নির্বাচনী চমক দেখাতে কেটে রাখা রাস্তা এখন খাল!
মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৯:০৩ আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৯:১৯
মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের একটি রাস্তা কেটে ফেলে রাখায় তা যেন খালে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ভুলে ওই রাস্তা খননের পর এর বেহাল অবস্থা। ফলে এলাকার ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, কৃষিপণ্য বাজারজাতকারী কৃষক, ২০টি পোল্ট্রি খামার মালিক, হাসপাতালে যাতায়াতের রোগী ও নিত্য চলাচলকারী লোকজনের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় আগে মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর দক্ষিণ পাড়ার এ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি পাকাকরণের উদ্দেশ্যে ৩/৪ ফুট গভীর করে মাটি খনন করা হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান এমদাদুল হক আকন্দ তড়িঘড়ি করে নির্বাচনী চমক দেখাতে স্ব-উদ্যোগে সরকারি বরাদ্দ ছাড়া রাস্তাটির উন্নয়ন কাজে হাত দেন। কৃষ্ণপুর গ্রামের মালেক ডিলারের বাড়ি থেকে শাহজাদা ভূইয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটির খনন কাজ করা হয়। পরে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলে সে উদ্যোগ থেমে যায়। ফলে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাস্তাটি যান চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়ে। এমনকি বৃষ্টির পানিতে রাস্তাটি রীতিমতো খালে পরিণত হয়েছে।
তারা জানান, এ রাস্তায় পা পিছলে পড়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। গ্রামের সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ কাজল (৬১) জানান, প্রায় এক বছর আগে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে এ রাস্তার কাদায় পড়ে পা মচকে যায় তার। এখনো ভালো হয়নি সেটি। রাস্তার ধারের দোকানি হানিফার (৩৭) দোকানে বসে কথা হলো তার সাথে। সে সময় সেখানে উপস্থিত আরেক জন কাজল মিয়া (৫৫) জানান, একই অবস্থা ঘটেছে তারও। ঈদগাহ মসজিদে নামাজ পড়তে এসে পা পিছলে আহত হন তিনি। এতে দুইজনের কাঁধে ভর দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে।
এমন রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে
এদিকে উৎপাদিত কৃষিপণ্য কিনতে বেপারীরা এ রাস্তা দিয়ে আসেন না। ফলে কৃষিপণ্যের দর মেলে কম। ভোগান্তির শেষ থাকে না বলে জানান গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া (৫০)। দোকানি হানিফা (৩৫) আরও জানান, খননকৃত রাস্তার ভাঙনে তার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটি মেরামত করতে ইট আনতে ১৫শ' টাকার গাড়িভাড়া ২৫শ' টাকা গুনতে হয় তাকে। কৃষ্ণপুর দক্ষিণপাড়ার এ রাস্তার দু'পাশে কম করে হলেও ২০টি পোল্ট্রি খামার আছে বলে জানান এলাকাবাসী। এর প্রায় সবকটি এখন বন্ধ রয়েছে এ রাস্তার কারণে- এমন কথা বললেন স্থানীয় ফরিদ (৬০), জুনিয়র ফরিদ (৪০) ও লিটনসহ (৩৮) বেশ কয়েকজন পোল্ট্রি খামারি।
মনোহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ মাহমুদ এ ব্যাপারে তার ফেসবুক পেজে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবর একটি খোলা চিঠি পোস্ট করে বেশ আলোড়ন তুলেছেন। এ ব্যাপারে নানাভাবে চেষ্টা করেও অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
কৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান দুলাল রাস্তাটির জন্য জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান হঠাৎ করেই কোন বাজেট বরাদ্দ বা টেন্ডার ছাড়াই নির্বাচনের আগে স্ব-উদ্যোগে রাস্তাটি খনন করান। নির্বাচনে তিনি পরাজিত হওয়ার পর রাস্তাটি সেভাবেই পড়ে থাকে। এতে রাস্তার দু’পাশের লোকজনসহ চলাচলকারীরা রীতিমতো অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সে কারণে সম্প্রতি তিনি স্থানীয় এমপি ও শিল্পমন্ত্রীর সহায়তায় রাস্তাটিকে উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় এনে এটি পাকাকরণের ব্যবস্থা করেছেন।
এ ব্যাপারে মনোহরদী উপজেলা প্রকৌশলী মীর মাহিদুল ইসলাম জানান, রাস্তাটি পাকাকরণে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। জনদুর্ভোগ নিরসনে শিগগির সেটির টেন্ডার হওয়ার পর কাজ শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি
