ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শতকোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরি, গ্রেপ্তার ৪

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৪৭

শতকোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরি, গ্রেপ্তার ৪
গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: নিজস্ব

প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য চোরাই গার্মেন্টস পণ্যসহ সংঘবদ্ধ চোর চক্রের চার সদস্যসহ মূলহোতা শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দাসহ (৫২) চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। চক্রটি গত দেড় যুগ ধরে রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরি করেছিলো।

শুক্রবার রাতে র‌্যাব-৪ এর পৃথক অভিযানে মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে আলোচিত ব্রাজিলে রপ্তানিকৃত গার্মেন্টস পণ্য চুরিসহ দেশের গার্মেন্টস পণ্য চুরি কাণ্ডের মূলহোতাসহ চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গেপ্তার চক্রের বাকি তিনজন হলেন- মো. ইমারত হোসেন সজল (৩৭), শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ (৩০) ও মো হৃদয় (২৮)। তাদের কাছ থেকে ব্রাজিলে রপ্তানিকৃত চুরি যাওয়া পণ্যের পরিবহনে ব্যবহৃত ১টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গাজীপুরের কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে পোশাকের একটি চালান ব্রাজিলে রপ্তানির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠায়। পরদিন ৮৯৮ কার্টন ভর্তি সোয়েটার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ক্রেতা-মনোনীত শিপিং প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যের চালানটি গ্রহণ করে ব্রাজিলে পাঠায় এবং সেই মোতাবেক বন্দর থেকে চালান বহনকারী জাহাজটি রওনা দেয়ার পরপরই ক্রেতা পুরো অর্থ পরিশোধ করে। তবে গত ৬ জানুয়ারি ব্রাজিলের ক্রেতার কাছ থেকে পাওয়া ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে যান গার্মেন্টস মালিকপক্ষ।

ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু কার্টন সম্পূর্ণ খালি এবং অনেকগুলো কার্টন থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্য খোয়া গেছে। পরে চুরি হওয়া গার্মেন্টস পণ্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে পরিশোধ করতে হয় মালিকপক্ষকে।

চুরির ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ গত ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। এরই প্রেক্ষিতে চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারসহ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দা এই গার্মেন্টস পণ্য চুরি জগতের মাস্টারমাইন্ড এবং চক্রটির মূলহোতা ও নির্দেশদাতা। মূলত তার ছত্রছায়ায় ও সম্মতিতে বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ গার্মেন্টস পণ্য চুরি হয়। ৪০-৫০ জনের এই চক্রে রয়েছে অসাধু ড্রাইভার, হেলপার, গোডাউন মালিক, গোডাউন এলাকার আশ্রয়দাতা, অত্যন্ত দক্ষ কুলি সর্দারসহ একদল লেবার।

প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ট্রান্সপোর্টে গার্মেন্টেসের মালামাল বহন শুরু করে। একপর্যায়ে তারা গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভার ও হেলপারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং অল্প সময়ে বেশি অর্থ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরির কাজে উৎসাহিত করে। প্রত্যেকটি চুরির আগে ড্রাইভারদের মাধ্যমে বিদেশে রাপ্তানিকৃত গার্মেন্টস পণ্যের স্যাম্পল নিয়ে চোরাইকৃত পণ্যের সম্ভাব্য বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করতো চক্রটি।

রপ্তানিকৃত পণ্য চুরির নির্দেশ দেয়ার বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ব্রাজিলে রপ্তানিকৃত পণ্য চুরির ঘটনাও শাহেদের নির্দেশে সংঘটিত হয়। গত বছরের ২৯ অক্টোবর গাজীপুর থেকে গার্মেন্টস পণ্য কাভার্ড ভ্যানে লোড করে সন্ধ্যার সময় চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কাভার্ড ভ্যানে পণ্য লোডের পর গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ড্রাইভার শাহজাহানের কাছে স্যম্পল হিসেবে কিছু সোয়েটার প্রদান করে। ড্রাইভার শাহজাহান স্যাম্পল পাওয়ার পরপরই ছবি তুলে মোবাইলের মাধ্যমে মূলহোতা শাহেদের কাছে পাঠায়। শাহেদ স্যাম্পল পেয়ে এই চুরির ঘটনা বাস্তবায়নকারী আসামি তাওহীদুল ওরফে কাওছার ওরফে বড় কাওছারের কাছে পাঠায় এবং পণ্যের গুনগত মান ও বাজারমূল্য বিবেচনা করে এই চালানটিতে চুরির নির্দেশ দেন।

মাস্টারমাইন্ডের নির্দেশে কাওছার ড্রাইভারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুরির মূল প্লট বাস্তবায়ন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাওছারের নির্দেশে ড্রাইভার ও হেলপার ২৯ অক্টোবর মধ্যরাতে ডেমরার মিরপাড়ায় আয়েশা প্যাকেজিং ভবনের গোডাউনে কাভার্ড ভ্যানটি পার্ক করিয়ে পণ্য চুরি করে। আগে থেকে আয়েশা প্যাকেজিং ভবনের গোডাউনে অপেক্ষায় থাকা কুলি সর্দার নাজিম, স্থানীয়ভাবে সেল্টারদাতা মাসুম ওরফে মাসুদসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জন লেবার নিয়ে মূলহোতা কাওছার প্রত্যেকটি কার্টন থেকে ৩০-৩৫ শতাংশ পণ্য সরিয়ে পুনরায় প্যাকেজিং করে কাভার্ড ভ্যানটি বন্দরের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনায় কার্টন প্যাকেজিংয়ে অত্যন্ত দক্ষ কুলি সর্দার নাজিম অন্যান্য লেবারদের নিয়ে কাভার্ড ভ্যান থেকে কার্টন আনলোড থেকে শুরু করে কার্টন থেকে পণ্য সরিয়ে পুনরায় প্যাকেজিং এবং কাভার্ড ভ্যানে কার্টন লোডের কাজটি করেছে।

এই চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাওছার, নাজিম ও মাসুম ওরফে মাসুদকে রাজধানীর ডেমরা থেকে গত ২৪ ডিসেম্বর অপর একটি গার্মেন্টস পণ্য চুরির ঘটনায় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। বর্তমানে আসামিরা জেল হাজতে রয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেপ্তার শাহেদ চট্টগ্রামে থাকাকালে ১৯৯৬ সালে ২টি ট্রাক কিনে লোকাল ব্যবসা শুরু করে এবং ২০০৪ সালে ট্রাক দুটি বিক্রি করে ৪টি কাভার্ড ভ্যান কিনে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন শুরু করেন। তিনি কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভার এবং হেলপারদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সহায়তায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির জন্য একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র তৈরি করে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি নিজেই স্বশরীরে উপস্থিত থেকে চুরি করতেন।

শাহেদ ২০১৮ সালের পর থেকে পর্দার আড়ালে থেকে চুরির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ শুরু করে এবং প্রত্যেকটি চুরির ঘটনায় আয়কৃত অর্থের সর্বোচ্চ অংশ পেতেন। শাহেদ গত দেড় যুগের বেশি সময় ধরে এই গার্মেন্টস পণ্য চুরির জগতে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করছেন। মৌলভীবাজার শহরে সাহেদের প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে। মৌলভীবাজারের দুর্লভপুরে প্রায় ২০ একর জমির উপরে মাছের খামারসহ বিশাল দুটি হাঁস মুরগির খামারও রয়েছে এবং বর্তমানে তার নিজস্ব ৪টি কাভার্ড ভ্যানসহ তার সহযোগীর আরও ১৫টি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭-১৮টি গার্মেন্টস পণ্য চুরির মামলা রয়েছে এবং যার অধিকাংশ মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন বলে জানা যায়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আদালতে ৬টি মামলার বিচার কাজ চলছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত