ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

আদানীর সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি বাতিলের দাবি বিশিষ্টজনদের

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ১৫:০১

আদানীর সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি বাতিলের দাবি বিশিষ্টজনদের
সংবাদ সম্মেলনে ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ’ । ছবি: প্রতিনিধি

অসম চুক্তি উল্লেখ করে ভারতের আদানি গ্রূপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিশিষ্টজনরা। রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ’।

সংগঠনের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের উপদেস্টা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী প্রমূখ।

লিখিত বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থপাচার ও সীমাহীন লুটপাটে জনজীবন আজ দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থার মধ্যে বিবেক বর্জিত ও দেশের স্বার্থ বিরোধী বিদ্যুৎ চুক্তি যা ভারতের আদানী পাওয়ার গ্রুপের সঙ্গে করা হয়েছে। তাতে দেশের বিবেকবান দেশপ্রেমিক মানুষকে হতবাক করেছে, বিদ্যুৎ আমদানীর নামে দেশের ধন সম্পদ লুট করার এই চুক্তিকে দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় সরকারকে উপঢৌকন হিসেবে অভিহিত করেছেন। অস্টেলিয়ার জ্বালানী বিশেষজ্ঞ টিম বাকলির বলেছেন, এই চুক্তি মুলত এশিয়ার সাবেক শীর্ষ ধনী আদানীর পকেট ভরার চুক্তি। এই চুক্তি একপেষে ও অত্যান্ত ব্যয় বহুল। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলদেশী কোম্পানী গুলো প্রতি ইউনিটের বিক্রয় মূল্য দরপত্রে সর্বোচ্চ ৬.৫২ পয়সা দিলেও অজ্ঞাত কারণে দেশীয় কোম্পানীগুলোকে না দিয়ে ৮.৭১ পয়সা অর্থাৎ অতিরিক্ত ৭০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি মূল্যে আদানীর সাথে চুক্তি করা হয়।

তিনি বলেন, অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আদানী যে ট্যাক্স ভারত সরকারকে দিবে সে ট্যাক্সের টাকা বাংলাদেশের সরকার তথা জনগণ দিবে এবং ২৫ বছর এই ট্যাক্স পরিশোধ করবে। অথচ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ভারত সরকার ২০১৯ সালে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষনা করার কারণে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশী টাকা আদানীর সাশ্রয় হবে। যেমন ঐ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা এবং বিভিন্ন সারঞ্জামাদী আমদানির জন্য কর ছাড় থেকে ১০০ থেকে ২০০মিলিয়ন ডলার বিদ্যুৎ কোম্পানী সাশ্রয় করবে, কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এই ছাড়ের টাকাও তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে আদায় করবে। এখন আদানী দাবি করছে আমরা ব্যবসায়িক বুদ্ধি খাটিয়ে এই লাভ আদায় করেছি অথচ ন্যায্য চুক্তি হলে এই সুবিধা বাংলাদেশ সরকারের পাওয়ার কথা। কোন কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ না কিনলেও তাকে বছরে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে। দেশের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়ার নামে যে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে তার থেকেও ভয়াবহ চুক্তি হচ্ছে আদানীর সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি।

বাবলু বলেন, আদানীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য পিডিবিকে মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে ৩৯.৪৩ মিলিয়ন ডলার। এই হিসেবে আদানীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে ৪৭৩.১৬ মিলিয়ন ডলার আর ২৫ বছরে মোট ব্যয় হবে বাংলাদেশী টাকায় (১১.৪৩) বিলিয়ন ডলার অথবা ১২৬,৫৮১ কোটি টাকা এই চুক্তির বিশেষ বিশেষ দিক হলো বিদ্যুৎ না নিলেও কয়লার দাম বাংলাদেশকে দিতে হবে ৩৪ শতাংশের নীচে বিদ্যুৎ নিলে বাংলাদেশকে জরিমানা দিতে হবে শুধু কয়লার দামই নয়, কয়লা পরিবহনে জাহাজ ভাড়া, বন্দরের ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। কয়লার ক্যালোরিফিক নির্ধারণের কোন বিষয় এই চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। ফলে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করলে বাংলাদেশের কিছু করার নেই বরং অতিরিক্ত টাকা গচ্ছা দিতে হবে। এই চুক্তিতে Priority base dispuss পদ্ধতি অনুসরন করার কারণে দেশীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে নিষ্কিক্র করে রাখা যাবে এবং আমদনী প্রাধান্য পাবে।

বিভিন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য অনুযায়ী আদানীর গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আমদানীকৃত বিদ্যুৎ অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫৭% বেশী ব্যয়বহুল। টোটাল চুক্তিটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে চুক্তিটির কারণে আমাদের বাংলাদেশকে বছরে শুধু কয়লার বাড়তি দাম দিতে হবে ৬০০০ কোটি টাকা, ৩৪% বিদ্যুৎ না নিলে বাংলাদেশকে পরিমানা গুনতে হবে। বছরে ১০০০ কোটি টাকা। কয়লার দাম নির্ধারনেও ব্যাপক শুভংকারের ফাঁকির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

যে টাকা খরচ করে আদানীর কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানীর চুক্তি করা হয়েছে এর অর্ধেক টাকা খরচ করে বাংলাদেশে কয়েকটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি আদানীর থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি দেশের স্বার্থ বিরোধী এবং দেশদ্রোহীতার সামিল। অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিলের দাবী জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/আরআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত