ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

চকবাজারের ইফতার, দাম নিয়ে অসন্তোষ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৬:২৬

চকবাজারের ইফতার, দাম নিয়ে অসন্তোষ

রমজানের প্রথম দিন থেকেই জমে উঠেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার। বিকেল হতেই ইফতার সামগ্রী কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ক্রেতারা। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পণ্যের দামই চড়া। ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভরে নিয়ে যায়’ এর দাম কেজিতে বেড়েছে দুইশ’ টাকা। আর সুতি কাবাবের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তারপরও শখ মেটাতে কেনাকাটায় কার্পণ্য নেই রোজাদারদের।

পুরান ঢাকার চকবাজার শাহী মসজিদের সামনের সড়কটিই মূলত প্রতি রমজানে ইফতারির জমজমাট বাজার মেলে। বাহারি নাম ও মনকাড়া সব খাবার আইটেমের কারণে দিনে দিনে সুনাম ও ঐতিহ্য বেড়েছে এ বাজারের। বিশেষ করে নানা পদের মিশেলে তৈরি ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভরে নিয়ে যায়’, গরু ও খাসির গোশত দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি সুতি কাবাব, শাহী জিলাপি এর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া মুরগি, গরু, খাসি, কবুতর, কোয়েল পাখিসহ বিভিন্ন গোশতের আইটেম দেখলেই জিভে পানি চলে আসে। এর পাশাপাশি পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ছোলা, পরোটাসহ বিভিন্ন ফলের সমাহার তো আছেই। আছে নানা রকম শরবত ও মিষ্টির আইটেম।

ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে তাই শুধু পুরান ঢাকার বাসিন্দারাই নয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষ ছুটে আসেন। রোববার যোহরের নামাজের পর থেকেই এখানকার সব দোকান খুলতে শুরু করে। এরপর সময় বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ক্রেতার সংখ্যা। চকবাজারে এবার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ একটি মনিটরিং বুথ স্থাপন করেছে। তারা বাজারের দোকানদারদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন এবং বুথ থেকে বারবার মাইকে সচেতনতামূলক কথা বলতেও শোনা যায়।

ঐতিহ্যবাহী এ ইফতার বাজারে দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ক্রেতাদের মধ্যে। এবার ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভরে নিয়ে যায়’ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। গত বছর এর দাম ছিল ৬০০ টাকা।

যাত্রবাড়ী থেকে ইফতার কিনতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, এবার সব ধরনের ইফতারির দাম বেড়েছে। গতবারের চেয়ে ২০০ টাকা বেশি ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। এ ছাড়া সুতি কাবাব গতবার যেখানে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা কেজি ছিল, এবার সেটি ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি করা শাহিনুল ইসলাম বলেন, এইটাই পুরান ঢাকার ঐতিহ্য এবং অর্জিনাল। আরো পাবেন হয়তো, কিন্তু আমাদেরটা আগের। গতবারের চেয়ে দাম একটু বেশি হওয়ার কারণ, এটা তৈরিতে যেসব জিনিস লাগে এবার তার সবকিছুর দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা বলেন, ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভরে নিয়ে যায়’ আইটেম তৈরিতে গোশত, সুতি কাবাব, গোশতের কিমা, ডাবলি, বুটের ডাল, ডিম, মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচসহ নানা পদের খাবার আইটেম এবং হরেক ধরনের মসলা প্রয়োজন হয়। বছরের পর বছর ধরে চলা এই খাবারটি পুরান ঢাকাসহ গোটা রাজধানীতে একটি আকর্ষণীয় ইফতারির আইটেম হিসেবে পরিচিত।

সুতি কাবাবের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সুমন নামে এক বিক্রেতা বলেন, এবার গরু ও খাসির গোশতের দাম অনেক বেড়েছে। এ কারণেই আমরা সুতি কাবাবের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

এখানে প্রতি পিস ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের শাহী জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে। গত বছরের চেয়ে এ জিলাপির দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। ছোট আকারের জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ ছাড়া মুড়ি মাখানো এক ধরনের ঘূর্ণি যা ডাল ও মসলা দিয়ে তৈরি হয় তার সাথে ছোলাসহ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি।

খাসির রান প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা; চিকেন তন্দুরি ১৩০ টাকা; চিকেন কারি ১৩০ টাকা; গরুর কারি ১৫০ টাকা; মাঠা ১০০ টাকা কেজি; আস্ত মুরগির গ্রিল ৬০০ টাকা; বিফ জালি কাবাব ৪০ টাকা; কোয়েল পাখি ৮০-১০০ টাকা; ছোট পাকিস্তানি মুরগি ১৫০; বড় মুরগি ৩০০-৪০০ টাকা ।

পাশাপাশি বেগুনি, আলুর চপ, কোথাও ৫ টাকা, আবার কোনো দোকানে ১০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। তবে ডিমচপ প্রতিটি ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শিঙ্গাড়া ১৫ টাকা প্রতি পিস, সমুচা ১৫ টাকা, চিকেন পরোটা ৫০ টাকা, বিফ পরোটা ৬০ টাকা, নরমাল পরোটা ৩০ টাকা, সবজির বড়া ১০ টাকা, প্রতিটি গরুর টিকা ৩০ এবং মুরগির টিকা ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি জালি কাবাব প্রতি পিস ৫০ টাকা, সাসলিক ৫০ টাকা, চিকেন রোল ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও পেস্তা শরবত ২০০ টাকা লিটার, বোরহানি ১২০ টাকা লিটার, ফালুদা বড় বাটি ২০০ টাকা, ছোট বাটি ১০০ টাকা, দইবড়া বড় বক্স ছোট ১২০ টাকা, বড় বাটি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ইফতার বিক্রেতা আরিফ হোসেনের দোকানে পাঁচজন কাজ করলেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি। ব্যস্ততার এক ফাঁকে বলেন, ইফতারি বিক্রি চলছে, দেখছেনই কেমন ভিড়। বলার মতো পরিস্থিতি নাই। তবে আমার ৪০ থেকে ৫০টি আইটেম আছে, পর্যাপ্ত আছে।

মগবাজার থেকে আসা ক্রেতা শাকিল রহমান বলেন, আগে থেকেই আমি এই চকবাজারে ইফতারি কেনার চেষ্টা করি। প্রথম রোজা শুক্রবার ছুটির দিনে হওয়ায় চলে এসেছি। এরপর আরো দু-একবার আসব। ইফতারি দাম কেমন জানতে চাইলে বলেন, আসলে গতবার যা ছিল তার চেয়ে একটু বেশি। তবে এটায় এদের দোষ দেবো না। কারণ উনারাও ব্যবসায়ী ইফতারিতে লাভ করবে। তারা বাজারে যদি কমে পেত নিশ্চয়ই আরো একটু দাম কম হতো।

মিরহাজিরবাগ থেকে ইফতারসামগ্রী কিনতে আসা আইনুল হোসেন বলেন, ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ একটি মুখরোচক খাবার। আমার পরিবারে মা-বাবা ও ভাইবোনসহ সবাই এই খাবারটি পছন্দ করেন। পরিবারের সবাই একসাথে বসে ইফতার করার সময় এই খাবারটি রাখতেই হয়। গত বছর ৬০০ টাকা দিয়ে কিনলেও এ বছর দাম বেশি নিচ্ছে। ডেমরা থেকে ইফতারসামগ্রী কিনতে আসা ইখলাস হোসেন বলেন, আমি ডেমরা থেকে ইফতারসামগ্রী কিনতে এসেছি। কিন্তু প্রতিটি আইটেম দাম অতিরিক্ত। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক খাবার কিনতে পারছি না। যেভাবে সব কিছুর দাম বাড়ছে তাতে সামনে আরো সমস্যা হতে পারে। ১০০০ টাকা নিয়ে বাজারে এসেও তেমন কিছুই কিনতে পারিনি।

ইফতারি ব্যবসায়ী আলামিন মণ্ডল বলেন, ‘এ বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য ইফতার তৈরির সামগ্রী কিনতে একটু কষ্ট হচ্ছে। তবুও আশা করছি বারবারের মতো এবারও জমজমাট ইফতারি উপহার দিতে পারব। কিছু ইফতারির দাম বেড়েছে, আর কিছুর দাম ঠিক রেখে আকারে ছোট করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত