ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচু বাগান, আশায় বুক বাঁধছে চাষি

  সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩, ১৯:৩৪

মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচু বাগান, আশায় বুক বাঁধছে চাষি
মুকুলে ছেয়ে গেছে লিচু গাছ। ছবি: প্রতিনিধি

দিনাজপুর লিচুর জেলা হিসেবে দেশজুড়ে সুনাম রয়েছে। তাইতো বলা হয়, আম-লিচুতে ভরপুর, জেলার নাম দিনাজপুর। বছর ঘুরে আবার এসেছে লিচুর মৌসুম। এখন জেলার হাজার হাজার লিচু গাছে শোভা পেতে শুরু করেছে মুকুল। প্রতিটি লিচু গাছে মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে রয়েছে। হাজার হাজার লিচুর গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। দূর থেকে মুকুলসহ লিচু গাছ বাতাসে দোল খাওয়ায় মনে হয় যেন সুমদ্রের ঢেউ লেগেছে।

লিচু গাছ ভরা মুকুল দেখে বাগানি, কৃষক ও মৌ-বাক্স স্থাপনকারী মৌয়ালীরা বুকভরা আশা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। লিচু গাছে প্রচুর মকুল আসায় মধু সংগ্রহের আশায় মৌ-বাক্স স্থাপন করতে শুরু করেছেন মৌয়ালীরা। লিচু গাছে গাছে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। লিচু বাগানে মৌ-বাক্স স্থাপন করায় মৌমাছিরা পরাগায়ন ঘাটাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। মৌমাছির মাধ্যমে পারাগায়ন ঘটার কারণে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচুর ফলন বৃদ্ধি পায়।

লিচু গাছে অধীক পরিমাণে মুকুল আসায় এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। দিনাজপুরের লিচুর খ্যাতি ও চাহিদা অনেক বেশি। মাদ্রাজি, বোম্বাই, চায়না-থ্রি ও বেদানা প্রতিটি লিচুর গাছে মুকুলে এসেছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি লিচু গাছের গোড়ায় পানির সেচ ও স্প্রে করতে ব্যস্ত রয়েছে লিচু চাষিরা। গাছের গোড়ায় সেচ দেয়ার পাশাপাশি মুকুল রক্ষায় ভিটামিন ও কিটনাশক প্রয়োগ করছেন। পর্যায়ক্রমে ফল রক্ষা, দানা বড় করাসহ প্রয়োজনীয় স্প্রে করা হবে।

দিনাজপুর লালবাগ এলাকার লিচু চাষি আকরাম হোসেন বলেন, এ বছর প্রতিটি লিচুর গাছে মুকুল দেখে মনটা ভরে যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবছর মুকুল দেখে লাভবান হওয়ার আশা করছি। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে বেশি পরিমাণে অর্থ ঘরে তোলা যাবে।

একই এলাকার লিচু চাষি বেলাল উদ্দীন বলেন, আমার লিচুর দুটি বাগান রয়েছে। ঠিকমত সেচ প্রদান করায় এবছর ভালই মুকুল দেখা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ যদি অনুকূলে থাকে এবছর ভাল ফলন পাওয়ার আশা করছি।

মাশিমপুর গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার জানান, বাড়ির পাশেই তার ছোট বাগানে ১৬টি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি বেদেনার গাছ। তার মতে গত বছর ৫টি গাছে ভাল মুকুল এসেছিল আর এবার ৯টি গাছেই মুকুল এসেছে। গত বছর প্রখর রোদের কারণে লিচুর দানা বড় না হতেই পাক ধরে গিয়েছিল। কিন্তু এবার এখনও শীতের ভাব রয়েছে। আশা করছেন এবার ভাল ফলন হবে।

বাগান মালিক ইসমাইল হোসেন জানান, তার বাগানে ৩’শ গাছ রয়েছে। গাছের পুরো ফল বিক্রি করে দিয়েছেন তিন বছরের জন্য, ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। এই তিন বছর ফল ক্রেতা ফড়িয়াই বাগান পরিচর্যা করবেন। সার, ভিটামিন ও কীটনাশক প্রয়োগ করবেন। প্রতিবছর তাকে ৭ হাজার লিচু খাওয়ার জন্য দেবে। তার মতে লিচুর গাছ পাহারা, পরিচর্যাসহ লিচুর দানা গঠন থেকে ফল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

মৌখামারী রাকিব হোসেন বলেন, এ বছর দিনাজপুরের লিচুর বাগানগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মৌ খামারিরা এসে মৌ-বাক্স স্থাপন করেছে। একদিকে লিচুর পরাগায়নের মাধমে লিচুর ফলন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে এই মৌসুমে ২৫ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা যাবে। এতে দেশের বিরাট অংশের মধুর যোগান সম্ভব হবে।

মাসুম বিল্লাহ বলেন, লিচুর ফুলে ফুলে মৌ মাছির পরাগায়নের ফলে ফলন প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। এই মৌসুমে অনেক বেকার যুবক মধু সংগ্রহের কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ খালেদুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে ৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। জেলায় এবছর নতুন করে আরও ১০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান তৈরি হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লিচুর বাম্পার ফলন হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত