ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

ছিনতাইকারী চক্রের ১৫ সদস্য গ্রেপ্তার, ৩ ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩, ২০:০৭  
আপডেট :
 ১২ মার্চ ২০২৩, ২০:১১

ছিনতাইকারী চক্রের ১৫ সদস্য গ্রেপ্তার, ৩ ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন
গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: নিজস্ব

চালকের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে বিশ্বাস অর্জনের পর অটোরিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াতো দিন কয়েক। পরে চালককে চা কিংবা জুসের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে অটোরিকশা নিয়ে সটকে পড়ে চক্রটি। সম্প্রতি চক্রটির ১৫ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তিনটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছেন, অটোরিকশা ছিনতাই করতে গিয়ে তারা চা কিংবা জুসের সঙ্গে অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগ করেন। এর ফলে ৩ অটোচালকের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ঈদের আগে অন্তত ১০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল চক্রটির।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৯ অক্টোবর রাতে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকা থেকে একজন অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই দিন রাতে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকায় হঠাৎ এক অটোচালক অজ্ঞান হয়ে যান। অটোতে থাকা যাত্রীরা তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফুটপাতে রাখেন। আশপাশের লোকজন জড়ো হলে অটো নিয়ে পালিয়ে যায় যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যান অটোচালক। ২৮ অক্টোবর থেকে ১ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় এমন আরও দুটি ঘটনা ঘটে। চালককে অচেতন করে অটোরিকশা ছিনতাই করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। এই দুই চালকও অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগের ফলে মারা যান।

এছাড়া গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পাশে ঝিলমিল প্রকল্পের কাছ থেকে অচেতন অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে শারীরিক প্রতিবন্ধী অটোচালক হাসানকে। তিন দিন হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ হন হাসান। তিনিও একই চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন।

এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তের এক পর্যায়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সন্ধান পায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইকারী চক্রের। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের ১৫ জনকে।

চক্রের খপ্পরে পড়া অটোরিকশা চালক হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, আমার কাছে রফিকুল ইসলাম নামে পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি গল্প করতে করতে রূপনগর থানার মিল্কভিটা এলাকায় যান। সেখানে নেমে ৭০ টাকার ভাড়ার পরিবর্তে ১০০ টাকা দেন। আমি বেশি ভাড়া নিতে না চাইলে সমস্যা নেই বলে জোর করে টাকা দেন রফিকুল। এভাবে দুই চারদিন যাওয়ার পর একদিন আমাকে আপডাউন বেশি ভাড়ার কথা বলে মোহাম্মদপুর নিয়ে যান রফিকুল। সেখানে চা-সিঙ্গারা খাওয়ান। আধাঘণ্টা পর বসিলা ব্রিজের একটু আগে গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে সিঙ্গেল রাস্তা দিয়ে যেতে বলেন। প্রায় দেড় থেকে ২০০ গজ ভেতরে যাওয়ার পর একটি বালুর মাঠে গাড়ি রাখি। সেখানে একটি চায়ের দোকান ছিলো। কিছুক্ষণ পর একজন লোক ২কাপ কফি এনে দেন। একটা আমি খাই, আরেকটা খান আমার সঙ্গে থাকা রফিক। কিন্তু আমাকে দেয়া কফিটা লবণাক্ত ছিল। পরে রফিকুলকে বলেছি, ভাই কফিতো এর আগেও আমি খাইছি। কফিতো তিতা লাগার কথা। কিন্তু এই কফি নোনতা লাগছে। রফিকুল বলেন, হয়তো তার কফি ঠিকমতো বানানো হয়নি। খেয়ে ফেলো। তবে আমি পুরোটা খাইনি। একটু খেয়েই কফির কাপটি ফেলে দিয়েছিলাম। পরে প্রায় ১০ মিনিট গাড়ি চালানোর পর অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর আর কিছুই মনে নেই। পরে দেখি হাসপাতালে।

এই চারটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সন্ধান পায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইকারী চক্রের। গ্রেপ্তার করা হয় ১৫ জনকে।

এ বিষয়ে ঢাকার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের নামে ২১টি মামলা রয়েছে। কারও নামে ৪-৫টি মামলা রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, অটোরিকশা চালিত স্ট্যান্ডগুলোতে তারা অবস্থান করেন।

তিনি বলেন, আগে থেকেই চক্রটির কিছু লোক নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করেন। তারা সেখানে চা বিক্রেতা সেজে অবস্থান করেন। এ ধরনের কাজে সুলতান নামে একজনকে আটক করেছি, যিনি চা নিয়ে আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করেন। টার্গেটকে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার পর ওই চা বিক্রেতার কাছ থেকে চা অথবা কফি খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই অজ্ঞান হয়ে যান অটোচালক। বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত