ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

রমজানের আগেই অস্থির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার

  মনির ফয়সাল, চট্টগ্রাম থেকে

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০৪  
আপডেট :
 ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:১৩

রমজানের আগেই অস্থির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার
ছবি- প্রতিনিধি

প্রতি বছর রোজার মাসে বেশি চাহিদা থাকে তেল, চিনি, ছোলা, আদা, ডাল, খেজুর প্রভৃতি পণ্যের। রমজান মাসের আরও বাকি দেড় মাস। তবে এরই মধ্যে বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া রমজান মাসে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এর কারণ- ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং আগাম প্রস্তুতি নিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পর্যাপ্ত এলসি স্বাভাবিক না হলে রমজানে পণ্যের দাম আরও বাড়বে।

প্রতি বছর রমজানের আগে ভোক্তাদের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ে নানা ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো, বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে কিনা। বিশেষ করে প্রতি বছর রমজানের ঠিক আগ মূহূর্তে বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দাম বৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে। এবারও একই আশঙ্কা রয়েছে ভোক্তাদের। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা আর অতিরিক্ত মুনাফা করতে পারবেন না।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য মতে, গত ২০ থেকে ২৫ দিনে মানভেদে ছোলা মনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে ডাল বেড়েছে কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা। এবং একই সময়ে মনপ্রতি চিনি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে।

এছাড়া সবধরনের মসলার দাম বেড়েছে। এর মধ্যে এলাচের কেজি প্রতি ২০০ টাকা এবং কেজি প্রতি জিরা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। তাছাড়া মরিচের দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা কমলেও ধনিয়া ও হলুদের দাম স্থিতিশীল। আর আদা-রসুনের দাম বাড়লেও খাতুনগঞ্জে বিদেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২২ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এবং দেশি পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকার মধ্যে।

অপরদিকে পাইকারিতে পাম তেল মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫৯০ টাকা এবং সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৪৫০ টাকায়। কমেছে খেজুরের আমদানি। রোজায় খেজুরের চাহিদা থাকে ৫০ হাজার টনের মতো। বিগত তিন মাসে খেজুর আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টন, যা এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ শতাংশ কম। অবশ্য জানুয়ারিতে খেজুর আমদানির ঋণপত্র ১৩ হাজার টন বেড়ে ২৯ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে নভেম্বর মাসের দিকে সাধারণ খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে যায়। আর ভালো মানের খেজুরের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ২৪০ টাকা পর্যন্ত। টিসিবির হিসাবে, ঢাকার বাজারে গত বছর রোজায় প্রতি কেজি সাধারণ খেজুর বিক্রি হয়েছিল ১৫০–৩৫০ টাকায়। এখন তা ১৫০–৪৫০ টাকা।

এদিকে প্রতিবছর রোজা আসলে বেড়ে যায় ছোলার চাহিদা। আর রোজায় ছোলা চাহিদা থাকে গড়ে ৭০ হাজার টন। অথচ চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত ৭ মাসে প্রায় ৯৭ হাজার টন ছোলা ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়। এরমধ্যে গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয়মাসে প্রায় ৫৪ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে। আর গত সপ্তাহে আমদানি হয়েছে ৪৩ হাজার টন ছোলা।

আর খাতুনগঞ্জে গত সপ্তাহে প্রতিমণ সাধারণ মানের ছোলা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮শ ও ভালো মানের ছোলা ৩ হাজার ১শ টাকায়। চলতি সপ্তাহে খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ সাধারণ ছোলা ২ হাজার ৯৮৫ ও ভালো মানের ছোলা ৩ হাজার ২৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানা যায়, ২০২১ সালে রোজার মাসে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। ২০২২ সালে কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৪-৭৫ টাকায়। আর এবার রোজার দেড় মাস আগে থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। গত সপ্তাহে সাধারণ ছোলা ৭৮ ও ভালো মানেরটা ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই সপ্তাহে কেজিতে দুই টাকা বেড়ে সাধারণ ছোলা ৮০ ও ভালো মানেরটা ৮৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারিতে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মেট্রিক টন চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এক বছর আগে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন। এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৪ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন বেশি চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। একইভাবে ভোজ্যতেল আমদানির জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ মেট্রিক টনের ঋণপত্র খোলা হয়েছে।

কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন। এ বছর ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন ছোলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ বছরের জানুয়ারিতে ছোলার এলসি কিছুটা কমেছে। ৪২ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুললেও গত বছরের একই সময় ছিল ৩৬ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন। এ বছর ২৯ হাজার ৪৮২ মেট্রিক টন খেজুরের ঋণপত্র খোলা হয়েছে, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪৯৮ মেট্রিক টন।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বেচাকেনা একদম নেই, তবে পণ্যের সরবরাহ আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু গত বছরের দামে পণ্য পাওয়া যাবে না। যদি সামনে সরবরাহ বাড়ে আশা করি দাম আরও কমবে।

এলসির বিষয়ে তিনি বলেন, বড় ব্যবসায়ী থেকে পণ্য নিয়ে মাঝারি-ছোট ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন। কারণ ডলার সংকটের কারণে এবার তারা ছোটখাট এলসি খোলে পণ্য আমদানি করতে পারেননি। তবে রমজানে পণ্যের সংকট হবে না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান বলেন, আমরা কিন্তু ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কাজ করি। তবে চট্টগ্রামের এই বিশাল জনসংখ্যার বিপরীতে আমাদের লোকবল সীমিত। তবুও আমরা রীতিমত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। ভোক্তার প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা প্রতারণার শিকার হলে আমাদের কাছে যেন অভিযোগ করে। আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবো।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, রমজানের ভোগ্যপণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের জন্য আমাদের বিশেষ টিম থাকে। রমজানের আগে আমরা ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করি। ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া পুরো রমজান মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। কেউ যদি অনিয়ম করেন তাদের আমরা জেল জরিমানা করি। এছাড়া বর্তমানেও আমাদের বাজার মনিটরিং চলমান রয়েছে। রমজানের সময় সেটি আরও জোরদার করা হবে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যপণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না বলে আমদানিকারক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সবসময় বলা হয়। তবে পণ্যের সরবরাহে যদি কৃত্রিম সংকট না হয় এবং সরকার যদি আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা বাজার পর্যন্ত তদারকি জোরদার করে তাহলে রমজানের সময় দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। ব্যবসায়ীরা প্রায় সময় চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে থাকেন। সামনে রমজানে প্রশাসনকে অবশ্যই কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত