ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

জন্ম-মৃত্যু সনদ জালিয়াতিতে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৩, ২০:০২  
আপডেট :
 ০২ মার্চ ২০২৩, ২০:৫৩

জন্ম-মৃত্যু সনদ জালিয়াতিতে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী
গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: নিজস্ব

বিডিআরআইএস’র (বার্থ এন্ড ডেথ রেজিস্ট্রেশন ইনফরমেশন সিসটেম) সার্ভারে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে ভুয়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ তৈরি চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দুইজন কর্মচারীও রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সংস্থাটির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অধিদপ্তরের রেজিস্টার জেনারেল মো. রাশেদুল ইসলাম সিআইডি বরাবর একটি আবেদন দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, অবৈধ বিকল্প পদ্ধতিতে কে বা কাহারা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে সনদ তৈরি করছে। তাদের চিহ্নিত করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয় আবেদনে।

ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশনায় সংস্থার সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে কয়েকজন ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করে।

ভিকটিমদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ‘জন্ম নিবন্ধন হেল্প ডেস্ক’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা বলছে একদিনেই দেশের যে কোন জেলার জন্ম ও মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করুন।

সাইবার পুলিশ সেন্টার ওই ফেসবুক গ্রুপের এডমিনসহ ভিকটিমের সাথে জন্ম নিবন্ধনের ব্যাপারে যোগাযোগকারী চক্রটিকে সনাক্ত করে। পরে সাইবার ইন্টেলিজেন্স এন্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট শাখা রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ফেসবুক গ্রুপের দুইজন এডমিন মো. মাহবুব আলী (২৪) ও মো. শাহ আলমকে (২৫) গ্রেপ্তার করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-৪ এর স্প্রেম্যান মো. হাসান তারেক (৪৭) এবং ভ্যাকসিনেটর কোহিনুর সুলতানাকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের গ্রেপ্তরের সময় হাসান তারেকের কাছে জন্ম নিবন্ধনের জন্য ভুয়া কাগজপত্রসহ ফাইল জমা দিতে যাওয়া চক্রটির সদস্য মো. ফয়সালকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বেশকিছু জন্ম সনদ, তা তৈরির ভুয়া কাগজপত্রসহ ৮টি ফাইল, ৩ টি হার্ডডিস্ক ও ৪টি মোবাইল ফোনসেট জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে সিআইডি জানতে পেরেছে, ‘জন্ম নিবন্ধন হেল্প ডেস্ক’ নামক ফেসবুক গ্রুপটি মাহবুব আলী ও শাহ আলম পরিচালনা করতেন। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করতেন। চক্রের সদস্য ফয়সাল তার দোকানে ফরম পুরন করতে আসা ক্লায়েন্টদের দেয়া তথ্যের সাথে ভুয়া তথ্য সংযোজন করে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট তৈরির ফাইল তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-৪ এর গ্রেপ্তার দুইজন কর্মচারীর কাছে জমা দিতেন। প্রতিটি ফাইলের বিপরীতে ৫৫০ থেকে ১ হাজার করে টাকা দিতেন ফয়সাল। যদিও জন্ম নিবন্ধনের সরকারী ফি মাত্র ৫০ টাকা।

সিআইডি জানায়, এই কাজে চক্রটি দেশের সকল জেলার ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করতো, তার সাথে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-৪ এর আওতাধীন এলাকার একটিমাত্র বিদ্যুৎ বিলের কাগজ সকল আবেদনের সাথে সংযুক্ত করে দিতো। অনেক ক্ষেত্রে মিরপুরের একটি স্কুলের ট্রান্সক্রিপ্ট এডিট করে সেখানে শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রী ও পিতার নাম পরিবর্তন করে একই রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরে ট্রান্সক্রিপ্ট একাধিক আবেদনরে সাথে সংযুক্ত করে দিতো। এই কাগজ কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই চক্রটিকে জন্ম সনদ দেয়া হতো।

গ্রেপ্তার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-৪ এর দুজন কর্মচারী অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা অফিসারদের সহযোগিতায় আইডি পাসওয়ার্ড নিয়ে সার্ভারে প্রবেশ করে ভুয়া তথ্য সম্বলিত আবেদনপত্রে জন্ম/মৃত্যু নিবন্ধন সার্টিফিকেট ইস্যু করে গ্রেপ্তার মাহবুব আলী ও ফয়সালকে সরবরাহ করতেন।

গ্রেপ্তার সিটি করপোরেশনের দুই কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি জানতে পেরেছে, গত ৬ মাস ধরে তারা সার্ভারে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে অন্তত তিন হাজার ভুয়া সনদ ইস্যু করেছে।

সিআইডি’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বলেন, চক্রটির এমন কাজে সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৪ অফিসের আরও কর্মচারী এবং সিটি কর্পোরেশনের উত্তর-দক্ষিণসহ অন্যান্য অফিসেও এমন অসাধু কর্মচারী সক্রিয়ভাবে জড়িত আছে। তাদেরকেও চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এভাবে ভুয়া তথ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধন এবং এই জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেটেই এনআইডি, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র ইস্যু করা হচ্ছে যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি স্বরূপ।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত