ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ডাচ্ বাংলা ব‌্যা‌কের টাকা ছিনতাই: আরও ৯৮ লাখ টাকা উদ্ধার, মাস্টাাইন্ডসহ গ্রেপ্তার ৩

  নিজস্ব প্রতি‌বেদক

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩, ১৫:৩৮

ডাচ্ বাংলা ব‌্যা‌কের টাকা ছিনতাই: আরও ৯৮ লাখ টাকা উদ্ধার, মাস্টাাইন্ডসহ গ্রেপ্তার ৩
ছিনতাই ঘটনায় জড়িত মূল মাস্টারমাইন্ডসহ তিনজন‌কে গ্রেপ্তার করা হ‌য়ে‌ছে। ছবি: প্রতিনিধি

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আরও ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করে‌ছে ঢাকা মে‌ট্রোপ‌লিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ।

সেইস‌ঙ্গে ছিনতাই ঘটনায় জড়িত মূল মাস্টারমাইন্ডসহ তিনজন‌কে গ্রেপ্তার করা হ‌য়ে‌ছে। গ্রেপ্তারকৃ‌তদের নাম মো. হৃদয় (২১), মো. মিলন মিয়া (২৯) ও মাস্টারমাইন্ড বা প‌রিকল্পনাকারী আকাশ। তা‌দের কাছ থে‌কে ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকা, নেত্রকোনা ও খুলনা থেকে নতুন এই তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডাকাতির ঘটনায় গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ এ পর্যন্ত তিন ধা‌পে সর্বমোট ৭ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা উদ্ধার এবং ১১ জন গ্রেপ্তার করে‌ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গো‌য়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এই তথ‌্য জানি‌য়ে ব‌লেন, ‌গত ৯ মার্চ তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকা থে‌কে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দেয়ার সময় মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেডের একটি গাড়ি ‌ছিনতাই‌য়ের ঘটনায় গো‌য়েন্দা বিভাগ ১২ মার্চ প্রায় ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা উদ্ধার এবং ৮জন‌কে গ্রেপ্তার ক‌রে। প‌রে তা‌দের ছিনাতই‌য়ের ঘটনায় দা‌য়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দে‌খি‌য়ে তা‌দের আদালতে সোপর্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এই ঘটনার বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। কেউ ছিল পরিকল্পনাকারী, কেউ মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ শুধুমাত্র ঘটনার সময় ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে কাজ করে ৪/৫ জন। তাদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানা নামে ২ জন ‌ছিনতাই‌য়ের মূল ছক সাজায়। সোহেল রানা আ‌গে মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেডের ড্রাইভার ছিল। ড্রাইভার থাকার কারণে সে মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর খুটিনাটি বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত ছিল। কোন প্রকার বাধাহীন ভাবেই তারা মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

ছিনতাএয়র মূল হোতা আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আকাশ তার পূর্ব পরিচিত ইমন মিলনের কাছে টাকা ছিনতাই‌য়ের বিষয়টি শেয়ার করে এবং তাকে এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়। তাকে তারা জনবল সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়।

ইমন মিলন তার পূর্ব পরিচিত সানোয়ার হোসেনকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করে এবং জনবল যোগান, সিম সংগ্রহ ও মোবাইল ফোন ক্রয়ের দায়িত্ব দেয়। সানোয়ার ৮টি নতুন সিম এবং মোবাইল সেট যোগাড় করে এবং তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা হতে মোট ৯ জন সদস্য সংগ্রহ করে। প‌রে তারা প্রত্যেকেই ঘটনার ২ দিন আ‌গে ঢাকায় একত্রিত হয়। পরিকল্পনাকারীরা তাদেরকে ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেয়।

হারুন অর রশীদ জানান, আকাশ এবং সোহেল রানা, ইমন মিলন এবং সানোয়ারের কাছে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি গোপন রাখে। তারা তাদেরকে জানায় যে, তারা কিছু অবৈধ হুন্ডির টাকা লুট করবে এবং সেখানে প্রশাসনের লোক থাকবে। প‌রে ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হয়ে মাইক্রোবাসে উঠার পর বুঝতে পারে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

ছিনতাই‌য়ের পর মূল হোতা আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ধারনা করে যে, আকাশ তাদের হাতে ধরা পড়ে গেছে। ধরা পড়ার ভয়ে তারা তাদের কাছে থাকা অপারেশনাল মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফিটে ফেলে দেয়। তাই তারা ট্র্যাঙ্ক ভেঙ্গে টাকা লুট করতে তাড়াহুড়ো করে। প‌রে তারা ৩০০ ফিটের একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় করে যার যার মত টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ‌ছিনতাই‌য়ের ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের দেশের বিভিন্ন জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল হতে সংগ্রহ করা হয়। ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যার যার মত বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যায় এবং বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ করে।

যার ফলে ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত, গ্রেপ্তার ও লুন্ঠিত টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। লুন্ঠনকৃত টাকার একটি বড় অংশ ডাকাতির ঘটনার মূলহোতা আকাশ ও সোহেল রানা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চল‌ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত