ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

অগ্নি আতঙ্কের নাম সীতাকুণ্ড

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩, ১৯:৪৯  
আপডেট :
 ১২ মার্চ ২০২৩, ১৯:৫৬

অগ্নি আতঙ্কের নাম সীতাকুণ্ড
অগ্নি আতঙ্কের নাম সীতাকুণ্ড । ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনার সপ্তাহ না পেরোতেই একটি তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড-প্রাণহানির জন্য এখন যেন এক অগ্নি আতঙ্কের নাম সীতাকুণ্ড।

শনিবার (১১ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরা বাইপাস রোড সংলগ্ন হিঙ্গিরি পাড়া এলাকায় এস এল গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিটেক্স গ্রুপের ভাড়ায় নেয়া একটি তুলার গোডাউনে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। যা কিনা ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও বিজিবির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় ২২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া তুলা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসে সদস্যরা যেদিকে সামান্য আগুন রয়েছে ও ধোঁয়া বাহির হওয়া জায়গায় পানি ছিটাচ্ছেন। পুরো গুদাম একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন আর আগুন নেই। তবে কিছু জায়গা থেকে ধোঁয়া উঠছে।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, আগুন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন চলছে ডাম্পিংয়ের কাজ। পানির সংকটে আগুন নেভাতে বিপাকে পড়তে হয়েছে। তুলার আগুন খুব সহজে নেভে না। তাই আমাদের বেশি সময় লেগেছে।

জানা যায়, রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট, সেনাবাহিনীর ৪টি ইউনিট, নৌবাহিনীর ৪টি ইউনিট, বিমান বাহিনীর ২টি ইউনিটসহ মোট ১৮টি ইউনিট কাজ করছিল। রাত ১টায় বিজিবির একটি ইউনিট অগ্নিনির্বাপণে যোগ দেয়। ঘটনাস্থলের আশেপাশে পানির পর্যাপ্ত উৎস না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস।

জানা যায়, আগুন লাগার খুব কম সময়ের মধ্যে কুমিরা ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু গুদামের পাশে থাকা খালে ও নেমসন ডিপোর ভিতরে থাকা পানি শেষ হয়ে যায়। পানির সংকটে পড়ে ফায়ার সার্ভিস। এরপর প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট ভাগ হয়ে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করে।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিক বলেন, শনিবার সকালে তুলার গুদামের পাশে মালিক লোকমান সাহেব বর্ষা সামনে রেখে টিন সংস্কারে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, উপর থেকে ওয়েল্ডিংয়ের ছিটকে পড়া আগুন থেকে এর সূত্রপাত।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, এস এল স্টিলের মালিক গুদামটি অপর এক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিলে উনারা ভাড়া হিসেবে গুদামে তুলা রাখে। তবে তিনি এটি গুদাম হিসেবে ব্যবহার করলেও এর জন্য পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স কিংবা কোনো ধরনের অনুমতি নেননি।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল বলেন, শুরুতে পানি সংকটের কারণে কাজে বেগ পেতে হয়েছিল। তবে দুপুরের পর নেমসন কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করলে তা দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করি। এরপর নেমসন ডিপোতেও পানি সংকট হলে আধা কিলোমিটার দূর থেকে আমরা পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করি। তবে আগুনের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমরাও এখনো আগুনের সূত্রপাত কোথেকে বলতে পারছি না। একেকজন একেকভাবে বলছেন। তদন্ত সাপেক্ষে তা বলা যাবে।

শনিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিসি আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান। এ ঘটনায় তিনি ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন।

এদিকে বিএম ডিপোর বিস্ফোরণ ও সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়ানক বিস্ফোরণ-আগুনের এক সপ্তাহ না যেতেই গতকাল ভয়াবহ আগুনে এলাকাবাসীরা ভীষণ আতঙ্ককের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রায়হান সিকদার বলেন, বিএম ডিপোর আতঙ্ক কাটতে না কাটতে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে দুর্ঘটনা ঘটলো। তার এক সপ্তাহ না যেতে আবার আগুনের ঘটনা ঘটলো। এখনো রাত হলেই বিএম ডিপোর বিস্ফোরণের আতঙ্ক আমাদের গ্রাস করে। আমরা এলাকাবাসীরা এটা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত।

প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ বিকেলে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়েছেন। এর আগে গত বছরের ৪ জুন বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিকের কনটেইনারে বিস্ফোরণে ৫০ জন নিহত ও ২ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত