারা, কুলসহ লিচুর চাষ করেছেন। ইচ্ছা ও মনোবল থাকায় নানা প্রতিবন্ধকতাতে হার মানিয়ে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন। বুক ভরা আশা নিয়ে বলছেন ড্রাগন মানে ডলার ব্যাংক।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কুশাবাড়িয়া-চরপাড়া এলাকার কৃষক আশিকুল ইসলাম। তিনি এখন ওই এলাকার একজন মডেল কৃষক। তার দেখাদেখি আরও অনেকেই করছেন আধুনিক ফসলের চাষাবাদ।

বিদেশী ফল ড্রাগন। বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় তিনি গতবছর এক বিঘা জমিতে ড্রাগনের আবাদ শুরু করেছেন। এবছর আরও এক বিঘাতে নতুন করে চারা রোপণ করেছেন ড্রাগনের। প্রথম বছরেই ফল ধরেছিলো গাছে। এবছর আরও ভালো ফলনের আশা করছেন এই মডেল কৃষক।

আশিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে চিরকালই চাষাবাদ ভালোলাগে। তবে চাকরি করতাম তাই চাষাবাদ করতে পারিনি। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখেছি যে ড্রাগন ফল চাষ বেশ লাভজনক। অনেকদিন ধরে এই আবাদ করা সম্ভব। তবে খরচ একটু বেশি। একবার রোপণ করলে অনেক বছর ধরে এর ফল পাওয়া সম্ভব। চুয়াডাঙ্গা এবং ঝিনাইদহের বিভিন্ন বাগানে ঘুরে দেখেছি, কৃষকদের সাথে কথা বলেছি। পরে আমি ঠিক করি আমিও ড্রাগন চাষ করবো। তাই আমি এই ফলের চাষ শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, গত বছর এক বিঘা জমিতে আমি পিংক রোজ নামের ড্রাগনের চাষ করি। এবছর নতুন করে আরও এক বিঘা জমিতে রেড ভেলভেট জাতের ড্রাগনের চাষ করছি। এক বিঘা জমিতে ২২০টি ড্রাগনের খুঁটি দেয়া আছে। প্রতিটি খুটিতে ৩-৪টি গাছ দেয়া রয়েছে।

আশিকুল বলেন, ড্রাগনের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ ভালো। এর সাথে যদি এটেল মাটির মিশ্রন থাকে তাহলে আরও ভালো হয়। ড্রাগনের জন্য চারা বাইরে থেকে কেনার প্রয়োজন হয় না। একবার রোপণ করলে ওই গাছ থেকেই কাটিং করে চারা তৈরি করা যায়। খুঁটি দিলে আশানুরুপ ফল পাওয়া যায়। সেই সাথে বাগানও সুন্দর হয়।

আশিকুল আরও বলেন, ড্রাগন চাষের খরচ অন্য ফসলের তুলনায় একটু বেশি। এক বিঘায় আমার ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি এবছর ৮০০-৯০০ কেজি ড্রাগন পাবো। সেই সাথে আগামীবছর আরও বেশি ফলন পাবো। এবছর যে ড্রাগন হবে সেখানে ৭০ শতাংশ খরচ উঠে আসবে আশা করি। পরের বছর দ্বিগুণ ফলন দেবে। ড্রাগনকে ভালোমতো যত্ন করলে ২০-২৫ বছর ধরে ফল দেয়।

আশিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের নিত্য নতুন ফসলের আবাদ করতে হবে। যে ফসলগুলো আমাদের দেশে প্রচলিত না, তবে ভবিষ্যতে প্রচলিত হবে এমন ফসল চাষ করলে লাভবান বেশি হওয়া যায়। এটি অধিক লাভজনক একটি চাষ। তবে এটি বিক্রির একটা নিশ্চিয়তা পেলে কৃষকরা আরও লাভবান হবে এই ড্রাগন চাষে।

মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের খাড়ারা এলাকার কৃষক আলিমুল রেজা সুমন জানান, আমি এ বছর যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের সহায়তায় ড্রাগনের চাষ শুরু করেছি। এই ফলটার বাজারে চাহিদা ভালো আর এই এলাকায় চাষ হয় না বললেই চলে। তাই আশা করছি ভালো লাভবান হবো।

ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর এলাকার মুনছুরা খাতুন এবছর প্রথম ড্রাগন চাষ করছেন। তিনি জানান, ড্রাগন ফল সুসাধু এবং বাজার দর ভালো। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের সহযোগিতায় আমি এ বছর ভিয়েতনাম রেড নামের জাতের ড্রাগনের চাষ করছি। যদি ভালো ফলন পায় তাহলে আর্থিকভাবে বেশ ভাল লাভবান হবো। সেই সাথে এ ড্রাগনের চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মামুন জানান, ড্রাগন বিদেশী ফল হওয়া সত্ত্বেও আমাদের এলাকায় চাষ উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা এ ফল চাষে বেশ আগ্রহী। আমরা কৃষি অফিস থেকে তাদের এ ফল চাষে পরামর্শ প্রদান করে থাকি।

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কুষ্টিয়াসহ ৬টি জেলায় ড্রাগন ফল চাষ সম্প্রসারণে আমরা কৃষকদের মাঝে প্রদর্শনী দিয়েছি। সেই সাথে উচ্চ মুল্যের ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এবং উচ্চ মুল্যের ফল ও সবজি চাষে কৃষক ও কৃষানীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত